বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও অবৈধ আগ্রাসনের প্রতিবাদে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপির তিন সংগঠনের প্রতিনিধিদল। আজ রবিবার দুপুরে প্রতিনিধিদলের ছয় সদস্য বারিধারায় হাইকমিশনে গিয়ে স্মারকলিপিটি জমা দেয়।
নয়াপল্টন থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে পদযাত্রা করে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন দুপুর পৌনে ১টার দিকে রামপুরা ব্রিজে পৌঁছালে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিরাপত্তার স্বার্থে মিছিলকে সামনে যেতে দেওয়া হবে না। শুধু প্রতিনিধিরা যেতে পারবেন স্মারকলিপি দিতে।
এরপর স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য বিএনপির তিন সংগঠনের ছয় প্রতিনিধিকে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের প্রতিনিধিরা ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্দেশে রওনা হন। ছয় প্রতিনিধি হলেন যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির। দুপুর ১টার দিকে প্রতিনিধিদল গুলশানে হাইকমিশনে পৌঁছালে তাদের স্মারকলিপিটি জমা নেওয়া হয়।
যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘যারা আগরতলায় বাংলাদেশের হাইকমিশনে ভাঙচুর করেছে এবং পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা আমরা আগেই জানিয়েছি। ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণার প্রতিবাদে আজকে আমাদের স্মারকলিপি কর্মসূচি ছিল। আজকে আমরা ভারতীয় হাইকমিশনের কাছে আমাদের প্রতিবাদের স্মারকলিপি পৌঁছে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য খুবই পরিষ্কার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো কিছু হলে বিএনপিসহ সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘‘সার্বভৌমত্বের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।” তার এই কথার প্রতিধ্বনিতে আজকে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল রাজপথে করেছে। আমাদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল। আমরা কোনো প্রকার সন্ত্রাসে বিশ্বাসী নই। বাংলাদেশের মুসলমান শান্তিপ্রিয় মুসলমান। আমরা কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভেতর নেই।’
তিনি বলেন, ‘৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশে ইসকন যেভাবে একজন আইনজীবীকে হত্যা করেছেন, তা খুবই নিন্দনীয়। তবে এই ঘটনার পরও বাংলাদেশের মানুষ সর্বোচ্চ ধৈর্যশক্তি দেখিয়েছে। কিন্তু ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলমানদের নির্যাতন করা হচ্ছে। এই উগ্রবাদীদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমান্তে যারা হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাই।’
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এই মর্মে গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করছি— দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভাবনীয় তুমুল আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আপনার দেশে পালিয়ে যাওয়ার পর আপনারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। আপনার দেশের অতি উগ্রবাদী নেতারা এবং বিশেষ করে কতিপয় সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়া বাংলাদেশের এই গণশত্রু হাসিনাকে পুনরায় পুনর্বাসন করার চেষ্টা করে চলেছে। এতে স্পষ্ট হয়, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের বন্ধুত্ব ছিল হাসিনার সঙ্গে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়।’
স্মারকলিপিতে আর বলা হয়, হাসিনা এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে উঠেছে। একদিকে তিনি বাংলাদেশের ভিন্ন দলমতের মানুষদের ঘরবাড়ি সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুকুম দিচ্ছেন। অপরদিকে যারা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাদেরকে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছেন। বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হলেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে আপনার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রাপ্ত বিবরণগুলো চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে— পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে বিক্ষোভকারীদের আক্রমণ করার সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায়, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে, তারা জাতীয় পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তিরও ক্ষতি করে। এমন ন্যাক্কারজনক বিস্ময়কর ঘটনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেও আপনার সরকারের নীরবতায় বাংলাদেশের জনগণ হতাশ। আমরা পরস্পরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হবে সমতা, পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এবং সম্মান প্রদর্শনের ওপর।’
স্মারক লিপিতে বলা হয়, ‘‘সার্বভৌম কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল। ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবজ্ঞাস্বরূপ বলে আমরা চাই অপপ্রচার, অপতথ্য বন্ধ করতে ভারতীয় সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জাতিসংঘের সনদের নীতির ওপর ভিত্তি করে ‘সকল সদস্যের সার্বভৌম সমতার’ ভিত্তিতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই স্মারকলিপির মাধ্যমে আপনাকে অবগত করছি এবং অনুরোধ জানাচ্ছি, জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থান ও মতামত ভারতীয় সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”