ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪০০ বছর আগের পাখি ফিরিয়ে আনছে বিজ্ঞানীরা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ৪০০ বছর আগে ইউরোপ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল এই পাখি। ১৭০০ শতক নাগাদ দেখা মিলত এদের। কিন্তু আবার এদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। পরিযায়ী পাখি নাকি পথ ভুলে গিয়েছিল। পথ চিনে কীভাবে ফিরে আসবে তারা? নর্দার্ন ব্যাল্ড আইবিস নামের এই পাখিটিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন এক দল বিজ্ঞানী। বহু বছর ধরে সেই চেষ্টাই চলছে। আসলে শিকার এবং মারাত্মক শীতল আবহাওয়ার কারণেই পাখিটি ইউরোপ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

এদের ওয়ালড্রাপও বলা হয়ে থাকে। অস্ট্রিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডে এক সময় যাদের দেখা মিলত। পরে তাদের স্থান ছিল শুধুমাত্র চিড়িয়াখানায়। এরপর একদিন আচমকাই দেখা গেল এক অন্যরকম দৃশ্য।

এই পাখিগুলি নিজের পথ চিনে নিতে পারছে না। ইউরোপ ছাড়াও ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা ও পশ্চিম এশিয়ায় পাওয়া যেত তাদের। কিন্তু সেখান থেকে ইউরোপে যেতে পারছে না তারা। তখন একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

আইবিসকে যত্ন নিয়ে আবারও ‘ওয়াইল্ড লাইফ’-এ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন করিন্না ইস্টেরার নামে এক পাখি বিশারদ। রয়েছেন অন্যান্য বিজ্ঞানীরাও। নিজের মেগাফোন দিয়ে তিনি সংযোগও করেন পাখিগুলির সঙ্গে।

২০০২ সাল নাগাদ এই বিরল প্রজাতির পাখির ছোট্ট একটা প্রজনন ক্ষেত্র পাওয়া গিয়েছিল সিরিয়াতে। কিন্তু লেবাননের দ্য সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অব নেচার ২০১৫ সাল নাগাদ জানায়, আইএস আক্রমণের কারণে এই এলাকাতেও আর পাখির খোঁজ মিলছে না।

ওই কাস্তেচরা বা আইবিস পাখিগুলির ওপর নজর রাখার জন্য কর্মীরাও পালিয়ে গেছে। পথ চিনে ইথিওপিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল পাখিগুলির।

এ বার আইবিস পাখিকে পথ চিনিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছেন বিজ্ঞানীরা। মাইক্রোলাইট বিমান উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের ওড়ার পথের সামনে দিয়ে। যাতে তারা পথ চিনে পাড়ি দিতে পারে ইতালিসহ অন্য ইউরোপীয় শহরে। বলা ভালো পাখিগুলি ‘ফলো’ করছে বিমানকে।

জীব বিজ্ঞানী জোহানেস ফ্রিৎজ পাখিগুলির পথ প্রদর্শকের দায়িত্ব নিয়েছেন। আসলে ‘ফ্লাই অ্যাওয়ে হোম’ ছবিই ছিল তাদের অনুপ্রেরণা। রয়েছে চিড়িয়াখানায় জন্মানো আইবিস পাখিকে আবারও ‘ওয়াইল্ড’-এ ফিরিয়ে আনার ভাবনা।

১০ বছর ধরে এই কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। পথ চিনিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন প্রাচীন পাখিগুলিকে। ব্যবহার করা হচ্ছে জিপিএস ট্র্যাকারও। কিন্তু অনেক বিজ্ঞানী আবার এই ট্র্যাকার ইত্যাদি ব্যবহারের পক্ষপাতী নন।

এক্কেবারে ‘ভি’ আকারে উড়ে যায় কাস্তেচরা অর্থাৎ আইবিস পাখির ঝাঁক। চেষ্টা করা হচ্ছে বিদ্যুতের তার, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদির হাত থেকে যাতে বিরল প্রজাতির পাখিগুলিকে বাঁচানো যায়। কিছু পাখি যদিও মাঝপথে ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু ৮৪টি পাখিকে মধ্য ইউরোপে ফিরিয়ে এনেছেন বিজ্ঞানীরা।

আইবিস অর্থাৎ জেরোনটিকাস এরেমিতাকে আবারও আল্পস পর্বতের চূড়ায় দেখা যাবে, আশায় বিজ্ঞানীরা। ১৫৫৭ সালে সুইস প্রকৃতিবিদ কনরাড জেসনার যেমনটা লিখেছিলেন তার বইয়ে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

