ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানুষের আঘাতে মরছে ‘ভ্রমণক্লান্ত পরিযায়ী শকুন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  একপ্রাপ্ত থেকে আরেক প্রান্তে দীর্ঘ পরিযানের পথ। এজন্যই অনেক শকুন অসুস্থ হয়ে হারিয়ে ফেলে উড়ার শক্তি। তখন মাটিতে পড়ে যায় এই বিশাল আকৃতির পাখিটি। প্রাণীটিকে দেখে ভয় পেয়ে যায় অনেকেই। ঠিক তখনই ভীত মানুষেরা বা অতি উৎসাহী এলাকাবাসীর আঘাতে প্রাণীগুলো অসুস্থ হয় এবং প্রাণ হারায়।

Related image

পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো থেকে নিরাপত্তা ও খাদ্যের লোভে যেসব পরিযায়ী পাখিরা পরিযান করে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম ‘হিমালয়ী গৃধিনী’ (Himalayan Griffon Vulture)। প্রতিবছর শীতকালে এই শকুনগুলো মাইগ্রেট বা পরিযায়ন করে বাংলাদেশের সমতল ভূমিগুলোতে চলে আসে।

Image result for শকুন ছবি

কিন্তু দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তিতে তারা আমাদের দেশে এসে অনেক সময় উড়তে পারে না। মাটিতে পড়ে যায়। তখন গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা অনেক সময় অতি উৎসুক হয়ে অথবা ভয়ে সেই হিমালয় গৃধিনী শকুনদের মেরে ফেলে।

শকুন গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গত বছর সিলেট অঞ্চলেও পেয়েছিলাম এমন অসুস্থ হিমালয়ী গৃধিনী শকুনদের। গত বছর আমরা ১১টা  অসুস্থ শকুনদের সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়েছি। আমাদের ক্যাপভিট সেন্টারে গড়ে ২০ থেকে ৩০টা শকুন খাওয়াই-দাওয়াই, ট্রিটমেন্ট দিই, পরিচর্যা করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেই।

Image result for শকুন ছবি

তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ-ছয় বছরে আমরা প্রায় শতাধিক শুকুন সুস্থ করে ছেড়েছি। আগে যখন আমরা হিমালয়ী গৃধিনী শকুনদের নিয়ে কাজ করতাম না, তখন কী পরিমাণ শকুন মারা পড়তো। প্রতিবছর শীত মৌসুমে গড়ে প্রায় ৫০টা শকুন বাংলাদেশের মাটিতে পড়ে।তাদের খাবারের অভাব সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, এরা সুদূর হিমালয়ের এরিয়া থেকে আসে। এরা অনেক অনেক দূর জার্নি করে এসে খাবার পায় না। খাবারের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ইংরেজিতে একে বলে ‘সর্টেজ অফ ফুড’ অর্থাৎ খাদ্যের সংকট। অনেক দূর জার্নি করার ফলে তাদের খাবারের প্রয়োজন পড়ে; এই জিনিসটা সঙ্গে সঙ্গে ওরা পায় না। তখন খুব দুর্বল হয়ে যায় এবং উড়তে পারে না। গ্রামের উৎসুক মানুষ এমন অবস্থায় শকুনদের বেঁধে রাখে, আহত করে বা পিটিয়ে মেরে ফেলে। কারো কারো পালক ওঠে যায়, কারো কারো পাখা ভাঙে, কারো কারো আবার পা ভাঙে। তখন আমাদের এসব অসুস্থ শকুনদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

Related image

শকুন গবেষণা প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, হিমালয়ী গৃধিনী পরিচর্যার জন্য দিনাজপুরের সিংড়াতে একটি রেসকিউ সেন্টার তৈরি করেছে বনবিভাগ ও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)। এ মৌসুমের প্রথম শকুনটি বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকালই শকুনের বড় একটি দল বাংলাদেশের সীমানায় এসেছে। দলের অন্য শকুনগুলোও বিভিন্ন এলাকায় আটকা পড়তে পারে।

Related image

এ জাতের পাখি দেশের যেকোনো জায়গায় আটকা পড়লে দ্রুত স্থানীয় বন বিভাগ বা আইইউসিএন দলকে জানান। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করছি এবং সবার সহযোগিতায় পেলে এবছরও হিমালয়ী গৃধিনী শকুনগুলোকে  প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান শকুন গবেষণা প্রকল্পের মূখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

