রিজার্ভ চুরির ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান গোপনীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করেছেন। এর ফলে সরকার যথাসময়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেনি।
বুধবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ সব কথা বলেন।
আর্থিক নিয়ে বক্তৃতা নিয়ে দিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আর্থিক খাত সম্বন্ধে আমার বক্তব্য পেশ করার আগে কিছুদিন আগে সংঘটিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়টি সম্বন্ধে সামান্য কিছু বক্তব্য রাখতে চাই। বিষয়টি গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সংঘটিত হয় এবং এর অকুস্থল ছিল ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক, নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, ম্যানিলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) এবং শ্রীলঙ্কার শালিকা ফাউন্ডেশন।
দেখা যাচ্ছে যে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে স্রেফ জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০০ কোটি মার্কিন ডলার পাচারের ব্যবস্থা করা হয়। শ্রীলঙ্কা ব্যাংকে এই পাচার কর্মটি সাধিত হতে পারেনি যেহেতু যার নামে টাকাটি প্রেরণ করা হয় সেই নামটির বানানে ভুল ছিল। নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ বড় ধরনের এসব পেমেন্ট অর্ডার পেয়ে খানিকটা সন্দিগ্ধ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগের প্রচেষ্টা নেয়।
সাপ্তাহিক ছুটি দুই দেশে বিভিন্ন হওয়ার ফলে এবং ম্যানিলায় একটি স্থানীয় ছুটি তার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ফলে এই বিষয়টি যথাসময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। এই বিলম্বের ফলে প্রায় ৮০ কোটি মার্কিন ডলার ম্যানিলায় সন্দেহজনক গ্রহীতার কাছে পাচার হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে ম্যানিলায় মার্চ মাসে সিনেট শুনানি অনুষ্ঠিত হয় এবং আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে এটি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে।’
মুহিত বলেন, ‘তদানীন্তন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিষয়টি গোপনীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়ার ফলে সরকার এ সম্বন্ধে যথাসময়ে অবহিত হতে পারেনি। সরকার বিষয়টি সম্বন্ধে অবহিত হওয়ার পরই বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। সেই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান ১৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে পদত্যাগ করেন এবং সেই জায়গায় অবসরপ্রাপ্ত অর্থসচিব জনাব ফজলে কবির, এনডিসি ২০ মার্চ, ২০১৬ তারিখে গভর্নর পদে যোগদান করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় এই বিষয়টি বিবেচনার জন্য ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে আরো দুজন সদস্যসহ একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০ এপ্রিল ২০১৬ তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করে এবং ৩০ মে তারিখে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এই বিষয়ে বর্তমান সংসদ অধিবেশনকালে জুনের মাঝামাঝি সময়ে আমি ৩০০ বিধিতে একটি বিবৃতি প্রদান করব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় ভুল নাম প্রদানের ফলে আমরা ইতিমধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেয়েছি। জনশ্রুতিতে প্রকাশ যে, ফিলিপাইন সরকার আরো প্রায় ৮-১০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে। এই টাকাটি আমাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন কমিটির প্রতিবেদন অনুসরণ করে ফিলিপাইন এবং নিউইয়র্কের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।
ঢাকা, নিউইয়র্ক এবং ম্যানিলার তিনটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এই বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন আন্তর্জাতিক টাকা লেনদেনের সর্ববৃহৎ মাধ্যম সুইফট কোম্পানি।’