ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বার্নাকল: শৈশব থেকেই দুঃসাহসী হয়ে ওঠার গল্প

বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বেঁচে থাকার আরেক নাম যুদ্ধ। আর তা শুরু হয় জন্মের পর থেকেই। তবে আজ জীবনযুদ্ধের  এমন এক বর্ণনা করবো যা অকল্পনীয়। বেঁচে থাকার জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি দুঃসাহসী অভিযান।

বার্নাকল! ভূমি থেকে প্রায় ৪০০ মিটার উপরে এদের বাস। মূলত এতো উপরে বাসা বাঁধার প্রধান কারণ হলো শিকারী প্রাণী থেকে ডিমগুলো রক্ষা করা। পরিযায়ী পাখি হওয়ায় শুধুমাত্র বংশবৃদ্ধির জন্যই এরা পূর্ব গ্রিনল্যান্ডের পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় নেয়। গ্রীষ্মের সময়টায় এরা বাসা বাঁধে এবং ডিম পারে বেশি। কারণ শীতকালে এরা স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে পাড়ি জমায়। সেখানে উড়ে বেড়ায় এবং পানিতে সময় কাটায়। জন্মের পর এদের কঠিন জীবন যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়। হ্যাঁ, বার্নাকল হাঁস পৃথিবীর সবচেয়ে পরিশ্রমী পাখিগুলোর একটি।

বার্নাকল

বার্নাকল

বাবা মার মত হংস শিশুদেরও একমাত্র খাবার ঘাস। কিন্তু ঘাস রয়েছে পাহাড় থেকে ১২০ মিটার নিচে ওই নদীর কিনারায়। বেঁচে থাকতে হলে হংস শিশুদের সেখানে পৌঁছাতেই হবে। এজন্য তাদের নিতে হয় কঠিন এক ঝুঁকি। মা হাঁসটি প্রথমে মাটির দিকে লাফিয়ে নেমে বাচ্চাদের উৎসাহিত করতে থাকে। এরপর বাচ্চাগুলো সরাসরি নিচে লাফিয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ঠিক রেখে লাফটি দিতে হয়। নাহলে প্রাণের ঝুঁকি থাকে বেশি। নিচে নামার সময় বাচ্চাগুলো তাদের শরীর চওড়াভাবে বাতাসে মেলে ধরে এবং ছোট্ট পাখাগুলি প্রসারিত করে।

নিচে নামার সময় পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট ধাক্কা বাচ্চাটির গতি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। যা তাকে নিরাপদে পৌঁছানোর জন্য অতি জরুরি। সৌভাগ্যক্রমে অনেক বাচ্চা তুষারের উপর পড়ে। আবার কতগুলো পাথরে পড়ে মারা যায়। যদি খাড়াভাবে পড়ে তবে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল কিন্তু ভালোভাবে পড়লে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর মাটিতে পড়ার পর প্রথম স্পর্শটা যদি পেট হয় তবে কোনো ঝুঁকি নেই। কিন্তু মাথা হলে হতে পারে মহাবিপদ! এই বাচ্চাগুলো কোনো রকমে বেঁচে যায় আহত হয়েও।

বার্নাকল

বার্নাকল

কিন্তু নিচে অপেক্ষা করছে আরেক বিপদ! আর্কটিক শিয়াল ছাড়াও অন্য অনেক শিকারী পাখি ওত পেতে রয়েছে বার্নাকলের ছানাদের জন্য। সবকিছুই দেখছে মা, কিন্তু তার এখানে কিছুই করার নেই। শিকারী প্রাণীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বাবা পাখিদের চেয়ে মা পাখিই বেশি সজাগ দৃষ্টি রাখেন। অবশেষে বাচ্চাগুলো সুস্থভাবে তাদের যাত্রা শেষ করে। বাচ্চাগুলো চরম ভাবে আহত হওয়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত মায়ের ডাকে সাড়া দিতে পারে। এখানে শুরু হয় তাদের বেঁচে থাকার অন্য লড়াই। বার্নাকল পাখি পরিশ্রমীর পাশাপাশি সাহসী পাখি হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছে বিশ্বের বড় বড় পাখি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে। তারা মনে করেন এই সাহস পাখিরা তাদের বংশপরম্পরায় বহন করছে।

বার্নাকল

বার্নাকল

স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে শীতকালীন পাখিদের পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণ সংস্থা ওয়াইল্ডফাউল এবং ওয়েটল্যান্ডস ট্রাস্টের আন্তর্জাতিক আদমশুমারির পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে গ্রিনল্যান্ডে বার্নাকল পাখির জনসংখ্যা ৮০ হাজারেরো বেশি।

আপনি যদি নিষ্পাপ হন, পৃথিবীর কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া অতি সাধারণ বিষয়। টিকে থাকার জন্য সকলকে অতি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেমনটা যেতে হয় এই বার্নাকল পাখিদের।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বার্নাকল: শৈশব থেকেই দুঃসাহসী হয়ে ওঠার গল্প

