ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কয়লার বিষাক্ত ধোঁয়া

বাঙালী কন্ঠ ডেস্কঃ যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার রাজঘাট এলাকা থেকে শুরু করে চেঙ্গুটিয়া বাজার এলাকা পর্যন্ত মহাসড়ক, নদীর পাড় ও রেলপথের পাশ দিয়েই গড়ে তোলা হয়েছে কয়লার ড্যাম্প (কয়লার স্তূপ)।
এছাড়া কয়লার স্তূপের মাঝে অনেক বসতবাড়ি ঘিরে ও কৃষি জমিতে ড্যাম্প করে রাখা হয়েছে কয়লা। কয়েক শ’ মিটার পরপর চোখে পড়ে খোলা আকাশের নিচে একেকটি কয়লার স্তূপ। যা দেখতে পাহাড়ের মতো মনে হয়। স্তূপ করা এই কয়লার বিষাক্ত ধোঁয়া ও তার গ্যাসে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নওয়াপাড়াবাসী। ভুক্তভোগী একজন বাসিন্দা মো. তৌফিক আহমেদ জানান, জ্বালানি এই কয়লার প্রভাবে রাস্তার পাশের গাছগুলো পর্যন্ত শুকিয়ে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। কয়লার স্তূপের কারণে এখন বাড়িঘরে বসবাস করা কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়িত ঘরের দরজা-জানালা, আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ কয়লার ধূলায় সয়লাব হয়ে পড়ছে। এমনকি খাবারের সাথে খেতে হচ্ছে কয়লার ধূলা মেশানো ভাত ও তরিতরকারি। তিনি ক্ষোভের সাথে আরও বলেন, কয়লার ডিপো সরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা বিভিন্ন সময় স্মারকলিপি, মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা কোনো কর্তৃপক্ষই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উপজেলার ভাঙাগেট এলাকার বাসিন্দা মো. আজিম চৌধুরী জানান, রাসায়নিক এই কয়লার বিষাক্ত ধূলা ও ধোঁয়ায় তার পরিবারের সবাই প্রায় শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত, নাকে মাক্স ব্যবহার করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রেমবাগ এলাকা থেকে রাজঘাট এলাকা পর্যন্ত এবং নওয়াপাড়া পৌরসভার তালতলাঘাট এলাকা থেকে রাজঘাট এলাকা পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশ দিয়ে যত্রতত্রভাবে রাখা হয়েছে কয়লা। নওয়াপাড়া বাজারের কয়লা ব্যাবসায়ীদের তথ্য মতে জানা যায়, মেসার্স উত্তরা ট্রেডার্স, মেসার্স নওয়াপাড়া ট্রেডার্স, মেসার্স শেখ ব্রাদার্স, মেসার্স মাহাবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স জয়েন্ট ট্রেডিং, সাহারা এন্টারপ্রাইজ, মোশারফ অ্যান্ড ব্রাদার্স, সরকার ট্রেডার্সসহ প্রায় ১৫টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এই বিপুল পরিমাণ কয়লা নওয়াপাড়া বাজারে আমদানি করে তা অন্যত্র বিক্রি করে থাকেন। আমদানী করা কয়লা প্রথমে জাহাজ থেকে নামিয়ে ভৈরব নদের পাশে রাখা হয়। পরবর্তীতে মহাসড়ক, রেলপথ ও আবাসিক এলাকায় খোলা আকাশের নিচে ড্যাম্প করে রাখা হয়। তারপর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কয়লা কিনে তা ট্রাকে লোড করে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। খোলা আকাশের নিচে রাসায়নিক এই কয়লা ড্যাম্প করায় মহাসড়ক, নদীপথ ও রেলওয়ের দু’পাশে থাকা গাছগুলো শুকিয়ে মারা যায়। নওয়াপাড়া পৌরসভার আবাসিক এলাকা ও গ্রামের মধ্যে কয়লা রাখায় দিনরাত সবসময়ই বাতাসের মাধ্যমে কয়লার ধুলা ও ধোঁয়া ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব ঘনবসতি এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। শিশু, বয়স্কসহ সব বয়সের মানুষ ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়া কয়লার পোড়া দূর্গন্ধে নওয়াপাড়ার বাতাস বিষময় হয়ে উঠেছে। মাঝে-মধ্যে কয়লার স্তূপে আগুনের কালো ধোঁয়া নির্গত হতে দেখা যায়।
সমাজের প্রভাবশালীরা এই কয়লার ব্যবসায়ের সাথে জড়িত থাকার কারণে সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও এর কোন পরিত্রাণ পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। আবাসিক এলাকায় কয়লা ড্যাম্পিং ঠেকাতে না পেরে অনেকে ঘরবাড়ি বিক্রি করে পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। কয়লার অসহনীয় যন্ত্রণার কারণে বসবাস করতে না পেরে পৈতৃক ভিটা ছেড়েছেন একজন কলেজ প্রভাষক ও তার পরিবার। বর্তমানে তিনি ভাড়া করা বাসায় বসবাস করছেন।

এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুর রহমান রিজভী বলেন, কয়লার ধোঁয়া স্বাস্থের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যত্রতত্রভাবে কয়লা রাখার জন্য প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে স্বাসকষ্ট, ফুসফুসজনিত সমস্যা নিয়ে এলাকার অনেক রোগী।
পরিবেশ অধিদপ্তরসূত্রে জানা যায়, জনবসতির দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কয়লার ডিপো করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তাছাড়া কয়লার স্তূপে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখার বিধানও রয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কয়লার বিষাক্ত ধোঁয়া

