বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। বাংলাদেশে সর্বশেষ দেখা গেছে প্রায় ৬৫ বছর আগে। এদের বিচরণ হাওর-বাঁওড় জলাশয় এলাকায়। হাঁটু জলে নেমে শিকার খোঁজে। দল বেঁধে বিচরণ করে না। সাধারণত এক জোড়ার বেশি কোথাও দেখা যায় না। তবে শিকারে বের হলে শামুকখোল পাখির সঙ্গে দল বাঁধতে দেখা যায়। খাবারে তেমন কোনো বাছবিচার নেই। পচাগলা থেকে শুরু করে সব ধরনের খাবার এদের প্রিয়। রাত্রিযাপন করে গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে। দিনের বেলায় জলাশয়ের পাড়ে হাঁটুগেঁড়ে বিশ্রাম নেয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওস পর্যন্ত। এ ছাড়াও পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ায় সামান্য নজরে পড়ে। পাখি বিশারদদের মতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বড়জোর একহাজার ‘কালাগলা মানিকজোড়’ রয়েছে। সমগ্রবিশ্বে এদের অবস্থান তত ভালো নয় বিধায় আইইউসিএন এদেরকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে।
পাখির বাংলা নাম: ‘কালাগলা মানিকজোড়’, ইংরেজি নাম: ‘ব্লাক নেকেড স্টর্ক’ (Black necked Stork), বৈজ্ঞানিক নাম: Ephippiorhychus asiaticus। এরা ‘কালাগলা বক ও লোহারজঙ্গ’ নামেও পরিচিত।
প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৫০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পাখি বিশারদ ব্যতিত এ পার্থক্য নিরুপণ করা বড়ই কঠিন। সূক্ষ্ণ পার্থক্যটা হচ্ছে স্ত্রী পাখির চোখের তারা হলুদ, পুরুষ পাখির চোখের তারা বাদামি-কালো। এ ছাড়া বাদবাকি একই রকম। বলা যায়, এরা সাদা-কালো রঙের পাখি। মাথা ও গলা কালো। পিঠের মাঝখান থেকে লেজের উপরিভাগ পর্যন্ত কালো। দেহের বাকি অংশ সাদা। ঠোঁট কালো। পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল লাল। অপ্রাপ্তবয়স্কদের রঙ ভিন্ন। ওদের মাথা থেকে পিঠের দিক বাদামি। পালক কালচে। পা গাঢ় লাল।
প্রধান খাবার: ছোট সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, বাইম মাছ। শিং-মাগুর মাছের প্রতিও আসক্তি রয়েছে।
প্রজনন মৌসুম সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে জলাশয়ের কাছাকাছি গাছের উঁচু ডালের তেমাথায়। বাসা মাচা আকৃতির। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো সরু ডালপালা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ফুটতে সময় লাগে ২৯-৩১দিন।