বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ভাটায় নেমে যাওয়া ডুবোচরের গর্তের পানিতে কেউ কেউ ঘাসের শিকড়বাকড়ের ফাঁকে আহার খুঁজছে। শত্রুর আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে মাথা উঁচিয়ে সজাগ দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে কেউ। কেউ শরীর খোঁটাখুঁটিতে ব্যস্ত। আবার কেউ নদীতে নেমে ডুবসাঁতার খেলছে।
সম্প্র্রতি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা চর বাঁশবাড়িয়ায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। এই পাখিদের নাম পাতি তিলি হাঁস। এ সম্পর্কে কারো ধারণা না থাকলে তিনি মন্তব্য করতে পারেন, চরে কারো হাঁসের খামার। দল বেঁধে ৫০-৭০টি বিচরণ করছে।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতিবছর শীতের শুরুতে বিশেষ করে নভেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরের শুরুর দিকে এই পাখিরা আসে। ফেব্রুয়ারিতে দখিনা বাতাস বইতে শুরু করলে চলে যায়। প্রায় ১০ বছর ধরে এই চর এবং আশপাশে এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
এই পাখির প্রিয় খাবার মাছ। এদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এড়িয়ে যেতে পারে না ছোট শামুক কিংবা কাঁকড়া। ধানও রয়েছে পছন্দের তালিকায়। জোয়ারের পানিতে যখন পুরো চর ডুবে যায় তখন উত্তর পাশের উঁচু চরে আশ্রয় নেয় ওরা। সেখানে গিয়ে ধান খায়। কেউ ধানক্ষেতে উড়ে বেড়ায়, আবার কেউ এলাকার আকাশে ঘুরে বেড়ায়। তবে ভাটায় পানি নেমে গেলে আবার এই ডুবোচরে ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে আসে সবাই। কখনো কেউ বিচ্ছিন্ন হলে আবার উড়ে গিয়ে দলে যোগ দেয়। ভীত স্বভাবের এ পাখি মানুষের আনাগোনা বুঝতে পারলে ডানা মেলে অন্যত্র উড়ে চলে যায়।
এই পাখির আকৃতি এ দেশের ছোট হাঁসের মতো। খাটো ঠোঁটওয়ালা ছোট হাঁস। এপ্রিল থেকে আগস্টে এদের প্রজনন মৌসুম। জলাশয় ও বাদাভূমির পাশে লতাপাতা কিংবা কোমল পালক দ্বারা বাসা বানিয়ে এরা আট থেকে ১১টি ডিম পাড়ে। ২১ থেকে ২৩ দিনের ব্যবধানে ডিম ফোটে এবং ছানার বয়স ২৫-৩০ দিন হওয়ার পর পাখা গজায়।
নদী, হ্রদ, হাওর, কাদাচর ও লতাপাতাওয়ালা অগভীর কর্দমাক্ত খোলা জলাভূমিতে এরা বিচরণ করে। এরা বাতাসে বেশ দ্রুত গতিতে উড়তে পারে। উড়ন্ত অবস্থায় দ্রুত দিক পরিবর্তন করতে পারে। ইউরোপ, আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল এবং ভারত উপমহাদেশের সব দেশে এদের বিচরণ রয়েছে। এদের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সবুজ ডানার হাঁস।
পাখিরা নিরাপদে নেই
চর বাঁশবাড়িয়ায় নিরাপদে নেই পাখিরা। প্রতি বছর শিকারিরা হামলা চালায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রলার নিয়ে আসে তারা। বগি এলাকার জেলে রতন আলী মাঝি জানান, গত বছর শিকারিদের তত্পরতা এত বেশি ছিল যে, শীতের শুরুতে এসে ৮-১০ দিন পর এ স্থান ছেড়ে চলে যায়। আশপাশের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে এদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বছরও কয়েক দফা ভোলার কিছু শিকারি বন্দুকের গুলি ছুড়ে শিকার করেছে। এ ছাড়া স্থানীয় কিছু অসাধু লোক ধানে বিষ প্রয়োগ করে ফাঁদ পেতে শিকার করে। ওই ধান খেয়ে আর উড়তে পারে না, তখন মাটিতে অবস্থান করে। এ সময় পাখিগুলোকে শিকারিরা ধরে জবাই করে।
এ বিষয়ে পাখি বিশেষজ্ঞ ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক পিযুষ কান্তি হরি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস শীত মৌসুমে বাংলাদেশে আসে। ডুবোচরের পরিবেশ মনঃপূত হওয়ায় কয়েক বছর ধরে এখানে এই পাখিরা আসছে। এই ডুবোচরে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা দেওয়া উচিত। এলাকাটি সংরক্ষিত করে চরটি পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হলে অনেক পর্যটক বেড়াতে যাবে। নয়তো শিকারিদের তত্পরতায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পাখিরা এখানে আসা বন্ধ করে দেবে।