ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আহরণে। চলতি অর্থবছরের চার মাসেও গতি ফেরেনি রাজস্ব আহরণে। প্রতি মাসেই বাড়ছে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ। এতে করে বছর শেষে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ বড় হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থনীতিবিদরা জানান, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির কারণে বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া বাড়বে। তখন বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে করে বাধাগ্রস্ত হতে পারে বেসরকারি খাত। বাড়বে মূল্যস্ফীতি, যা প্রকারান্তরে মানুষের জীবনযাপনে দুর্ভোগ বয়ে আনবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব আহরণে ঘাটতি হয়েছে ৩০ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা টাকা। এ সময়ে এক লাখ ৩২ হাজার ১১২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ এক হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে, এগুলো শেষ হলে রাজস্ব আহরণে গতি বাড়বে।
জানা গেছে, জুলাই-অক্টোবর সময়ে আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর কোনোটিতেই খাতওয়ারি লক্ষ্য পূরণ হয়নি। সবচেয়ে বেশি ১২ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকার ঘাটতি আয়কর খাতে। এ খাতে ৪৫ হাজার ২৪২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা।
আমদানি খাতে ৩৯ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। এ খাতে ঘাটতি প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভ্যাট খাতে ঘাটতি ছিল ১১ হাজার ১০২ কোটি টাকা। এ খাতে ৪৭ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা।
নভেম্বরে ভ্যাট সপ্তাহ, মিলবে ২৪ ধরনের সেবা সেবামুখী ও জনবান্ধব ভ্যাট বা মূসক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সারাদেশে আগামী ১০ ডিসেম্বর ভ্যাট দিবস পালন করা হবে। একই সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ভ্যাট সপ্তাহ পালন করবে এনবিআর। ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে ব্যবসায়ী ও সেবা গ্রহীতারা ২৪ ধরনের সেবা পাবেন নিকটস্থ ভ্যাট কমিশনারেটে। এর মধ্যে রয়েছে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধন, প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধের আবেদন তৈরি করে দেওয়া, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন বাতিলের আবেদন প্রস্তুত করে দেওয়া, ভ্যাট দাখিলপত্র অনলাইনে দাখিল, ভ্যাট দাখিলপত্রে সংশোধন করার আবেদন, কোনো ক্রয়ের ক্ষেত্রে রেয়াত পাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে।
কর অফিসেই মিলছে করমেলার সেবা আয়কর তথ্য সেবা মাস হিসেবে আয়কর মেলার পরিবর্তে অফিসে মিলছে করমেলার সেবা। এনবিআরের উদ্যোগে নভেম্বর মাসজুড়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের ৪১ করাঞ্চলের ৮৬৯টি সার্কেলে অফিস চলাকালীন নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যাবে করসেবা। চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
কর অঞ্চলগুলোতে যেসব সেবা পাওয়া যাচ্ছে- প্রতিটি অফিসে রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্পডেস্ক স্থাপন করে রিটার্ন গ্রহণ করা হচ্ছে। অনলাইনে কীভাবে রিটার্ন দাখিল করা যায়, সে বিষয়টি হাতেকলমে দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করলে কর সার্টিফিকেটের জন্য অফিস যেতে হবে না। সব কর কমিশনার সেবাকেন্দ্রে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। কর অঞ্চল-৪ ও কর অঞ্চল-১৬ এর ব্যবস্থাপনায় সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, অনলাইন রিটার্ন রেজিস্ট্রেশন, অনলাইন রিটার্ন দাখিল সুবিধা ও হেল্পডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে ৩-১৮ নভেম্বর পর্যন্ত কর তথ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। কর অঞ্চল-১১ এর ব্যবস্থাপনায় ১৮-১৯ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে করসেবা দেওয়া হবে।