আকাশে রমজানের বাঁকা চাঁদ। দুয়ার খুলেছে রহমতের। শুরু হয়েছে রহমতের উৎসব। রহমত বরকত নাজাতের মাস রমজান। রহমতের ফল্গুধারায় ডুবে আছে পৃথিবী। অধীর অপেক্ষায় বিশ্ব মুসলিম প্রভুর রহমত-করুণার ভাগ পেতে।
পবিত্র রোজার মাসকে স্বাগত জানানোর ভাব ও ভাষা ভিন্ন। শুধু আহ্লান-সাহ্লান ইয়া শাহরু রমাজান কিংবা খোশ আমদেদ মাহে রমজান নয় বরং এ মাসে নিজের জীবনকে ধর্ম ও ঈমানের রঙে রাঙিয়ে অধিক ইবাদতে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করাই রোজাকে স্বাগত জানানোর প্রকৃত পথ।
হজরত মুহম্মদ সা: দয়াভরা আবেগ-উচ্ছ্বাস নিয়ে রমজানকে স্বাগত জানাতেন। উৎসাহিত করেছেন উম্মতকেও। কারণ এ মাস আল্লাহ্র মাস। আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের মাস। এগারো মাস জাগতিক স্বপ্ন-স্বাদে ডুবে থাকা বেপথের মানুষটিও রোজায় খুঁজে পাবে আল্লাহ্র একান্ত রহমত। খুঁজে পাবে অতীতে পাপ মোচনের হীরকসন্ধান। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্ বলেন, রোজা আমার জন্য, স্বয়ং আমিই এর প্রতিদান দেবো।
(শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৫৭০) ইবনে শাহিন তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হযরত আবু হুরায়রা রা: সূত্রে বর্ণিত, হযরত রাসূলে কারিম সা: বলেন, আমার উম্মত ততক্ষণ পর্যন্ত অপমানিত হবে না, যতক্ষণ রমজান মাসকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করবে। আনসারিদের একজন বলে উঠলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল সা: রমজানের মর্যাদা নষ্ট করলে তার কী ক্ষতি হবে? নবীজী বললেন, রমজানের মর্যাদা নষ্ট করে যে ব্যক্তি রমজানে অন্যায়-অপরাধ করবে, ব্যভিচার করবে অথবা মদ্য পানের মতো জঘন্য অপরাধ করবে মহান রব তার রমজান কবুল করবেন না। বিপরীতে তার ওপর আল্লাহ্ তায়ালা অভিশাপ এবং আকাশের ফেরেশতারা বছরজুড়ে তার জন্য বদ দোয়া করবে। মহানবী সা: বলেন, সে যদি আগামী রমজান পাওয়ার আগেই মারা যায়, নিশ্চিত জাহান্নামের সুসংবাদ (!) নিয়ে মারা যাবে। অতঃপর তোমরা রমজানের মর্যাদা রক্ষা করো, কারণ রমজানে নেক কাজের এতো বিপুল প্রতিদান দেয়া হয়, যা অন্য কোনো সময় মিলবে না। আর গুনাহও অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ক্ষতিকর। রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও। (সূরা বাকারা :১৮৩)
আল্লাহ্ তায়ালা আরও বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোজার মাস পায় সে যেন রোজা রাখে। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫)
রোজার ফজিলত সম্পর্কে নবী করীম সা: বলেছেন,
হযরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেছেন, হুজুর সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার আগের সব গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রাতে ইবাদত করে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী, হাদীস নং-১৯১০)
নবীজী সা: আরও বলেছেন- রমজানের জন্য বেহেশত সাজানো হয় বছরের প্রথম থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত। তিনি বলেন, যখন রমজান মাসের প্রথমদিন উপস্থিত হয় বেহেশতের গাছের পাতা হতে আরশের নিচে বড় বড় চোখ বিশিষ্ট হুরদের প্রতি বিশেষ হাওয়া প্রবাহিত হয়। তখন তারা বলে, হে আল্লাহ্! আপনার বান্দাদের মধ্য হতে আমাদের জন্য এমন স্বামী নির্দিষ্ট করুন যাদের দেখে আমাদের চোখ জুড়াবে এবং আমাদের দেখে তাদের চোখ জুড়াবে। (ফাজায়েলে রমাজান ইলবনে শাহীন, পৃ. ১৫)
হযরত আবু হুরায়রা সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সা: বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বোখারী শরীফ, হাদীস নং- ৩১০৩)
অপর হাদিসে এসেছে- এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বোখারী শরীফ, হাদীস নং- ১৭৭৯)
আমাদের জীবনে কত রমজান আসে-যায়, আল্লাহ্র রহমতের ছিটে-ফোঁটাও হয়তো ভাগ্যে জোটে না! শুধু রমজানকে স্বাগত জানানোর ভাষা জানি না বলে। আজকের এই দিনে আসুন দুনিয়ার নেশা ছেড়ে, ইবাদতের নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করি। ডুব দিই আল্লাহ্র প্রেমে। সকলে গাই কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান- চাঁদ আসিছে রে নতুন চাঁদ/অপরূপ প্রেম-রসের ফাঁদ/ বাঁধিতে সকলে এক সাথে/গলে গলে/মিলিয়া চলিব তাঁর পথে/ দলে দলে।