৪০০ বছর আগের পাখি ফিরিয়ে আনছে বিজ্ঞানীরা

আপডেট টাইম : ০৪:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ৪০০ বছর আগে ইউরোপ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল এই পাখি। ১৭০০ শতক নাগাদ দেখা মিলত এদের। কিন্তু আবার এদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। পরিযায়ী পাখি নাকি পথ ভুলে গিয়েছিল। পথ চিনে কীভাবে ফিরে আসবে তারা? নর্দার্ন ব্যাল্ড আইবিস নামের এই পাখিটিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন এক দল বিজ্ঞানী। বহু বছর ধরে সেই চেষ্টাই চলছে। আসলে শিকার এবং মারাত্মক শীতল আবহাওয়ার কারণেই পাখিটি ইউরোপ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

এদের ওয়ালড্রাপও বলা হয়ে থাকে। অস্ট্রিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডে এক সময় যাদের দেখা মিলত। পরে তাদের স্থান ছিল শুধুমাত্র চিড়িয়াখানায়। এরপর একদিন আচমকাই দেখা গেল এক অন্যরকম দৃশ্য।

এই পাখিগুলি নিজের পথ চিনে নিতে পারছে না। ইউরোপ ছাড়াও ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা ও পশ্চিম এশিয়ায় পাওয়া যেত তাদের। কিন্তু সেখান থেকে ইউরোপে যেতে পারছে না তারা। তখন একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

আইবিসকে যত্ন নিয়ে আবারও ‘ওয়াইল্ড লাইফ’-এ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন করিন্না ইস্টেরার নামে এক পাখি বিশারদ। রয়েছেন অন্যান্য বিজ্ঞানীরাও। নিজের মেগাফোন দিয়ে তিনি সংযোগও করেন পাখিগুলির সঙ্গে।

২০০২ সাল নাগাদ এই বিরল প্রজাতির পাখির ছোট্ট একটা প্রজনন ক্ষেত্র পাওয়া গিয়েছিল সিরিয়াতে। কিন্তু লেবাননের দ্য সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অব নেচার ২০১৫ সাল নাগাদ জানায়, আইএস আক্রমণের কারণে এই এলাকাতেও আর পাখির খোঁজ মিলছে না।

ওই কাস্তেচরা বা আইবিস পাখিগুলির ওপর নজর রাখার জন্য কর্মীরাও পালিয়ে গেছে। পথ চিনে ইথিওপিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল পাখিগুলির।

এ বার আইবিস পাখিকে পথ চিনিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছেন বিজ্ঞানীরা। মাইক্রোলাইট বিমান উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের ওড়ার পথের সামনে দিয়ে। যাতে তারা পথ চিনে পাড়ি দিতে পারে ইতালিসহ অন্য ইউরোপীয় শহরে। বলা ভালো পাখিগুলি ‘ফলো’ করছে বিমানকে।

জীব বিজ্ঞানী জোহানেস ফ্রিৎজ পাখিগুলির পথ প্রদর্শকের দায়িত্ব নিয়েছেন। আসলে ‘ফ্লাই অ্যাওয়ে হোম’ ছবিই ছিল তাদের অনুপ্রেরণা। রয়েছে চিড়িয়াখানায় জন্মানো আইবিস পাখিকে আবারও ‘ওয়াইল্ড’-এ ফিরিয়ে আনার ভাবনা।

১০ বছর ধরে এই কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। পথ চিনিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন প্রাচীন পাখিগুলিকে। ব্যবহার করা হচ্ছে জিপিএস ট্র্যাকারও। কিন্তু অনেক বিজ্ঞানী আবার এই ট্র্যাকার ইত্যাদি ব্যবহারের পক্ষপাতী নন।

এক্কেবারে ‘ভি’ আকারে উড়ে যায় কাস্তেচরা অর্থাৎ আইবিস পাখির ঝাঁক। চেষ্টা করা হচ্ছে বিদ্যুতের তার, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদির হাত থেকে যাতে বিরল প্রজাতির পাখিগুলিকে বাঁচানো যায়। কিছু পাখি যদিও মাঝপথে ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু ৮৪টি পাখিকে মধ্য ইউরোপে ফিরিয়ে এনেছেন বিজ্ঞানীরা।

আইবিস অর্থাৎ জেরোনটিকাস এরেমিতাকে আবারও আল্পস পর্বতের চূড়ায় দেখা যাবে, আশায় বিজ্ঞানীরা। ১৫৫৭ সালে সুইস প্রকৃতিবিদ কনরাড জেসনার যেমনটা লিখেছিলেন তার বইয়ে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা