বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশের স্থানীয় প্রজাতির পাখি ছাড়াও পরিযায়ী প্রজাতির পাখিরা আমাদের দেশীয় পাখির তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ কোনো প্রজাতির পাখি যদি একবারো কোনো দেশে উপস্থিত হয়, ওই প্রজাতিটি তখন ওই দেশীয় পাখির তালিকায় স্থান পায়। পাখিদের ক্ষেত্রে এটিই নিয়ম। তেমনি তালিকায় রয়েছে ‘সোনালিগলা বসন্ত বউরি’। বাংলাদেশের পাখির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ওই নিয়মেই।
দেশে খুব একটা ওদের দেখা মেলে না যদিও, তথাপিও প্রতি বসন্তেই প্রজাতির খোঁজে হন্নে হয়ে ঘুরে বেড়াই বন-বাদাড়ের আনচে কানাচে। প্রজাতি সম্পর্কে বন্যপ্রাণী বিশারদ ড. রেজা খান তার লেখা ‘বাংলাদেশের পাখি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘প্রজাতিটি দেশে দেখা যাওয়ার তথ্য না থাকলেও দুই ভিনদেশি পাখি পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে সোনালিগলা বসন্ত বউরির সাক্ষাৎ পেয়েছেন।’
তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, প্রজাতিটি অতি বিরল। মূলত বসন্ত বউরি বসন্তকালের পাখি। সারা বছর আড়ালে-আবডালে লুকিয়ে থাকলেও বসন্ত বউরি পাখি বসন্তকালের শুরু থেকে লোকালয়ে চলে আসে। গাছের ফল-ফলাদি খেয়ে সামান্য ক্ষতি করলেও কর্কশ অথচ করুণ সুরের গান শোনার সুযোগ হয়। ওদের গলার আওয়াজ, ‘টুক-টুক-টুক..’ (প্রজাতিভেদে আওয়াজ ভিন্ন সুর)।
বহুদূর থেকে শোনা যায় আওয়াজ। হঠাৎ আওয়াজ কানে গেলে যে কেউ কামারের হাতুড়িপেটার আওয়াজ মনে করতে পারেন। আওয়াজ কর্কশ হলেও সুরে রয়েছে চমৎকার তাল-লয়। শোনার আগ্রহ জাগে তাই। এরা বৃক্ষচারী পাখি। দেখতে সুশ্রী। শরীরের তুলনায় মাথা বেঢপ সাইজের। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম ও তিব্বত পর্যন্ত।
পাখির বাংলা নাম: ‘সোনালিগলা বসন্ত বউরি’, ইংরেজি নাম: ‘গোল্ডেন থ্রোটেড বারবেট’ (Golden-throated Barbet), বৈজ্ঞানিক নাম: Megalaima franklinii।
প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ২৩ সেন্টিমিটার। কপাল লাল। তালুতে সোনালি পট্টি। পুরো দেহ সবুজ। ডানার গোড়ার পালক নীল। কান ঢাকনি সাদাটে। গলা সোনালি। বুকের দিকে সোনালি আভা দেখা যায়। নিচের দিকে বাদবাকি সবুজ। ঠোঁট ত্রিভুজাকৃতির, শক্ত মজবুত, কালচে। পা জলপাই রঙের।
প্রধান খাবার: ছোট পাকা ফল ও ফুলের মধু।
প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। গাছের কাণ্ডে নিজেরা খোড়ল করে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ফুটতে সময় ১৫-১৭ দিন।