ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বাম রাজনীতি থেকে ‘অগ্নিকন্যা’, নৌকায় উঠে ক্ষমতায়, আ. লীগের দুঃসময়ে প্রস্থান ১০০ রানের লিড হলেই চলবে দক্ষিণ আফ্রিকার লেবানন থেকে দেশে ফিরেছেন ৫৪ বাংলাদেশি মৃত্যুর পর মরদেহ কী হবে, বলে গেছেন মনি কিশোর দুর্নীতি দমাতে ডিজিটাইজেশনে গুরুত্ব প্রধান উপদেষ্টার হাসিনার পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা ‘মীমাংসিত’ ইস্যু, নয়া বিতর্ক সৃষ্টি আর নয় : প্রেসিডেন্ট বঙ্গভবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজের পথ দেখুন : রাষ্ট্রপতিকে হাসনাত জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস, প্রধান নির্বাহী স্নিগ্ধ শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে মতিউর রহমান চৌধুরীকে যা বলেছেন রাষ্ট্রপতি জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ছিল জাতীয় পার্টি, দাবি জিএম কাদেরের

বৃষ্টির জলে ডুবেছে মেয়র নাছিরের উন্নয়ন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের দায়িত্বগ্রহণের তিন বছর শুরু হচ্ছে আগামীকাল বুধবার থেকে। গত দুই বছরে বিলবোর্ড উচ্ছেদ, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, আলোকায়ন, শিক্ষাসহ নানাক্ষেত্রে কমবেশি সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া এই মেয়রের সব সাফল্য এখন জলেই ডুবছে। যদিও সফলতা-ব্যর্থতা বিচারের জন্য দুই বছর সময় যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করছেন চট্টগ্রামের মেয়র।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচিত হয়ে ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে শপথ নিয়ে ২৬ জুলাই চসিকের দায়িত্ব নেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। নির্বাচনী ইশতেহারে চট্টগ্রামকে ‘জলাবদ্ধতামুক্ত স্বপ্নের মেগাসিটি’ হিসেবে গড়ে তোলাসহ ৩৬ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নাছির। এরমধ্যে বেশকিছু দফা নিয়ে সফলতা দেখালেও জলাবদ্ধতা নিসরনে ব্যর্থ হওয়ায় জলে গেছে তার সব সাফল্য। এমনকি জলাবদ্ধতা সংকট সমাধানে অনেকটা নাকাল হয়ে শেষ পর্যন্ত সেটি সমাধানের পুরো ভার চসিকের নয় বলেও দাবি করেছেন নাছির।

দুই বছরের সাফল্য ব্যর্থতা সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সাফল্যের কথা বললে নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। আমার সন্তুষ্টি নির্ভর করছে নগরবাসীর উপর। নগরবাসী যদি সন্তুষ্ট থাকে তাহলে আমিও সন্তুষ্ট। নগরবাসীর মানসিকতা আমার মাধ্যমে রিফ্লেক্ট করবে। জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। প্রতিদিন জোয়ারের পানি ঢুকে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এ কারণে ভালো আছি সেটা বলতে পারিনা।’

কী পেয়েছেন নাছির:

মেয়র নাছির দায়িত্ব নেয়ার একমাস পর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে চসিকের জন্য এক হাজার ৬৩২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। এরমধ্যে ৯৭২ কোটি টাকা সরকারি অনুদান প্রত্যাশা করা হলেও সরকারের কাছ থেকে চসিক পেয়েছে মাত্র ২২৮ কোটি ৮০ লাখ ৫৯ হাজার ২৯৫ টাকা। যা প্রত্যাশার মাত্র ২৩ শতাংশ। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প ও বিশেষ বরাদ্দ প্রত্যাশা ছিল ৯৮৫ কোটি ১০ লাখ। এর বিপরীতে চসিক পেয়েছে মাত্র ১৯৪ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মাত্র। বাকী যেসব অর্থ পাওয়া গেছে সেগুলো বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও খাত থেকে।

কী করেছেন নাছির:

