ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুয়ালালামপুরে দেখা মিলবে ইসলামি সংস্কৃতির রত্ন অলংকার

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ হচ্ছে মালয়েশিয়া। দক্ষিণ চীন সাগর দ্বারা দেশটি দুভাগে বিভক্ত, পেনিনসুলার মালয়েশিয়া এবং পূর্ব মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার স্থল সীমান্তে রয়েছে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনাই; এর সমুদ্র সীমান্তে রয়েছে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন। মালয়েশিয়ার জনসংখ্যা ২৮ মিলিয়নের অধিক। আয়তন ৩,২৯,৮৪৫ বর্গকিমি। দেশটির রাজধানী শহর কুয়ালালামপুর ও পুত্রাজায়া হলো ফেডারেল সরকারের রাজধানী। মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের কাঠামোতে পরিচালিত হয়।

রাজা হলেন রাষ্ট্রের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান। এখানকার অর্থনীতি অপেক্ষাকৃত মুক্ত কিন্তু রাষ্ট্রকেন্দ্রিক। বর্তমানে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি একটি উঠতি শিল্প উন্নত বাজার অর্থনীতি বলে বিবেচিত। দেশটি আসিয়ান ও ওআইসির অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে বদ্ধপরিকর। এখানকার প্রায় অর্ধেক লোক মালয় ভাষায় কথা বলে। সরকারি ভাষাও মালয়। এ ভাষা ছাড়া আরও ১৩০টি ভাষা রয়েছে এখানে।দাপ্তরিকভাবে মালয়েশিয়া একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র হলেও ইসলাম এর আনুষ্ঠানিক ধর্ম। জনসংখ্যার প্রায় ৬৩ ভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী।

সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করার স্বাধীনতা ভোগ করে এখানে। সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। মালয়েশিয়া শরিয়াহভিত্তিক সব কাজে ‘শাফেয়ী’ মাযহাবের অনুসরণ করে। ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় আলোচনা কিংবা যেকোনো ধরনের সমস্যা নিষ্পত্তিতে ‘শরিয়াহ আদালত’র সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। মালয়েশিয়ায় রয়েছে বহুভাষী, বহুজাতিক নৃগোষ্ঠী। ফলে অসংখ্য জাতির সহস্র ধরনের রীতি-নীতি ও আচরণের মিশেলে এর সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে বৈচিত্র্যময়। তবে সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হলো সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও সমাজের আবহমানকাল ধরে পালন করে আসা বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গী ও আচার-আচরণ।

পাশাপাশি এটি ইসলামি সংস্কৃতির সাথে রক্ষা করেছে অভূতপূর্ব মেলবন্ধ। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে মালয়েশিয়ার ও ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতি খুবই ঘনিষ্ঠ। প্রতিবেশী দেশ বলে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক উপাদানের বিনিময় ও বিষয়বস্তু ধারণে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাবিত।মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত ইসলামিক আর্টস মিউজিয়াম ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির নিদর্শনের প্রদর্শনকারী একটি বৃহত্তম যাদুঘর। মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদ এবং লেক গার্ডেনের নিকটে অবস্থিত এ যাদুঘরটি ইসলামি শিল্প ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের ওপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম যাদুঘর।

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই যাদুঘরটি প্রাচীন ইসলামি ইতিহাসের বিভিন্ন নিদর্শনের পাশাপাশি সমসাময়িক আধুনিক যুগেরও বিভিন্ন শিল্পনিদর্শন প্রদর্শন করছে। তিনতলাবিশিষ্ট এ যাদুঘরটিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত ঐতিহাসিক ও শিল্পনিদর্শন প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। সাত হাজারের অধিক নিদর্শনের প্রদর্শনকারী এ যাদুঘরটি দর্শনার্থীদের সময়ের হিসাব সম্পর্কে সম্পূর্ণ অচেতন করে তোলে।যাদুঘরটির নিচতলায় বেদুইন সংস্কৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিদর্শন তথা ট্রাপেস্ট্রি, পর্দা, গালিচা, তাঁবু প্রভৃতি প্রদর্শিত হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বিভিন্ন গ্যালারিতে সংরক্ষিত নিদর্শনগুলো রাখা হয়েছে।

