বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নেপালের গাধিমাই উৎসব বিশ্বের সবচেয়ে বড় রক্তাক্ত উৎসব হিসাবে পরিচিত। যদিও প্রায় পাঁচ বছর আগে এই পশু বলিদান প্রথার ধর্মীয় উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিল নেপালের প্রাণি দাতব্য সংস্থাগুলো। কিন্তু মঙ্গলবার ছাগল, ইঁদুর, মুরগি, শুকর আর কবুতর হত্যার মধ্য দিয়ে ফের শুরু হয়েছে গাধিমাই উৎসব। এরপর সেখানে কয়েক হাজার মহিষ হত্যা করা হয়।
এর আগে ২০১৪ সালের সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ওই উৎসবে প্রায় দুই লাখ প্রাণি হত্যা করা হয়েছিল।
এই প্রথার শুরু হয় প্রায় আড়াইশো বছর আগে থেকে। তখন একজন পুরোহিত বলেছিলেন যে, তিনি স্বপ্নে দেখতে পেয়েছেন, শক্তির দেবী গাধিমাই তাকে বলেছেন যে, কারাগার থেকে তাকে মুক্ত করতে হলে রক্ত ঝরাতে হবে।
যে লাখ-লাখ ভক্ত ভারত ও নেপাল থেকে নেপালের বারিয়ারপুরে গাধিমাই দেবীর মন্দিরে যান, তাদের কাছে এটা নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করার একটি সুযোগ।
বিবিসির নেপালি ভাষা সার্ভিসের কাছে বলছেন জনকপুর থেকে আসা প্রিয়াঙ্কা যাদব বলেন, ‘আমার চারজন বোন রয়েছে। আট বছর আগে আমি একটা ভাইয়ের জন্য কামনা করি এবং দেবী আমার সেই আশা পূরণ করেছেন।’ফলে তিনি এসেছেন গাধিমাই উৎসবে, নিজের মনোবাসনা পূরণের মানত সম্পন্ন করতে। অর্থাৎ একটি পশু বলি দিতে।
২০১৫ সালে হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল এবং অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার নেটওয়ার্ক নেপাল বিজয় ঘোষণা করে জানায় যে, পশু বলিদান নেপালে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তবে বারিয়ারপুর গাধিমাই মন্দিরের চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র শাহ বিবিসিকে বলছেন, এ ধরণের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘ভক্ত হিন্দুদের অনুরোধ করা যেতে পারে যাতে তারা দেবীর উদ্দেশ্যে পশু বলি না দেন। কিন্তু সেজন্য তাদের বাধ্য করা যাবে না এবং এই রীতিও পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা যাবে না।’
দুই দিনব্যাপী এই উৎসবটি শুরু হওয়ার আগে পশুর আনা-নেয়া আটকে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। অনুমোদন ছাড়া সীমান্ত দিয়ে পশু পারাপার করার সময় সেগুলো জব্দ করতে শুরু করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। নেপালের সরকারও কোনরকম সহায়তা করেনি বলে জানিয়েছেন উৎসবের চেয়ারম্যান মোতিলাল কুশোয়া।
তা সত্ত্বেও নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে বারিয়ারপুরের মন্দিরে পশু আনা হতে থাকে। মঙ্গলবার ভোর থেকে ২০০ কসাই তাদের কাজকর্ম শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
এই উৎসবের চেয়ারম্যান মতিলাল কুশোয়া বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই আয়োজনের মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যের খাবার ও তাঁবু। এর পুরোটাই দান থেকে বহন করা হয়ে থাকে।
উৎসব আয়োজক কমিটির সদস্য বীরেন্দ্রা প্রাসাদ যাদব আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা এটাকে সমর্থন না দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মানুষজনের এই প্রথায় বিশ্বাস রয়েছে এবং এখানে উৎসর্গ করার জন্য তারা আসে।’
উৎসব শুরু হওয়া সত্ত্বেও প্রাণি অধিকার কর্মীরা এখনো আশা করছেন যে, তাদের বার্তা সবার কাছে পৌঁছে গেছে।
হিউম্যান সোসাইটি ইন্ডিয়া বলছে, তাদের পরিচালক আলোকপর্ণা সেনগুপ্তা ওই মন্দিরের পুরোহিতকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছেন। তবে তার আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছেন ওই মন্দিরের পুরোহিত। তবে উৎসবে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ বছর তারা কোন প্রাণি বলি দেবেন না।
এসব দেখে অধিকার কর্মীরা আমা করছেন, তাদের প্রচারণার কারণে হয়তো কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে অ্যানিম্যাল ইকুয়ালিটি ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা অমৃতা উবালে বলেন, ‘অধিকার কর্মীদের দাবিদাওয়ার ফলে সরকারের পাশাপাশি মন্দিরের কমিটিও একটা ধাক্কা খেয়েছে। ফলে গাধিমাই উৎসবে যতো প্রাণি বলি দেয়া হতো, তার সংখ্যা ধীরে-ধীরে কমে আসতে শুরু করেছে।’
আপাতত এটুকুই প্রাণি অধিকার সংস্থাগুলোর সান্ত্বনা। তবে পশু হত্যার এই উৎসব যে পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি, মঙ্গলবার দুই প্রাণির হত্যাই তার প্রমাণ।