বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বিধি-বিধান সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে এবার বড় পরিসরে প্রশিক্ষণের আয়োজনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ প্রশিক্ষণে যুক্ত করা হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে সর্বত্র অবদান রাখা মাঠ পর্যায়ের নীতিনির্ধারক জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং ইসির মাঠ কর্মকর্তারা। চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এ প্রশিক্ষণের আয়োজনে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ প্রশিক্ষণ দুই দিনের। তফসিল ঘোষণা আগে এটাই দৃশ্যমান জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৃহৎ প্রস্তুতির শোডাউন।
এর আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সম্পর্কে ধারণা দিতে সীমিত পরিসরে ট্রেনিংয়ের আয়োজন করে ইসি। এ ট্রেনিংয়ে শুধু ইসির জেলা, উপজেলা ও মাঠ কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছিলেন।
নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন পরিচালনায় কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের থেকে রিটানিং অফিসার করা হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপ্তি অনেক বড়। কারণ এ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকারের পরিবর্তন হয়ে থাকে। নির্বাচনের এসব প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ইসির ইমেজ সংকট দেখা দেয়। তাই নির্বাচনের বিধি-বিধান কিংবা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২, আচরণবিধিমালা এবং প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা, গ্রহণ ও বাতিলের সম্পর্কে অবগত রাখতে এই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সম্পর্কেও তাদের ধারণা দেবে ইসি।
একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে কারা রিটানিং কর্মকর্তা হবেন এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। তবে নির্বাচন পরিচালনায় কমিশন যাদের নিয়োগ দেন সেটা মাথায় রেখে মাঠ পর্যায়ের ডিসি, ইউএনও, নির্বাহী বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং কমিশনের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ প্রশিক্ষণে সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে বিধি-বিধান এবং করণীয় বিষয়ে তাদের প্রাকটিক্যাল ধারণা দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তফসিল ষোঘণা হওয়ার পর যাদের রিটার্নি ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের পুনরায় ওই বিষয় সম্পর্কে আরেক দফা ট্রেনিং করানো হবে।
দুই দফায় ট্রেনিংয়ের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের বিধি-বিধান নিয়ে চর্চা না থাকায় অনেক সময় নির্বাচন পরিচালনায় থাকা কর্মকর্তারা করণিক ভুল করে বসেন। এমনকি সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে কালক্ষেপণ করেন। আসন্ন এই নির্বাচনে এসব জটিল এবং ছোটোখাটো ত্রুটিগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন না হতে হয় এর জন্য এ আয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন নির্বাচন কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত করতে বাধার সম্মুখীন না হতে হয় সেজন্য নির্বাচনের অন্য অনুষঙ্গগুলো গুছিয়ে রাখতে চাচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থা ইসি। এরই মধ্যে এই নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা এড়াতে এ বছর তালিকা হালনাগাদ করা থেকে বিরত থেকেছে কমিশন। বিদ্যমান ভোটার তালিকায় নির্বাচন হবে। এখন পর্যন্ত ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪০ লাখের মতো। একইভাবে ভোট কেন্দ্রের তালিকাও চূড়ান্ত করে এনেছে ইসি। গত জাতীয় সংসদের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজারের মতো কেন্দ্র বাড়ছে। আগে কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজারের বেশি।
একইভাবে এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে কি হবে না এ সিদ্ধান্তে না পৌঁছালেও এরই মধ্যে ইভিএমের ট্রেনিং শেষ করেছে। এখন আরপিও, সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিমালা ও সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সম্পর্কে মাঠ কর্মকর্তাদের ট্রেনিং দিতে উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। কারণ আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর অর্থাৎ ১৫ থেকে ২১ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। কারণ ডিসেম্বরের ২৬ অথবা ২৭ তারিখে এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।