দ্বিতীয় তলায় ভারত, চীন ও মালয়েশিয়া থেকে সংগৃহীত ইসলামি নিদর্শনসমূহ সংরক্ষিত আছে। অপরদিকে আরব ও অন্যান্য দেশ থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন নিদর্শন তৃতীয় তলায় প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। যাদুঘরের স্থাপত্য নিদর্শন গ্যালারিতে মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদুন নববী ছাড়াও এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামি স্থাপনার ক্ষুদে মডেল প্রদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া ১২৩৫ হিজরির ওসমানি শাসনামলের একটি বৈঠকখানার মডেলও এখানে রাখা আছে।এই যাদুঘরের সর্বাধিক আকর্ষণীয় পা-ুলিপি গ্যালারি। ৮ম শতকের কুরআনের পা-ুলিপি থেকে শুরু করে অনেক প্রাচীন নিদর্শন ও বহু পুরনো মূল্যবান পালিপি এতে সংরক্ষিত।

ভারতীয় গ্যালারিতে বিভিন্ন রত্ন, অলঙ্কার, রেশমি পোশাকসহ মুঘল শাসনামলের বিভিন্ন নিদর্শন প্রদর্শিত হয়েছে। চীনা গ্যালারিতে মিং শাসনামলের সময় থেকে পরবর্তী অন্যসব নিদর্শন সংরক্ষণ করা হয়েছে। যখন ইসলাম চীনের মাটিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামি শিল্পের সাথে স্থানীয় চীনা সংস্কৃতির সংমিশ্রণ এই নিদর্শনসমূহ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। যাদুঘরের মূল প্রদর্শনের গ্যালারি ছাড়াও এতে একটি স্যুভিনির শপ ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। বাস্তবিকই এ যাদুঘরটি ইসলামি বিশ্বের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র, যা ইতিহাস ও শিল্পপ্রিয় দর্শনার্থীদের হৃদয় অবশ্যই হরণ করবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

কুয়ালালামপুরে দেখা মিলবে ইসলামি সংস্কৃতির রত্ন অলংকার

আপডেট টাইম : ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ হচ্ছে মালয়েশিয়া। দক্ষিণ চীন সাগর দ্বারা দেশটি দুভাগে বিভক্ত, পেনিনসুলার মালয়েশিয়া এবং পূর্ব মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার স্থল সীমান্তে রয়েছে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনাই; এর সমুদ্র সীমান্তে রয়েছে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন। মালয়েশিয়ার জনসংখ্যা ২৮ মিলিয়নের অধিক। আয়তন ৩,২৯,৮৪৫ বর্গকিমি। দেশটির রাজধানী শহর কুয়ালালামপুর ও পুত্রাজায়া হলো ফেডারেল সরকারের রাজধানী। মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের কাঠামোতে পরিচালিত হয়।

রাজা হলেন রাষ্ট্রের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান। এখানকার অর্থনীতি অপেক্ষাকৃত মুক্ত কিন্তু রাষ্ট্রকেন্দ্রিক। বর্তমানে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি একটি উঠতি শিল্প উন্নত বাজার অর্থনীতি বলে বিবেচিত। দেশটি আসিয়ান ও ওআইসির অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে বদ্ধপরিকর। এখানকার প্রায় অর্ধেক লোক মালয় ভাষায় কথা বলে। সরকারি ভাষাও মালয়। এ ভাষা ছাড়া আরও ১৩০টি ভাষা রয়েছে এখানে।দাপ্তরিকভাবে মালয়েশিয়া একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র হলেও ইসলাম এর আনুষ্ঠানিক ধর্ম। জনসংখ্যার প্রায় ৬৩ ভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী।

সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করার স্বাধীনতা ভোগ করে এখানে। সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। মালয়েশিয়া শরিয়াহভিত্তিক সব কাজে ‘শাফেয়ী’ মাযহাবের অনুসরণ করে। ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় আলোচনা কিংবা যেকোনো ধরনের সমস্যা নিষ্পত্তিতে ‘শরিয়াহ আদালত’র সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। মালয়েশিয়ায় রয়েছে বহুভাষী, বহুজাতিক নৃগোষ্ঠী। ফলে অসংখ্য জাতির সহস্র ধরনের রীতি-নীতি ও আচরণের মিশেলে এর সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে বৈচিত্র্যময়। তবে সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হলো সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও সমাজের আবহমানকাল ধরে পালন করে আসা বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গী ও আচার-আচরণ।

পাশাপাশি এটি ইসলামি সংস্কৃতির সাথে রক্ষা করেছে অভূতপূর্ব মেলবন্ধ। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে মালয়েশিয়ার ও ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতি খুবই ঘনিষ্ঠ। প্রতিবেশী দেশ বলে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক উপাদানের বিনিময় ও বিষয়বস্তু ধারণে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাবিত।মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত ইসলামিক আর্টস মিউজিয়াম ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির নিদর্শনের প্রদর্শনকারী একটি বৃহত্তম যাদুঘর। মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদ এবং লেক গার্ডেনের নিকটে অবস্থিত এ যাদুঘরটি ইসলামি শিল্প ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের ওপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম যাদুঘর।

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই যাদুঘরটি প্রাচীন ইসলামি ইতিহাসের বিভিন্ন নিদর্শনের পাশাপাশি সমসাময়িক আধুনিক যুগেরও বিভিন্ন শিল্পনিদর্শন প্রদর্শন করছে। তিনতলাবিশিষ্ট এ যাদুঘরটিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত ঐতিহাসিক ও শিল্পনিদর্শন প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। সাত হাজারের অধিক নিদর্শনের প্রদর্শনকারী এ যাদুঘরটি দর্শনার্থীদের সময়ের হিসাব সম্পর্কে সম্পূর্ণ অচেতন করে তোলে।যাদুঘরটির নিচতলায় বেদুইন সংস্কৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিদর্শন তথা ট্রাপেস্ট্রি, পর্দা, গালিচা, তাঁবু প্রভৃতি প্রদর্শিত হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বিভিন্ন গ্যালারিতে সংরক্ষিত নিদর্শনগুলো রাখা হয়েছে।

দ্বিতীয় তলায় ভারত, চীন ও মালয়েশিয়া থেকে সংগৃহীত ইসলামি নিদর্শনসমূহ সংরক্ষিত আছে। অপরদিকে আরব ও অন্যান্য দেশ থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন নিদর্শন তৃতীয় তলায় প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। যাদুঘরের স্থাপত্য নিদর্শন গ্যালারিতে মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদুন নববী ছাড়াও এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামি স্থাপনার ক্ষুদে মডেল প্রদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া ১২৩৫ হিজরির ওসমানি শাসনামলের একটি বৈঠকখানার মডেলও এখানে রাখা আছে।এই যাদুঘরের সর্বাধিক আকর্ষণীয় পা-ুলিপি গ্যালারি। ৮ম শতকের কুরআনের পা-ুলিপি থেকে শুরু করে অনেক প্রাচীন নিদর্শন ও বহু পুরনো মূল্যবান পালিপি এতে সংরক্ষিত।

ভারতীয় গ্যালারিতে বিভিন্ন রত্ন, অলঙ্কার, রেশমি পোশাকসহ মুঘল শাসনামলের বিভিন্ন নিদর্শন প্রদর্শিত হয়েছে। চীনা গ্যালারিতে মিং শাসনামলের সময় থেকে পরবর্তী অন্যসব নিদর্শন সংরক্ষণ করা হয়েছে। যখন ইসলাম চীনের মাটিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামি শিল্পের সাথে স্থানীয় চীনা সংস্কৃতির সংমিশ্রণ এই নিদর্শনসমূহ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। যাদুঘরের মূল প্রদর্শনের গ্যালারি ছাড়াও এতে একটি স্যুভিনির শপ ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। বাস্তবিকই এ যাদুঘরটি ইসলামি বিশ্বের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র, যা ইতিহাস ও শিল্পপ্রিয় দর্শনার্থীদের হৃদয় অবশ্যই হরণ করবে।