ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

খেজুর রসে মৃত্যু! ফের ‘নিপাহ’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় নিপাহ ট্র্যাজেডির দিন ছিল ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন হাতীবান্ধায় প্রথম নিপাহ ভাইরাস ধরা পড়ে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তখন ৯ দিনে ২৪ জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত বুধবার আবারো বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় খেজুরের রস পানের পর দুই বোনের প্রাণহানি হয়েছে। এ ঘটনায় নতুন করে ‘নিপাহ’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা উত্তরাঞ্চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপচাঁচিয়ার পোওতা গ্রামের আবু মুসার মেয়ে মীম (১২) ও সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাদিয়া আকতার (১৪) স্থানীয় পাওগাছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। দুই চাচাতো বোন শীতের সকালে খেজুরের রস পান করার কিছুক্ষণ পর জ্বরে আক্রান্ত হয়। গ্রামেই চিকিৎসা চলছিল তাদের; কিন্তু চার দিনের মাথায় গত বুধবার সকালে মারা যায় মীম। স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর রাতে মারা যায় সাদিয়া। নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে তাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সাংস্কৃতিককর্মী রাজ্জাক মুরাদ বলেন, প্রতিবছর এই সময় হাতীবান্ধার নিপাহ ট্র্যাজেডির কথা খুব মনে পড়ে। ২০১৫ সালে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে নওগাঁয়।

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, নিপাহ ভাইরাস বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

এদিকে শীতকালের প্রধান আকর্ষণ খেজুরের রস বাজারে বিক্রি না হওয়ায় আক্ষেপ করেন রংপুর নগরের মাহিগঞ্জ বাজারের রস বিক্রেতা ছকমল হোসেন। তিনি জানান, বাঁদুড়ে খায় বলে মানুষ ইদানীং খেজুরের রস খেতে চায় না। নিপাহ ভাইরাস আতঙ্কে বাজারে খেজুর রসের চাহিদা কমে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে রংপুরের হাজারো গাছি।

জানা যায়, রংপুরের গ্রামাঞ্চলে সহস্রাধিক গাছি রয়েছে। যারা বাপ-দাদার পেশাকে আঁকড়ে ধরে প্রতিবছর শীত মৌসুমে খেজুর রস বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় নিপাহ ট্র্যাজেডির পর বাদুড়ে খায় এমন খাবার থেকে বিরত থাকার প্রচারণায় চাহিদা কমে যায় খেজুর রসের। কাউনিয়া উপজেলার মীরবাগ গ্রামের গাছি রফিকুল ইসলামের পেশা খেজুরের রস বিক্রি করা।

তিনি জানান, প্রতিবছর শীত মৌসুমে ৫০-৬০টি খেজুরগাছ লিজ বা চুক্তিতে নেন তিনি। এ বছর রস বিক্রি না হওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছেন। তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি ইউনিয়নের ওকরাবাড়ী এলাকার গাছি হাশেম আলী শীতকালে প্রতিদিন সকালে রস বিক্রি করেন রংপুর নগরের সিও বাজার এলাকায়। তিনি বলেন, ‘পাঁচ টাকায় এক গ্লাস রস বেচাইলে লাভের মুখ দেখা যায়; কিন্তু অ্যালা বাজারে দুই টাকায়ও মানুষ খেজুরের রস খাবার চায় না।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

খেজুর রসে মৃত্যু! ফের ‘নিপাহ’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা

আপডেট টাইম : ০৪:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় নিপাহ ট্র্যাজেডির দিন ছিল ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন হাতীবান্ধায় প্রথম নিপাহ ভাইরাস ধরা পড়ে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তখন ৯ দিনে ২৪ জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত বুধবার আবারো বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় খেজুরের রস পানের পর দুই বোনের প্রাণহানি হয়েছে। এ ঘটনায় নতুন করে ‘নিপাহ’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা উত্তরাঞ্চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপচাঁচিয়ার পোওতা গ্রামের আবু মুসার মেয়ে মীম (১২) ও সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাদিয়া আকতার (১৪) স্থানীয় পাওগাছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। দুই চাচাতো বোন শীতের সকালে খেজুরের রস পান করার কিছুক্ষণ পর জ্বরে আক্রান্ত হয়। গ্রামেই চিকিৎসা চলছিল তাদের; কিন্তু চার দিনের মাথায় গত বুধবার সকালে মারা যায় মীম। স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর রাতে মারা যায় সাদিয়া। নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে তাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সাংস্কৃতিককর্মী রাজ্জাক মুরাদ বলেন, প্রতিবছর এই সময় হাতীবান্ধার নিপাহ ট্র্যাজেডির কথা খুব মনে পড়ে। ২০১৫ সালে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে নওগাঁয়।

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, নিপাহ ভাইরাস বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

এদিকে শীতকালের প্রধান আকর্ষণ খেজুরের রস বাজারে বিক্রি না হওয়ায় আক্ষেপ করেন রংপুর নগরের মাহিগঞ্জ বাজারের রস বিক্রেতা ছকমল হোসেন। তিনি জানান, বাঁদুড়ে খায় বলে মানুষ ইদানীং খেজুরের রস খেতে চায় না। নিপাহ ভাইরাস আতঙ্কে বাজারে খেজুর রসের চাহিদা কমে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে রংপুরের হাজারো গাছি।

জানা যায়, রংপুরের গ্রামাঞ্চলে সহস্রাধিক গাছি রয়েছে। যারা বাপ-দাদার পেশাকে আঁকড়ে ধরে প্রতিবছর শীত মৌসুমে খেজুর রস বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় নিপাহ ট্র্যাজেডির পর বাদুড়ে খায় এমন খাবার থেকে বিরত থাকার প্রচারণায় চাহিদা কমে যায় খেজুর রসের। কাউনিয়া উপজেলার মীরবাগ গ্রামের গাছি রফিকুল ইসলামের পেশা খেজুরের রস বিক্রি করা।

তিনি জানান, প্রতিবছর শীত মৌসুমে ৫০-৬০টি খেজুরগাছ লিজ বা চুক্তিতে নেন তিনি। এ বছর রস বিক্রি না হওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছেন। তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি ইউনিয়নের ওকরাবাড়ী এলাকার গাছি হাশেম আলী শীতকালে প্রতিদিন সকালে রস বিক্রি করেন রংপুর নগরের সিও বাজার এলাকায়। তিনি বলেন, ‘পাঁচ টাকায় এক গ্লাস রস বেচাইলে লাভের মুখ দেখা যায়; কিন্তু অ্যালা বাজারে দুই টাকায়ও মানুষ খেজুরের রস খাবার চায় না।’