আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠিক কখন হবে তার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকলেও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে সংসদ-সদস্য পদে বিভিন্ন দলের আগ্রহী প্রার্থীরা মাঠে কাজ করছেন। এ আসনে সর্বশেষ সংসদ-সদস্য ছিলেন সাবেক এমপি প্রয়াত রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে কখনো বিনা ভোটে, কখনো ‘রাতের ভোটে’ জোটের প্রার্থী হিসাবে তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এ আসন থেকে দুই মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হন। বিএনপির মনোনয়নেও একবার নির্বাচনি বৈতরণী পার হন বিতর্কিত নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
তবে বিগত তিন মেয়াদে সারা দেশের মতো এখানকার ভোটাররাও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। আগামীতে ভোট হবে এবং এই ভোটে যোগ্য প্রার্থী তারা বেছে নিতে পারবেন-এমন প্রত্যাশায় বুক বেঁধে আছেন তারা।চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ফটিকছড়ি সর্ববৃহৎ। দুটি উপজেলা ফটিকছড়ি ও ভূজপুর নিয়ে এই সংসদীয় আসন গঠিত।
এক সময়ে সন্ত্রাসের জনপদ হিসাবে পরিচিত এই আসনে বেশির ভাগ সময়ই আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ-সদস্য ছিলেন। বিগত তিন মেয়াদে জোটের কথিত প্রার্থী হিসাবে বিতর্কিত নির্বাচনের এমপি ছিলেন তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তিনি নিজেও এখানে পেশিশক্তি প্রয়োগ ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাট চালিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।পাঁচ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর নতুন বাংলাদেশের নতুন নির্বাচনে পতিত আওয়ামী লীগের কেউ অংশ নিতে পারবেন বলে মনে করেন না সাধারণ মানুষ ও রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।
তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিসহ বিভিন্ন দলের আগ্রহী প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর এই প্রস্তুতিতে এগিয়ে আছে বিএনপি ও জামায়াত।বিএনপি থেকে এই আসনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী মনোনয়নপ্রত্যাশী। কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকলেও এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছেন দীর্ঘদিন থেকে। কেন্দ্রের সুদৃষ্টি, ক্লিন ইমেজসহ নানা কারণে এ আসন থেকে তিনিই বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আসন বিন্যাসে কোনো মেরুকরণ থাকলে এই আসন থেকে প্রয়াত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীও মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সরওয়ার আলমগীর, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আজিম উল্লাহ বাহার, সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়জী, বিএমএ নেতা ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরীও এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন।কাদের গণি চৌধুরী বলেন, আগামী সংসদ হবে শিক্ষিত ও জ্ঞানীদের। যারা আইন প্রণয়ন করতে পারবেন তাদের। ‘ইয়েস’ আর ‘নো’ বলার সংসদ হবে না। ফটিকছড়ি থেকে আমি আগেও বিএনপির নমিনেশন চেয়েছিলাম। এবারও দলের নমিনেশন চাইব। আমি মনে করি দল শিক্ষিত, মার্জিত ও ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে রাজনীতির মাঠে আছি।
জামায়াতে ইসলামী থেকে এ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা আছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিনকে দলটি প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছে। সে অনুযায়ী জামায়াতের এই নেতা এলাকায় জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। ফটিকছড়িতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছিল জামায়াত। এই আসনে তাদের ভোটব্যাংকও বড়।
অধ্যক্ষ নুরুল আমিন বলেন, আমার দল অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে চলে। দলের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। বিগত ২০-২২ বছর এলাকায় যেতে পারিনি। এখন এলাকায় যাচ্ছি, মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে। মানুষ অন্তর দিয়ে আমাকে গ্রহণ করছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সুন্নি মতাদর্শভিত্তিক ইসলামী সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) এই আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানা গেছে। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা এমএ মতিন বলেন, তার দল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। নির্বাচন হলে অবশ্যই তারা প্রার্থী দেবেন। ফটিকছড়িতে উত্তর জেলা ইসলামী ফ্রন্টের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হামিদ উল্লাহ প্রার্থী হবেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এসে নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ আল হাসানি আল মাইজভান্ডারীর নিজ বাড়ি এখানেই। তিনিও তার দল থেকে নির্বাচন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরীফের একটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ওই দরবারের হাজার হাজার ভক্ত রয়েছেন। মূলত ভক্তদের ওপর ভর করেই সাইফুদ্দিন হাসান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে চান।
এই আসনে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে, আবার ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জোটের প্রার্থী হিসাবে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের রফিকুল আনোয়ার (বর্তমানে প্রয়াত)। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সর্বশেষ ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি নির্বাচিত হন।