জলাবদ্ধতা নিরসন: নাছিরের নির্বাচনী ইশতেহারের এক নম্বর প্রতিশ্রুতি ছিলো বন্দর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন। দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘোষিত প্রথম বাজেটে জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দও রেখেছিলেন। কিন্তু অর্থ সংকটে তা ব্যয় করা যায়নি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ২৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এরমধ্যে ১৭ কোটি ৫৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ১১৬টি খাল-শাখা খাল থেকে ১৭ হাজার ৯৩৬ ঘনমিটার আবর্জনা ও মাটি উত্তোলন করা হয়। এছাড়া ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নগরের বিভিন্ন নালা নর্দমা থেকে আবর্জনা ও মাটি অপসারণ করা হয়। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪১টি ওয়ার্ডের খাল ও নালা নর্দমা থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার ৯০৭ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হয়।

বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খালখননে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৩২৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বিপরীতে তিন বছরে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৬৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে নতুন খাল খনন প্রকল্প শুরুই করতে পারেনি চসিক। সবমিলিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের স্বপ্ন অধরা থেকে গেছে। নাগরকিরা প্রতিনিয়ত অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শুধুমাত্র চলতি মাসেই পাঁচ দফা পানির নিচে তলিয়ে গেছে বন্দর নগরী।

মেয়রের কথা: মেয়র নাছির বলেন, জলাবদ্ধতার পেছনে অনেক কারণ। যত দিন যাচ্ছে, ততো নতুন নতুন কারণ যোগ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আছে। শহরের জলাধারগুলো আগেই নষ্ট করা হয়েছে। আগে যেখানে ৭০/৮০ শতাংশ পানি জলাধারসহ নানাভাবে সংরক্ষণ হতো এখন সেটা হয়না। ড্রেনেজ ব্যবস্থা যথোপযোগী করে গড়ে তোলা হয়নি। স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা নেই। সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বাড়ছে। জোয়ারের পানি শহরের সড়ক পর্যন্ত চলে আসছে। অমাবস্যা পূর্ণিমার সময় পাহাড়ি ঢল, কাপ্তাই হূদের পানি, আর বৃষ্টির পানি মিলিয়ে শহর ডুবে যাচ্ছে।

তাদের দাবি, চসিকের সব নতুন প্রকল্পগুলোতে ড্রেনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। খালের মাটি উত্তোলন চলমান আছে। খালি আবর্জনা না ফেলতে নাগরিকদের সচেতন করা হচ্ছে। খালগুলোর ডিজিটাল সার্ভে শেষ হলে অবৈধ দখলদারদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চায়না পাওয়ারের সাথে প্রস্তাবিত সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতা থাকবেনা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বাম রাজনীতি থেকে ‘অগ্নিকন্যা’, নৌকায় উঠে ক্ষমতায়, আ. লীগের দুঃসময়ে প্রস্থান

বৃষ্টির জলে ডুবেছে মেয়র নাছিরের উন্নয়ন

আপডেট টাইম : ০৫:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের দায়িত্বগ্রহণের তিন বছর শুরু হচ্ছে আগামীকাল বুধবার থেকে। গত দুই বছরে বিলবোর্ড উচ্ছেদ, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, আলোকায়ন, শিক্ষাসহ নানাক্ষেত্রে কমবেশি সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া এই মেয়রের সব সাফল্য এখন জলেই ডুবছে। যদিও সফলতা-ব্যর্থতা বিচারের জন্য দুই বছর সময় যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করছেন চট্টগ্রামের মেয়র।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচিত হয়ে ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে শপথ নিয়ে ২৬ জুলাই চসিকের দায়িত্ব নেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। নির্বাচনী ইশতেহারে চট্টগ্রামকে ‘জলাবদ্ধতামুক্ত স্বপ্নের মেগাসিটি’ হিসেবে গড়ে তোলাসহ ৩৬ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নাছির। এরমধ্যে বেশকিছু দফা নিয়ে সফলতা দেখালেও জলাবদ্ধতা নিসরনে ব্যর্থ হওয়ায় জলে গেছে তার সব সাফল্য। এমনকি জলাবদ্ধতা সংকট সমাধানে অনেকটা নাকাল হয়ে শেষ পর্যন্ত সেটি সমাধানের পুরো ভার চসিকের নয় বলেও দাবি করেছেন নাছির।

