ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বসন্তের যন্ত্রণা ম্যাগপাই পাখি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ অস্ট্রেলীয় ম্যাগপাই মাঝারি আকারের সাদা কালো একধরনের পাখি। এই ম্যাগপাইদের আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া। এই পাখিরা খুবই সুমিষ্ট স্বরে গান করে, দেখতেও এরা বেশ দারুণ। পুরুষ পাখির মাথার পিছে সাদা পালক থাকে আর স্ত্রী পাখির মাথার পেছনে থাকে ধূসর সাদা পালক। অস্ট্রেলীয়দের কাছে ম্যাগপাই প্রিয় একটি পাখি হলেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে স্থানীয়দের আতঙ্কের কারণে পরিণত হয় এই পাখিরা। প্রতি বছর বসন্ত আসলেই এই পাখিদের আচরণে দেখা দেয় অস্বাভাবিকতা। রাস্তা-ঘাটে পথচারীদের ওপর আক্রমণ করতে শুরু করে ম্যাগপাইরা। এ বছরও কয়েকশ মানুষ ম্যাগপাইয়ের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
অস্ট্রেলীয় ম্যাগপাই সর্বভুক প্রকৃতির পাখি। এরা প্রায় সব ধরনের খাবার খায়। এরা সাধারণত কেঁচো, বহুপদী, শামুক, মাকড়শা, বিছে, তেলাপোকা, পিঁপড়া, গোবরেপোকা, মথ, শুঁয়োপোকা, ঘাসফড়িং, ব্যাং, ইঁদুর, শস্যকণা, ডুমুর, ওয়ালনাট ইত্যাদি খেয়ে থাকে। ম্যাগপাইরা খাবারের জন্য মাটির কাছাকাছির বিভিন্ন পতঙ্গের ওপর নির্ভর করলেও বসন্তে কেন তারা এই ধরনের আচরণ করে সেটির কোন ব্যাখ্যা নেই দেশটির পাখি বিশারদদের কাছে।
‘একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ-অস্ট্রেলিয়ার পাখিদের জীবন ঝুঁকিতে’ বইয়ের লেখক জিওফরি ম্যাসলেনও বসন্তে ম্যাগপাইদের এমন আচরণের কারণ সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
সেপ্টেম্বর মাসে পার্থে একটি শিশুর ওপর ম্যাগপাইয়ের আক্রমণের ঘটনাটি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ছোট্ট শিশুটির ওপর ম্যাগপাইয়ের নৃশংস আক্রমণে অনেকেই শিশুদের বাইরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের বাইরে বের হওয়া নিয়ে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেছে। ঐ মাসে মেলবোর্নের এক সাংবাদিকও ম্যাগপাইয়ের আক্রমণের শিকার হন। ঐ সাংবাদিকের মাথার এক পাশে ম্যাগপাইয়ের আক্রমণে রক্ত ঝরার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া ফেলে।
প্রতি বছর এই সময়টা ম্যাগপাইদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি শহরের মানুষ বিড়ম্বনার মধ্যে থাকলেও ম্যাগপাইয়ের প্রতি ভালোবাসার ঘাটতি নেই তাদের। জিওফরি ম্যাসলেন বলেন, ম্যাগপাইরা খুবই বুদ্ধিমান পাখি। এরা মানুষের কাছাকাছি আসতে পছন্দ করে, মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, বিশেষ করে যারা এদের খাবার দেয় তাদের সঙ্গে।
মজার বিষয় হলো, যেসব ম্যাগপাই মানুষের ওপর আক্রমণ করে তাদের বেশিরভাগই পুরুষ ম্যাগপাই। আর এই ম্যাগপাইয়ের হাত থেকে রক্ষা থেকে এই সময়ে অনেকেই মাথায় বড় হ্যাট পরেন অথবা হাতে লম্বা লাঠি নিয়ে হাঁটেন। যারা মোটর সাইকেল, কিংবা সাইকেল চালান তারাও মাথায় হেলমেট পরেন ম্যাগপাইয়ের হাত থেকে বাঁচতে। বসন্তে ম্যাগপাই যন্ত্রণা বৃদ্ধি পেলে অনেক শহরে মানুষকে সতর্ক করা হয়। শহরবাসীকে ম্যাগপাই অধ্যুষিত এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনো কারণে সেখানে গেলেও দ্রুত পায়ে এলাকা অতিক্রম করতে বলা হয়। তবে তাদের ভয়ে দৌড়ে পালাতে নিষেধ করা হয়। কারণ দৌড়লে অনেক সময় আক্রমণের মুখে পড়তে হয়।
তবে পাখি বিশারদ ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইংল্যান্ডের এমিরিটাস প্রফেসর জিসেলা কাপলানের মতে, লাঠি কিংবা সতর্কতার মাধ্যমে এই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করা যাবে। মূলত পাখিদের অভয়ারণ্য ধ্বংস করে মানুষ বসতি গড়ে তোলার জন্যই হয়ত এই সমস্যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।-সিএনএন।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

