বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ যে কোনো প্লাষ্টিক মানেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এই প্লাষ্টিকগুলো ব্যবহারের পর যখন পরিত্যক্ত হয়। তখন তা মাটির মাঝে শত শত বছর ধরে অক্ষত অবস্থায় থাকে অপরদিকে আগুনে পোড়ালে এই প্লাষ্টিকের ক্ষতিকার উপকরণগুলো বাতাসের সঙ্গে মিশে গিয়ে পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। প্লাষ্টিকের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে প্রায় এক দশক পূর্বে সরকারের পক্ষ থেকে প্লাষ্টিকের তৈরি পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু এতো কিছুর পরও প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে নওগাঁর রাণীনগরে তৈরি করা হচ্ছে নানা রঙ্গের মাদুর। কিন্তু এই মাদুর মানুষের শরীর ও পরিবেশের জন্য কতটুকু উপকারি?
বিভিন্ন কল-কারখানার পরিত্যক্ত প্লাষ্টিকের আর্বজনা একত্রিত করে একটি বিশেষ মেশিনের মাধ্যমে প্লাষ্টিকের এসব পরিত্যক্ত অংশগুলো আগুনে গলিয়ে নানা রঙ মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে প্লাষ্টিকের মাদুর তৈরির উপকরণ।
প্লাস্টিকের এই মাদুরগুলো আমাদের জন্য তথা পরিবেশের জন্য কতটা উপকারি তা আমাদের অজানা। আমরা কখনো ভেবে দেখিনি এই প্লাষ্টিকের তৈরি মাদুর আমাদের পরিবেশের জন্য মঙ্গলজনক নাকি হুমকি স্বরূপ।
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আজ পর্যন্ত এই বিষয়ে গবেষণাও করেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এই বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই মাদুরের ভালো-মন্দ দিকগুলো এই মাদুর তৈরির সঙ্গে যুক্ত অত্র এলাকার মানুষকে অবগত করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দিনদিন এই মাদুর তৈরির পরিধি বেড়েই চলেছে। এই মাদুর শুধুমাত্র রাণীনগর উপজেলার সদর এলাকার গ্রাম ও তার আশেপাশের গ্রামগুলোতে তৈরি করা হয়।
দড়িয়াপুর গ্রামের মাদুর তৈরিকারী মোছা. কুলছুন বেগম বলেন, আগে আমরা জলপাতি ও বনপাতি দিয়ে মাদুর তৈরি করতাম। কিন্তু কিছুদিন হলো হঠাৎ করে এলাকায় এই প্লাষ্টিক চলে আসে। এই প্লাষ্টিক দিয়ে তৈরি মাদুরের অনেক কদর। তাই এখন আমরা এই প্লাস্টিকের মাদুরই তৈরি করি। কিন্তু এই প্লাষ্টিকের তৈরি মাদুর পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক নাকি ভালো আমরা তা কিছুই জানি না। কেউ কোনো দিন আমাদের বলতেও আসেনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সবুজ কুমার সাহা বলেন, আসলে এই বিষয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। প্লাষ্টিকের মধ্যে কোনো খাবার রাখলে খাবারের মান নষ্ট হয়ে যায় যা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। কিন্তু প্লাষ্টিকের তৈরি মাদুর মানুষ ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে তেমন ক্ষতি না হলেও এই মাদুর ব্যবহারের শেষে পরিত্যক্ত করা হলে তা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।
কারণ প্লাষ্টিক বছরের পর বছর মাটির নিচে অক্ষত অবস্থায় থাকে এবং তা মাটির কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। অপরদিকে এই প্লাষ্টিকের মাদুরকে আগুনে পোড়ালে তার ক্ষতিকারক উপকরণগুলো ধোঁয়ার মাধ্যমে বাতাসে মিশে গিয়ে জীব-বৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করবে। তাই অতিদ্রুত এই বিষয়ে গবেষণা করে এর ভালো আর মন্দ দিকগুলো বের করে এর সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবগত করতে হবে এবং এই বিষয়ে সবার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম নাজমুল আহসান বলেন, প্লাষ্টিকের তৈরি এই মাদুর মানুষের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্লাষ্টিকের এই মাদুর ব্যবহার করলে মানুষের শরীরে চর্মজাতীয় বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা হয়েছে। কারণ প্লাষ্টিক ও পলিথিন জাতীয় যেকোন বস্তুই মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। এই বিষয়ে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সমাজের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে আগামী প্রজন্ম ও পরিবেশ চরম হুমকির মুখে পড়বে। পূর্বে প্রাকৃতিক জলপাতি ও বনপাতি দিয়ে যে মাদুর তৈরি হতো তা ছিলো মানুষের জন্য খুবই উপকারি।