ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইগাতীর খানবাড়ী মসজিদ

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় মুসলিম স্থাপত্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন খানবাড়ী জামে মসজিদ। শেরপুর জেলা সদর থেকে ১২ কিমি উত্তরে ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্করপাড়া গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদের অপূর্ব কারুকার্য সবাইকে মুগ্ধ করে। স্থানীয় প্রবীণ লোকজন ও ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর তার যোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। এদেরই একজন আজিমোল্লাহ খান। তিনি এখানে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। আজিমোল্লাহ খান পালিয়ে এসে এখানে বসবাস করতেন বলে তার আরেকটি নাম ছিল ‘পলায়ন খাঁ’। মসজিদটির সামনে স্থাপিত ফলক অনুযায়ী, এটি ১২২৮ হিজরি সনে প্রতিষ্ঠিত। পরবর্তীতে মসজিদটি পুনঃসংস্কারের সময় নাম ফলকে আজিমোল্লাহ খানের দুই পুত্র আফজাল খান ও গোলাপ খানের নাম লেখা হয়। মসজিদটি নির্মাণশৈলী খুবই মনোরম। এটি প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের অনুপম নিদর্শন। এ মসজিদ বর্গাকারের, যার দৈর্ঘ্য ২৭ ফুট ও প্রস্থ ২৭ ফুট। পূর্বদিকে একটি মাত্র প্রবেশ পথ। ওপরে পুরো ছাদই একটি মাত্র গম্বুজ দ্বারা তৈরি। এ ছাড়া ৪ কোণে চারটিসহ মোট গম্বুজ সংখ্যা ১২টি। গম্বুজগুলো নিপুণভাবে তৈরি। মসজিদের দেয়ালের গাঁথুনি ৪ ফুট পাশ, যা চুন ও সুরকি দিয়ে গাঁথা। ভেতরে সুন্দর কারুকার্য করা নকশা। এতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে কিছু কাজ করা হয়েছে। বাইরের চারপাশে দেয়াল রয়েছে। সম্মুখে কিছু জায়গা পাকা করা হয়েছে। ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইনে মসজিদটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। পত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে বহুবার পরিদর্শন করা হয়েছে মসজিদটি। বর্তমানে মসজিদ পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। এ মসজিদটি দেখার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসছেন। এই ঐতিহাসিক প্রাচীনতম নিদর্শন খানবাড়ী জামে মসজিদটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ঝিনাইগাতীর খানবাড়ী মসজিদ

আপডেট টাইম : ০৬:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০১৭

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় মুসলিম স্থাপত্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন খানবাড়ী জামে মসজিদ। শেরপুর জেলা সদর থেকে ১২ কিমি উত্তরে ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্করপাড়া গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদের অপূর্ব কারুকার্য সবাইকে মুগ্ধ করে। স্থানীয় প্রবীণ লোকজন ও ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর তার যোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। এদেরই একজন আজিমোল্লাহ খান। তিনি এখানে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। আজিমোল্লাহ খান পালিয়ে এসে এখানে বসবাস করতেন বলে তার আরেকটি নাম ছিল ‘পলায়ন খাঁ’। মসজিদটির সামনে স্থাপিত ফলক অনুযায়ী, এটি ১২২৮ হিজরি সনে প্রতিষ্ঠিত। পরবর্তীতে মসজিদটি পুনঃসংস্কারের সময় নাম ফলকে আজিমোল্লাহ খানের দুই পুত্র আফজাল খান ও গোলাপ খানের নাম লেখা হয়। মসজিদটি নির্মাণশৈলী খুবই মনোরম। এটি প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের অনুপম নিদর্শন। এ মসজিদ বর্গাকারের, যার দৈর্ঘ্য ২৭ ফুট ও প্রস্থ ২৭ ফুট। পূর্বদিকে একটি মাত্র প্রবেশ পথ। ওপরে পুরো ছাদই একটি মাত্র গম্বুজ দ্বারা তৈরি। এ ছাড়া ৪ কোণে চারটিসহ মোট গম্বুজ সংখ্যা ১২টি। গম্বুজগুলো নিপুণভাবে তৈরি। মসজিদের দেয়ালের গাঁথুনি ৪ ফুট পাশ, যা চুন ও সুরকি দিয়ে গাঁথা। ভেতরে সুন্দর কারুকার্য করা নকশা। এতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে কিছু কাজ করা হয়েছে। বাইরের চারপাশে দেয়াল রয়েছে। সম্মুখে কিছু জায়গা পাকা করা হয়েছে। ১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইনে মসজিদটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। পত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে বহুবার পরিদর্শন করা হয়েছে মসজিদটি। বর্তমানে মসজিদ পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। এ মসজিদটি দেখার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসছেন। এই ঐতিহাসিক প্রাচীনতম নিদর্শন খানবাড়ী জামে মসজিদটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।