বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জীবন নিজেকেই বয়ে নিয়ে যেতে হয়। যার অন্যকেও গায়ে-গতরে বহন করতে হয় তার নাম রিকশাওয়ালা। টুংটুং শব্দে বেল বাজিয়ে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতে যে মানুষটি যাত্রীদের একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়, তিনি রিকশাওয়ালা। সমাজে অবহেলিত, দরিদ্র মানুষ, এ শ্রমজীবী মানুষের দিকে কখনই খুব বেশি নজর দেয়া হয় না। উল্টো সব সময়ই তার নামে বাজে কথা শোনা যায়। সুযোগ পেলেই বেশি ভাড়া হাঁকে এরা। রিকশাওয়ালারা ভালো মানুষ নয়, লোভী ও মতলববাজ। কিন্তু কী অমানুষিক কঠোর পরিশ্রম এদের করতে হয়। সে খবর কজন রাখে?
সারাদিন খেটেও মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারে না। জোটে না পর্যাপ্ত খাবার ফলে অপুষ্টিতে ভোগে খুব অল্প সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চালাতে পারে না রিকশা, হয়ে পড়ে কর্মহীন। এক কথায় সারা জীবন অভাবের বেড়াজালে বন্দি থাকতে হয় রিকশাচালকদের। মানুষ টেনে এক অমানবিক জীবন বয়ে চলে তারা।
লন্ডন প্রবাসী মিজমিজির সোহাগ জানান লন্ডনে রিকশা চালানো শখের পেশা। সেখানে ১ কিলোমিটারে রিকশায় যেতে গুনতে হয় ২০০ পাউন্ড যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় হাজার টাকা। অন্যদিকে ১ হাজার টাকা দিয়েই নারায়ণগঞ্জ শহরের পুরোটায় বেরানো যায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন আমাদের দেশের রিকশাচালকদের জীবনযাপন দেখলে খুব কষ্ট লাগে।
রিকশাচালক শামিম বলেন স্যার মোগো তুলনা করলে অইব? আমাগো তো কেউ দামই দেয় না। রাইতে রিকশা চালাইলে ভাড়া একটু বেশি পাওয়া যায়। দিনে বেশির ভাগ জাম থাকে তাই রাতে রিকশা চালাইলে আয় বেশি হয়।
সাধারণত জীবিকার প্রয়োজনে সমাজের অশিক্ষিত শ্রেণির লোক, কোনো কাজ জোটাতে পারে না। তারাই রিকশা চালায়। আগের তুলনায় বর্তমানে ভাড়া বেড়েছে। রিকশায় উঠলেই ১০ টাকা জায়গায় ১৫ টাকাও গুনতে হয়। দুরে গেলে দুরত্ব ও যাত্রী বুঝে শত টাকাও নেন। কিন্তু তিন চাকার এই বাহনে চালকদের অভাব যেন শেষ হয় না। কারণ ভাড়া যা বেড়েছে তার চেয়েও কয়েক গুণ বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। তাই সব খরচ বাদ দিয়ে হাতে কোনো টাকা থাকে না। কঠিন হয়ে পড়ে স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের খরচ মেটাতে।
বেশ কয়েকজন রিকশাচালক জানান নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ রিকশা ২ ভাগে চলে। এক বেলা রিকশা চালানোর জন্য একজন চালক গ্যারেজ মালিককে দেন ১০০-১২০ টাকা এবং আধা বেলার জন্য দিতে হয় ৬০-৪০ টাকা। দৈনিক আয় হয় ৬০০-৭০০ টাকা এর মধ্যে রিকশা নষ্ট হলে মেরামত করতে হয় চালককেই। এতে আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায়। নিট আয় ৫০০ টাকার বেশি থাকে না। এই আয় দিয়ে ৫ জনের সংসার চালাতে কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে বিকল্প আয়ের জন্য স্ত্রী ও সন্তানেরা অন্য কাজ করেন। এতে সন্তানদের লেখা পড়া হয় না। রিকশাচালকদের মাসিক আয় গড়ে ১১ হাজার ৩০০ টাকা।
দৈনিক আয় ৩৭৬ টাকা আর তারা মাসে গড়ে রিকশাচালান ২৬ দিন। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৬টি বিভাগে জরিপ চালিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করে (বিবিএস)। এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রায়। থেকে দেড় লাখ রিকশা ও ৩ হাজারের মতো গ্যারেজ আছে। আর চালনা ও মোরামতের কাজে আছে প্রায় ৪ লাখ শ্রমিক। রিকশা গ্যারেজ মালিক কালু মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন ‘নারায়ণগঞ্জ শহরের বেশিরভাগই ভাড়ায় রিকশা চালায় সকাল ৬টা হতে রাত ১০টার মধ্যে রিকশা গ্যারেজ জমা করতে হয়। দেরি হলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়।
সূত্রঃ মানবকণ্ঠ