বসন্তের যন্ত্রণা ম্যাগপাই পাখি

আপডেট টাইম : ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ অক্টোবর ২০১৮
বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ অস্ট্রেলীয় ম্যাগপাই মাঝারি আকারের সাদা কালো একধরনের পাখি। এই ম্যাগপাইদের আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া। এই পাখিরা খুবই সুমিষ্ট স্বরে গান করে, দেখতেও এরা বেশ দারুণ। পুরুষ পাখির মাথার পিছে সাদা পালক থাকে আর স্ত্রী পাখির মাথার পেছনে থাকে ধূসর সাদা পালক। অস্ট্রেলীয়দের কাছে ম্যাগপাই প্রিয় একটি পাখি হলেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে স্থানীয়দের আতঙ্কের কারণে পরিণত হয় এই পাখিরা। প্রতি বছর বসন্ত আসলেই এই পাখিদের আচরণে দেখা দেয় অস্বাভাবিকতা। রাস্তা-ঘাটে পথচারীদের ওপর আক্রমণ করতে শুরু করে ম্যাগপাইরা। এ বছরও কয়েকশ মানুষ ম্যাগপাইয়ের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
অস্ট্রেলীয় ম্যাগপাই সর্বভুক প্রকৃতির পাখি। এরা প্রায় সব ধরনের খাবার খায়। এরা সাধারণত কেঁচো, বহুপদী, শামুক, মাকড়শা, বিছে, তেলাপোকা, পিঁপড়া, গোবরেপোকা, মথ, শুঁয়োপোকা, ঘাসফড়িং, ব্যাং, ইঁদুর, শস্যকণা, ডুমুর, ওয়ালনাট ইত্যাদি খেয়ে থাকে। ম্যাগপাইরা খাবারের জন্য মাটির কাছাকাছির বিভিন্ন পতঙ্গের ওপর নির্ভর করলেও বসন্তে কেন তারা এই ধরনের আচরণ করে সেটির কোন ব্যাখ্যা নেই দেশটির পাখি বিশারদদের কাছে।
‘একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ-অস্ট্রেলিয়ার পাখিদের জীবন ঝুঁকিতে’ বইয়ের লেখক জিওফরি ম্যাসলেনও বসন্তে ম্যাগপাইদের এমন আচরণের কারণ সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
সেপ্টেম্বর মাসে পার্থে একটি শিশুর ওপর ম্যাগপাইয়ের আক্রমণের ঘটনাটি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ছোট্ট শিশুটির ওপর ম্যাগপাইয়ের নৃশংস আক্রমণে অনেকেই শিশুদের বাইরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের বাইরে বের হওয়া নিয়ে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেছে। ঐ মাসে মেলবোর্নের এক সাংবাদিকও ম্যাগপাইয়ের আক্রমণের শিকার হন। ঐ সাংবাদিকের মাথার এক পাশে ম্যাগপাইয়ের আক্রমণে রক্ত ঝরার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া ফেলে।
প্রতি বছর এই সময়টা ম্যাগপাইদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি শহরের মানুষ বিড়ম্বনার মধ্যে থাকলেও ম্যাগপাইয়ের প্রতি ভালোবাসার ঘাটতি নেই তাদের। জিওফরি ম্যাসলেন বলেন, ম্যাগপাইরা খুবই বুদ্ধিমান পাখি। এরা মানুষের কাছাকাছি আসতে পছন্দ করে, মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, বিশেষ করে যারা এদের খাবার দেয় তাদের সঙ্গে।
মজার বিষয় হলো, যেসব ম্যাগপাই মানুষের ওপর আক্রমণ করে তাদের বেশিরভাগই পুরুষ ম্যাগপাই। আর এই ম্যাগপাইয়ের হাত থেকে রক্ষা থেকে এই সময়ে অনেকেই মাথায় বড় হ্যাট পরেন অথবা হাতে লম্বা লাঠি নিয়ে হাঁটেন। যারা মোটর সাইকেল, কিংবা সাইকেল চালান তারাও মাথায় হেলমেট পরেন ম্যাগপাইয়ের হাত থেকে বাঁচতে। বসন্তে ম্যাগপাই যন্ত্রণা বৃদ্ধি পেলে অনেক শহরে মানুষকে সতর্ক করা হয়। শহরবাসীকে ম্যাগপাই অধ্যুষিত এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনো কারণে সেখানে গেলেও দ্রুত পায়ে এলাকা অতিক্রম করতে বলা হয়। তবে তাদের ভয়ে দৌড়ে পালাতে নিষেধ করা হয়। কারণ দৌড়লে অনেক সময় আক্রমণের মুখে পড়তে হয়।
তবে পাখি বিশারদ ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইংল্যান্ডের এমিরিটাস প্রফেসর জিসেলা কাপলানের মতে, লাঠি কিংবা সতর্কতার মাধ্যমে এই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করা যাবে। মূলত পাখিদের অভয়ারণ্য ধ্বংস করে মানুষ বসতি গড়ে তোলার জন্যই হয়ত এই সমস্যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।-সিএনএন।