আপডেট টাইম : ০৩:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বেঁচে থাকার আরেক নাম যুদ্ধ। আর তা শুরু হয় জন্মের পর থেকেই। তবে আজ জীবনযুদ্ধের  এমন এক বর্ণনা করবো যা অকল্পনীয়। বেঁচে থাকার জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি দুঃসাহসী অভিযান।

বার্নাকল! ভূমি থেকে প্রায় ৪০০ মিটার উপরে এদের বাস। মূলত এতো উপরে বাসা বাঁধার প্রধান কারণ হলো শিকারী প্রাণী থেকে ডিমগুলো রক্ষা করা। পরিযায়ী পাখি হওয়ায় শুধুমাত্র বংশবৃদ্ধির জন্যই এরা পূর্ব গ্রিনল্যান্ডের পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় নেয়। গ্রীষ্মের সময়টায় এরা বাসা বাঁধে এবং ডিম পারে বেশি। কারণ শীতকালে এরা স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে পাড়ি জমায়। সেখানে উড়ে বেড়ায় এবং পানিতে সময় কাটায়। জন্মের পর এদের কঠিন জীবন যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়। হ্যাঁ, বার্নাকল হাঁস পৃথিবীর সবচেয়ে পরিশ্রমী পাখিগুলোর একটি।

বার্নাকল

বার্নাকল

বাবা মার মত হংস শিশুদেরও একমাত্র খাবার ঘাস। কিন্তু ঘাস রয়েছে পাহাড় থেকে ১২০ মিটার নিচে ওই নদীর কিনারায়। বেঁচে থাকতে হলে হংস শিশুদের সেখানে পৌঁছাতেই হবে। এজন্য তাদের নিতে হয় কঠিন এক ঝুঁকি। মা হাঁসটি প্রথমে মাটির দিকে লাফিয়ে নেমে বাচ্চাদের উৎসাহিত করতে থাকে। এরপর বাচ্চাগুলো সরাসরি নিচে লাফিয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ঠিক রেখে লাফটি দিতে হয়। নাহলে প্রাণের ঝুঁকি থাকে বেশি। নিচে নামার সময় বাচ্চাগুলো তাদের শরীর চওড়াভাবে বাতাসে মেলে ধরে এবং ছোট্ট পাখাগুলি প্রসারিত করে।

নিচে নামার সময় পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট ধাক্কা বাচ্চাটির গতি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। যা তাকে নিরাপদে পৌঁছানোর জন্য অতি জরুরি। সৌভাগ্যক্রমে অনেক বাচ্চা তুষারের উপর পড়ে। আবার কতগুলো পাথরে পড়ে মারা যায়। যদি খাড়াভাবে পড়ে তবে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল কিন্তু ভালোভাবে পড়লে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর মাটিতে পড়ার পর প্রথম স্পর্শটা যদি পেট হয় তবে কোনো ঝুঁকি নেই। কিন্তু মাথা হলে হতে পারে মহাবিপদ! এই বাচ্চাগুলো কোনো রকমে বেঁচে যায় আহত হয়েও।

বার্নাকল

বার্নাকল

কিন্তু নিচে অপেক্ষা করছে আরেক বিপদ! আর্কটিক শিয়াল ছাড়াও অন্য অনেক শিকারী পাখি ওত পেতে রয়েছে বার্নাকলের ছানাদের জন্য। সবকিছুই দেখছে মা, কিন্তু তার এখানে কিছুই করার নেই। শিকারী প্রাণীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বাবা পাখিদের চেয়ে মা পাখিই বেশি সজাগ দৃষ্টি রাখেন। অবশেষে বাচ্চাগুলো সুস্থভাবে তাদের যাত্রা শেষ করে। বাচ্চাগুলো চরম ভাবে আহত হওয়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত মায়ের ডাকে সাড়া দিতে পারে। এখানে শুরু হয় তাদের বেঁচে থাকার অন্য লড়াই। বার্নাকল পাখি পরিশ্রমীর পাশাপাশি সাহসী পাখি হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছে বিশ্বের বড় বড় পাখি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে। তারা মনে করেন এই সাহস পাখিরা তাদের বংশপরম্পরায় বহন করছে।

বার্নাকল

বার্নাকল

স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে শীতকালীন পাখিদের পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণ সংস্থা ওয়াইল্ডফাউল এবং ওয়েটল্যান্ডস ট্রাস্টের আন্তর্জাতিক আদমশুমারির পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে গ্রিনল্যান্ডে বার্নাকল পাখির জনসংখ্যা ৮০ হাজারেরো বেশি।

আপনি যদি নিষ্পাপ হন, পৃথিবীর কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া অতি সাধারণ বিষয়। টিকে থাকার জন্য সকলকে অতি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেমনটা যেতে হয় এই বার্নাকল পাখিদের।