দুই বছরের সাফল্য ব্যর্থতা সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সাফল্যের কথা বললে নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। আমার সন্তুষ্টি নির্ভর করছে নগরবাসীর উপর। নগরবাসী যদি সন্তুষ্ট থাকে তাহলে আমিও সন্তুষ্ট। নগরবাসীর মানসিকতা আমার মাধ্যমে রিফ্লেক্ট করবে। জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। প্রতিদিন জোয়ারের পানি ঢুকে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এ কারণে ভালো আছি সেটা বলতে পারিনা।’

কী পেয়েছেন নাছির:

মেয়র নাছির দায়িত্ব নেয়ার একমাস পর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে চসিকের জন্য এক হাজার ৬৩২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। এরমধ্যে ৯৭২ কোটি টাকা সরকারি অনুদান প্রত্যাশা করা হলেও সরকারের কাছ থেকে চসিক পেয়েছে মাত্র ২২৮ কোটি ৮০ লাখ ৫৯ হাজার ২৯৫ টাকা। যা প্রত্যাশার মাত্র ২৩ শতাংশ। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প ও বিশেষ বরাদ্দ প্রত্যাশা ছিল ৯৮৫ কোটি ১০ লাখ। এর বিপরীতে চসিক পেয়েছে মাত্র ১৯৪ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মাত্র। বাকী যেসব অর্থ পাওয়া গেছে সেগুলো বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও খাত থেকে।

কী করেছেন নাছির:

জলাবদ্ধতা নিরসন: নাছিরের নির্বাচনী ইশতেহারের এক নম্বর প্রতিশ্রুতি ছিলো বন্দর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন। দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘোষিত প্রথম বাজেটে জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দও রেখেছিলেন। কিন্তু অর্থ সংকটে তা ব্যয় করা যায়নি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ২৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এরমধ্যে ১৭ কোটি ৫৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ১১৬টি খাল-শাখা খাল থেকে ১৭ হাজার ৯৩৬ ঘনমিটার আবর্জনা ও মাটি উত্তোলন করা হয়। এছাড়া ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নগরের বিভিন্ন নালা নর্দমা থেকে আবর্জনা ও মাটি অপসারণ করা হয়। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪১টি ওয়ার্ডের খাল ও নালা নর্দমা থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার ৯০৭ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হয়।

বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খালখননে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৩২৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বিপরীতে তিন বছরে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৬৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে নতুন খাল খনন প্রকল্প শুরুই করতে পারেনি চসিক। সবমিলিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের স্বপ্ন অধরা থেকে গেছে। নাগরকিরা প্রতিনিয়ত অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শুধুমাত্র চলতি মাসেই পাঁচ দফা পানির নিচে তলিয়ে গেছে বন্দর নগরী।

মেয়রের কথা: মেয়র নাছির বলেন, জলাবদ্ধতার পেছনে অনেক কারণ। যত দিন যাচ্ছে, ততো নতুন নতুন কারণ যোগ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আছে। শহরের জলাধারগুলো আগেই নষ্ট করা হয়েছে। আগে যেখানে ৭০/৮০ শতাংশ পানি জলাধারসহ নানাভাবে সংরক্ষণ হতো এখন সেটা হয়না। ড্রেনেজ ব্যবস্থা যথোপযোগী করে গড়ে তোলা হয়নি। স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা নেই। সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বাড়ছে। জোয়ারের পানি শহরের সড়ক পর্যন্ত চলে আসছে। অমাবস্যা পূর্ণিমার সময় পাহাড়ি ঢল, কাপ্তাই হূদের পানি, আর বৃষ্টির পানি মিলিয়ে শহর ডুবে যাচ্ছে।

তাদের দাবি, চসিকের সব নতুন প্রকল্পগুলোতে ড্রেনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। খালের মাটি উত্তোলন চলমান আছে। খালি আবর্জনা না ফেলতে নাগরিকদের সচেতন করা হচ্ছে। খালগুলোর ডিজিটাল সার্ভে শেষ হলে অবৈধ দখলদারদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চায়না পাওয়ারের সাথে প্রস্তাবিত সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতা থাকবেনা।