বাঙালী কন্ঠ ডেস্কঃ চাঁদপুর জেলায় দুইটি সেচ প্রকল্পে প্রতিবছরই মৌসুমি শাকসবজির আবাদ করা হয়। এবার ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে কিছুটা ক্ষতি হলেও জেলায় ক্ষীরা আবাদ হয়েছে ৪৮৫ হেক্টর জমিতে।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে নয় হাজার ৯শ ৮৮ হেক্টর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষীরা আবাদ হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলায়। সেচ প্রকল্পের বাইরের জমিতে পলিমাটির কারণে বীজ ও পরিচর্যা ছাড়া অন্য কোনো খরচ না হওয়ায় কৃষকরা ক্ষীরা আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। মৌসুমের শেষ মুহূর্তেও তারা ক্ষীরা বিক্রি করে এবছর খুবই লাভজনক অবস্থায় রয়েছেন।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ক্ষীরা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৮৫ হেক্টর। এর মধ্যে জেলা সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১৪০ হেক্টর, মতলব উত্তর উপজেলায় ১২০ হেক্টর, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৮০ হেক্টর। এছাড়াও অন্যান্য উপজেলায় ১০-২০ হেক্টর জমিতে ক্ষীরা আবাদ করা হয়েছে।
সরেজমিন চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি, শাহমাহমুদপুর, বাগাদি, বালিয়া, ইব্রাহীমপুর, লক্ষ্মীপুর, হানারচর, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে ব্যাপকভাবে ক্ষীরা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে মেঘনা নদী উপকূলীয় এলাকায় কৃষকরা আগাম ক্ষীরা আবাদ করে বেশ লাভজনক অবস্থায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার আশিকাটি ও শাহমামুদপুর ও বাগাদী ইউনিয়নের কৃষকরা তাদের ক্ষীরা বেশ কয়েকবার বাজারে বিক্রি করেছেন।
মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল, গজরা ইউনিয়নে এবছর ক্ষীরা আবাদ নেমেছেন কৃষকরা। তারা প্রতিবছরই আগাম ক্ষীরা আবাদ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করে থাকেন। একেক জমিতে একাধিকবারও ক্ষীরা আবাদ করেন জেলার কৃষকরা।
মতলব উত্তর উপজেলার গজরা এলাকার কৃষক জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এবার ৪০ শতাংশ জমিতে ক্ষীরা আবাদ করেছি। ঘূর্ণিঝড়ে কিছুটা ক্ষতি হওয়ার কারণে ফলন একটু দেরি হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে এবার ১০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
একই এলাকার কৃষাণী নুরজাহান বেগম বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে জমিতে ক্ষীরা আবাদ করছি। এবারও প্রায় এক হেক্টর জমিতে ক্ষীরা আবাদ করেছি। পরিবারের সবাই জমিতে পরিচর্যা করেন। তাই আমাদের খরচ কম হয়েছে।
তিনি আশাবাদী, এবছর তিনি কমপক্ষে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাভবান হবেন। মৌসুমের শুরুতে তিনি প্রতিকেজি ক্ষীরা বিক্রি করেছেন ৪০-৬০ টাকা কেজি দরে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের নিজগাছতলা এলাকার কৃষক বিল্লাল গাজী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শুধুমাত্র ক্ষীরা নয়, একই জমিতে ভুট্টা ও আখের আবাদ করি। তবে ক্ষীরা খুব কম সময়ে ভালো ফলন হওয়ার কারণে এলাকার অনেকেই আবাদ শুরু করেছেন। এবছর বেশ ভালো ক্ষীরা হয়েছে। দামও ভালো পেয়েছি। শুরুতে ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এখন শেষ সময়ে ক্ষীরা সাইজে ছোট তাই দামও একটু কম।
সদরের লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক ইউসুফ গাজী বলেন, এবছর আমি ৩০ শতাংশ জমিতে ক্ষীরা ও সবজি চাষ করেছি। সবজি ভালো হয়েছে। একটু দেরিতে আবাদ করার কারণে ফলনও দেরিতে এসেছে। গতবছর ক্ষীরা আবাদ করে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এ বছর ক্ষীরাগুলো বড় হলে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করবো। তিনি আশা করছেন এবারের ক্ষীরা বিক্রি করে লাভবান হবেন।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, চাঁদপুরে গত ২০ বছর ধরে কৃষকদের কাছে ক্ষীরা আবাদ খুবই জনপ্রিয়। এবছর প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন। পুরো জেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নয় হাজার ৯৮৮ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আব্দুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, এই বছর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র কারণে পুরো জেলায় প্রায় ১০-১৫ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে বড় ধরনের ক্ষতি না হওয়ায় কৃষকদের পরিচর্যায় সব ফসল আবার বেড়ে উঠেছে। অন্যান্য ফসলের ন্যায় ক্ষীরা আবাদও ক্ষতিরমুখে পড়ে। তারপরেও যে পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে তাতে কৃষকরা লাভজনক অবস্থায় রয়েছেন। কারণ বাজারে ক্ষীরার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দামও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে।