বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পাবনার বেড়া উপজেলার মালদাপাড়া গ্রাম সোমবার সকালে কুয়াশার চাদরে ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। এ সময় যমুনা নদীর তীরে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে অবস্থিত ওই গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল প্রচণ্ড হিমেল হাওয়া। এই শীতে তখন আভা রানী পালকে (৮০) হিমশীতল পানি আর কাদামাটি মাখিয়ে মৃৎসামগ্রী তৈরি করতে দেখা যায়।
আভা রানী বলেন, ‘শীতে খুব কষ্ট। শীতের মধ্যে মাটির কাম আরও কষ্ট। কাম করার সময় মনে হয় ঠান্ডা জলে হাত দুইখান যেন কাইট্যা যাত্যাছে। তা সত্ত্বেও কাম করা লাগে। কাম না করলি আমাক খাওয়া দিবি কিডা?’ তিনি আরও বলেন, একসময় তাঁদের ঘরবাড়ি সবকিছু ছিল। কিন্তু নদীভাঙনের কবলে পড়ে এখন কিছুই নেই। বাস করেন মালদাপাড়া গ্রামের কুমোরপাড়ায় অন্যের বাড়িতে। ওই বাড়িতে তাঁর ছেলে ও ছেলের বউও থাকেন। ছেলে বুদ্ধিশ্বর পাল অন্যের দোকানে কর্মচারীর কাজ করে যা পান, তাতে সংসার চলে না। এ জন্য তিনি ও ছেলের বউ মিলে অন্যের বাড়িতে মৃৎসামগ্রী তৈরির কাজ করেন। অবশ্য ছেলের বউয়ের চেয়ে তাঁকেই বেশি কাজ করতে হয়। কারণ, ছেলের বউকে সংসার আর বাচ্চা সামলাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়।
আভার ছেলের বউ মীরা রানী বলেন, কিছুদিন ধরে আভা নানা রোগে অসুস্থ। এর ওপর এবারের শীতে তাঁর অসুখ আরও বেড়েছে। কিন্তু উপায় না থাকায় তাঁর শাশুড়িকে এখনো কাজ করতে হয়। তিনি আর তাঁর শাশুড়ি মিলে কাজ না করলে সংসার ঠিকমতো চলে না। অবশ্য তাঁর শাশুড়ি সরকারের বয়স্ক ভাতার টাকা নিয়মিত পান বলে তিনি জানান।
ওই গ্রামের ষষ্ঠী পাল, কানাই পাল, বিমল পালসহ পাঁচ-ছয়জন বলেন, শীতের দিনে মৃৎসামগ্রী তৈরির কাজ বেশ কষ্টকর। আভার মতো বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়া মানুষের পক্ষে তা আরও কষ্টকর। গ্রামের প্রায় সবাই হতদরিদ্র। তাই আভার কষ্ট দেখে সহায়তা করার ইচ্ছা হলেও তাঁদের কারোরই তা করার সাধ্য নেই।