আপডেট টাইম : ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

বাঙালী কন্ঠ ডেস্কঃ যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার রাজঘাট এলাকা থেকে শুরু করে চেঙ্গুটিয়া বাজার এলাকা পর্যন্ত মহাসড়ক, নদীর পাড় ও রেলপথের পাশ দিয়েই গড়ে তোলা হয়েছে কয়লার ড্যাম্প (কয়লার স্তূপ)।
এছাড়া কয়লার স্তূপের মাঝে অনেক বসতবাড়ি ঘিরে ও কৃষি জমিতে ড্যাম্প করে রাখা হয়েছে কয়লা। কয়েক শ’ মিটার পরপর চোখে পড়ে খোলা আকাশের নিচে একেকটি কয়লার স্তূপ। যা দেখতে পাহাড়ের মতো মনে হয়। স্তূপ করা এই কয়লার বিষাক্ত ধোঁয়া ও তার গ্যাসে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নওয়াপাড়াবাসী। ভুক্তভোগী একজন বাসিন্দা মো. তৌফিক আহমেদ জানান, জ্বালানি এই কয়লার প্রভাবে রাস্তার পাশের গাছগুলো পর্যন্ত শুকিয়ে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। কয়লার স্তূপের কারণে এখন বাড়িঘরে বসবাস করা কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়িত ঘরের দরজা-জানালা, আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ কয়লার ধূলায় সয়লাব হয়ে পড়ছে। এমনকি খাবারের সাথে খেতে হচ্ছে কয়লার ধূলা মেশানো ভাত ও তরিতরকারি। তিনি ক্ষোভের সাথে আরও বলেন, কয়লার ডিপো সরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা বিভিন্ন সময় স্মারকলিপি, মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা কোনো কর্তৃপক্ষই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উপজেলার ভাঙাগেট এলাকার বাসিন্দা মো. আজিম চৌধুরী জানান, রাসায়নিক এই কয়লার বিষাক্ত ধূলা ও ধোঁয়ায় তার পরিবারের সবাই প্রায় শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত, নাকে মাক্স ব্যবহার করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রেমবাগ এলাকা থেকে রাজঘাট এলাকা পর্যন্ত এবং নওয়াপাড়া পৌরসভার তালতলাঘাট এলাকা থেকে রাজঘাট এলাকা পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশ দিয়ে যত্রতত্রভাবে রাখা হয়েছে কয়লা। নওয়াপাড়া বাজারের কয়লা ব্যাবসায়ীদের তথ্য মতে জানা যায়, মেসার্স উত্তরা ট্রেডার্স, মেসার্স নওয়াপাড়া ট্রেডার্স, মেসার্স শেখ ব্রাদার্স, মেসার্স মাহাবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স জয়েন্ট ট্রেডিং, সাহারা এন্টারপ্রাইজ, মোশারফ অ্যান্ড ব্রাদার্স, সরকার ট্রেডার্সসহ প্রায় ১৫টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এই বিপুল পরিমাণ কয়লা নওয়াপাড়া বাজারে আমদানি করে তা অন্যত্র বিক্রি করে থাকেন। আমদানী করা কয়লা প্রথমে জাহাজ থেকে নামিয়ে ভৈরব নদের পাশে রাখা হয়। পরবর্তীতে মহাসড়ক, রেলপথ ও আবাসিক এলাকায় খোলা আকাশের নিচে ড্যাম্প করে রাখা হয়। তারপর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কয়লা কিনে তা ট্রাকে লোড করে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। খোলা আকাশের নিচে রাসায়নিক এই কয়লা ড্যাম্প করায় মহাসড়ক, নদীপথ ও রেলওয়ের দু’পাশে থাকা গাছগুলো শুকিয়ে মারা যায়। নওয়াপাড়া পৌরসভার আবাসিক এলাকা ও গ্রামের মধ্যে কয়লা রাখায় দিনরাত সবসময়ই বাতাসের মাধ্যমে কয়লার ধুলা ও ধোঁয়া ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব ঘনবসতি এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। শিশু, বয়স্কসহ সব বয়সের মানুষ ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়া কয়লার পোড়া দূর্গন্ধে নওয়াপাড়ার বাতাস বিষময় হয়ে উঠেছে। মাঝে-মধ্যে কয়লার স্তূপে আগুনের কালো ধোঁয়া নির্গত হতে দেখা যায়।
সমাজের প্রভাবশালীরা এই কয়লার ব্যবসায়ের সাথে জড়িত থাকার কারণে সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও এর কোন পরিত্রাণ পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। আবাসিক এলাকায় কয়লা ড্যাম্পিং ঠেকাতে না পেরে অনেকে ঘরবাড়ি বিক্রি করে পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। কয়লার অসহনীয় যন্ত্রণার কারণে বসবাস করতে না পেরে পৈতৃক ভিটা ছেড়েছেন একজন কলেজ প্রভাষক ও তার পরিবার। বর্তমানে তিনি ভাড়া করা বাসায় বসবাস করছেন।

এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুর রহমান রিজভী বলেন, কয়লার ধোঁয়া স্বাস্থের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যত্রতত্রভাবে কয়লা রাখার জন্য প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে স্বাসকষ্ট, ফুসফুসজনিত সমস্যা নিয়ে এলাকার অনেক রোগী।
পরিবেশ অধিদপ্তরসূত্রে জানা যায়, জনবসতির দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কয়লার ডিপো করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তাছাড়া কয়লার স্তূপে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখার বিধানও রয়েছে।