মানুষের আঘাতে মরছে ‘ভ্রমণক্লান্ত পরিযায়ী শকুন

আপডেট টাইম : ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  একপ্রাপ্ত থেকে আরেক প্রান্তে দীর্ঘ পরিযানের পথ। এজন্যই অনেক শকুন অসুস্থ হয়ে হারিয়ে ফেলে উড়ার শক্তি। তখন মাটিতে পড়ে যায় এই বিশাল আকৃতির পাখিটি। প্রাণীটিকে দেখে ভয় পেয়ে যায় অনেকেই। ঠিক তখনই ভীত মানুষেরা বা অতি উৎসাহী এলাকাবাসীর আঘাতে প্রাণীগুলো অসুস্থ হয় এবং প্রাণ হারায়।

Related image

পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো থেকে নিরাপত্তা ও খাদ্যের লোভে যেসব পরিযায়ী পাখিরা পরিযান করে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম ‘হিমালয়ী গৃধিনী’ (Himalayan Griffon Vulture)। প্রতিবছর শীতকালে এই শকুনগুলো মাইগ্রেট বা পরিযায়ন করে বাংলাদেশের সমতল ভূমিগুলোতে চলে আসে।

Image result for শকুন ছবি

কিন্তু দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তিতে তারা আমাদের দেশে এসে অনেক সময় উড়তে পারে না। মাটিতে পড়ে যায়। তখন গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা অনেক সময় অতি উৎসুক হয়ে অথবা ভয়ে সেই হিমালয় গৃধিনী শকুনদের মেরে ফেলে।

শকুন গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গত বছর সিলেট অঞ্চলেও পেয়েছিলাম এমন অসুস্থ হিমালয়ী গৃধিনী শকুনদের। গত বছর আমরা ১১টা  অসুস্থ শকুনদের সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়েছি। আমাদের ক্যাপভিট সেন্টারে গড়ে ২০ থেকে ৩০টা শকুন খাওয়াই-দাওয়াই, ট্রিটমেন্ট দিই, পরিচর্যা করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেই।

Image result for শকুন ছবি

তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ-ছয় বছরে আমরা প্রায় শতাধিক শুকুন সুস্থ করে ছেড়েছি। আগে যখন আমরা হিমালয়ী গৃধিনী শকুনদের নিয়ে কাজ করতাম না, তখন কী পরিমাণ শকুন মারা পড়তো। প্রতিবছর শীত মৌসুমে গড়ে প্রায় ৫০টা শকুন বাংলাদেশের মাটিতে পড়ে।তাদের খাবারের অভাব সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, এরা সুদূর হিমালয়ের এরিয়া থেকে আসে। এরা অনেক অনেক দূর জার্নি করে এসে খাবার পায় না। খাবারের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ইংরেজিতে একে বলে ‘সর্টেজ অফ ফুড’ অর্থাৎ খাদ্যের সংকট। অনেক দূর জার্নি করার ফলে তাদের খাবারের প্রয়োজন পড়ে; এই জিনিসটা সঙ্গে সঙ্গে ওরা পায় না। তখন খুব দুর্বল হয়ে যায় এবং উড়তে পারে না। গ্রামের উৎসুক মানুষ এমন অবস্থায় শকুনদের বেঁধে রাখে, আহত করে বা পিটিয়ে মেরে ফেলে। কারো কারো পালক ওঠে যায়, কারো কারো পাখা ভাঙে, কারো কারো আবার পা ভাঙে। তখন আমাদের এসব অসুস্থ শকুনদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

Related image

শকুন গবেষণা প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, হিমালয়ী গৃধিনী পরিচর্যার জন্য দিনাজপুরের সিংড়াতে একটি রেসকিউ সেন্টার তৈরি করেছে বনবিভাগ ও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)। এ মৌসুমের প্রথম শকুনটি বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকালই শকুনের বড় একটি দল বাংলাদেশের সীমানায় এসেছে। দলের অন্য শকুনগুলোও বিভিন্ন এলাকায় আটকা পড়তে পারে।

Related image

এ জাতের পাখি দেশের যেকোনো জায়গায় আটকা পড়লে দ্রুত স্থানীয় বন বিভাগ বা আইইউসিএন দলকে জানান। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করছি এবং সবার সহযোগিতায় পেলে এবছরও হিমালয়ী গৃধিনী শকুনগুলোকে  প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান শকুন গবেষণা প্রকল্পের মূখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু।