ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমি কোরআন নাজিল করেছি মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পবিত্র কোরআনুল কারিম নাজিল হয়েছে মানব সভ্যতাকে গড়ে তুলতে। মহান প্রভু ইরশাদ করেন- ‘আমি কোরআন নাজিল করেছি মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য।’

মানুষ যখন রাতের অন্ধকারে পথ চলে তখন সে তার আন্দাজ, অনুমান আর ধারণা ধরে পথ পাড়ি দেয়। যে মানুষ অলসতার জন্য টর্চলাইট থাকা সত্ত্বেও আলোর নিশানা খুঁজে পায় না সে কখনও আলো খুঁজে পাবে না। এসব মানুষ সাওয়াবের আশায় কোরআন নামক টর্চ তেলাওয়াত করে। এরা জানে না কী পড়ছে, কোরআন কী বলছে। তাই তাদের আশার টর্চ নামক কোরআনের আলো জ্বলে না।

কোরআন শরিফ অর্থসহ বোঝার চেষ্টা না করলে মুসলমান জাতির দুর্ভোগ লাঘব হবে না। কোরআন যে জন্য এসেছে তার উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। এমনকি নামাজি ব্যক্তিও সুদ খেতে ভয় করবে না। আমাদের দেশে আজ এ অবস্থাই দেখছি। জেনা-ব্যভিচার, ভণ্ডামি দিন দিন বাড়ছে। একই মুসলমান যে নামাজ পড়ে, কোরআন পড়ে সেই আবার বাতেলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভণ্ডামি করে বেড়ায়। যে কোরআন বুঝবে না সে ইসলাম বুঝবে না এটাই স্বাভাবিক।

এ দেশের মুসলমানরা কোরআন না বোঝার কারণে যেমনিভাবে হেদায়াত থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তেমনি ইসলামী মূল্যবোধ তাদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূরা ফুরকানের ৩০ নং আয়াতে এসেছে,
আর রাসূল বলবে- হে আমার রব! আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা এ কোরআনকে হাসি-ঠাট্টার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। যদিও এ আয়াতটি মোনাফেকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে তবুও বলতে হয়, বর্তমান সময় এ আয়াতটি যেন আজকের নামধারী মুসলমানের উপযোগী।

মুসলিমরা আজ এমন এমন কাজ করছে, যা সম্পূর্ণ কোরআনবিরোধী। এদের জন্যই অন্যান্য সম্প্রদায়ের কাছে মুসলমান হাস্যকর হয়ে উঠছে।

মুসলিম নামধারী উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা হয়ে উঠছে বেপরোয়া। কোরআনের শিক্ষা না পাওয়ায় বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বিয়ের আগেই তারা ডেটিং করছে। কোরআনের শিক্ষা ছাড়া মানুষ যে শয়তান থেকেও বড় ইবলিস হতে পারে তার প্রমাণ বর্তমান সমাজ। অথচ কোরআন বলছে- ‘ওয়ালা তাকরাবুজ্যিনা’, অর্থাৎ তোমরা জিনার নিকটবর্তীও হইও না।

অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে- ‘লা তুফসিদু ফিল আরদে’, অর্থাৎ, তোমরা জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কর না। সূরা ত্বীনের ৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-
সুম্মা রাদাদনাহু আসফালা সাফিলিন অর্থাৎ,অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নিচ থেকে নিচে।

কোরআন শরিফ বুঝে এর জীবনধারা গ্রহণ করলে আজ সমাজের চিত্র কতটা পাল্টে যেত, কতটা শান্তিময় হতো তা রাসূল (সা.)-এর খোলাফায়ে রাশেদা, ওমর ইবনুল আব্দুল আজীজ (রা.)-এর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। যদি পবিত্র কোরআনকে আমরা পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতাম তা হলে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় কাঠামো হয়ে উঠত প্রেমময় হৃদয়ময়। কোরআন বলছে- ওরাত্তিলিল কুরআনা তারতিলা- কোরআন অর্থসহ বুঝে পড়া প্রয়োজন।

তাই কোরআন চর্চা করতে হবে অর্থসহ পড়ে। অথচ বাংলাদেশে হাজার হাজার কোরআনে হাফেজ রয়েছেন কিন্তু তাদের যদি এর অর্থ জিজ্ঞেস করা হয় তারা চুপ থাকেন। একজন মানুষ ৬৬৬৬টি আয়াত মুখস্থ করে ফেললেন অথচ একটি আয়াতও বুঝলেন না। তা হলে কী বলতে হয়, কোরআন শুধু মুখস্থ করার জন্য নাজিল করা হয়েছিল? এর অর্থ জানা জরুরি নয়?

বাংলাদেশের মুসলমান কোরআন থেকে দূরে সরে গিয়ে জীবনে আল্লাহর গাইডলাইন হারিয়ে ফেলেছেন। যদি গাইড লাইন হিসেবে কোরআনকে গ্রহণ করত তা হলে তারা অবশ্যই বিশ্ব মানবের মুক্তির জন্য পেরেশান হয়ে যেত। নিজেরা নিজেরা রেষারেষি না করে সবাই- তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়ো না। এ আয়াতের ওপর অটল থাকত।

আলেমরা এ ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারেন জাতিকে। দেশের পরিবর্তন, পরিমার্জনে আলেম সমাজ বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। কোরআনের আলোয় আলোকিত করতে পারে গোটা রাষ্ট্রকে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

আমি কোরআন নাজিল করেছি মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য

আপডেট টাইম : ০২:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পবিত্র কোরআনুল কারিম নাজিল হয়েছে মানব সভ্যতাকে গড়ে তুলতে। মহান প্রভু ইরশাদ করেন- ‘আমি কোরআন নাজিল করেছি মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য।’

মানুষ যখন রাতের অন্ধকারে পথ চলে তখন সে তার আন্দাজ, অনুমান আর ধারণা ধরে পথ পাড়ি দেয়। যে মানুষ অলসতার জন্য টর্চলাইট থাকা সত্ত্বেও আলোর নিশানা খুঁজে পায় না সে কখনও আলো খুঁজে পাবে না। এসব মানুষ সাওয়াবের আশায় কোরআন নামক টর্চ তেলাওয়াত করে। এরা জানে না কী পড়ছে, কোরআন কী বলছে। তাই তাদের আশার টর্চ নামক কোরআনের আলো জ্বলে না।

কোরআন শরিফ অর্থসহ বোঝার চেষ্টা না করলে মুসলমান জাতির দুর্ভোগ লাঘব হবে না। কোরআন যে জন্য এসেছে তার উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। এমনকি নামাজি ব্যক্তিও সুদ খেতে ভয় করবে না। আমাদের দেশে আজ এ অবস্থাই দেখছি। জেনা-ব্যভিচার, ভণ্ডামি দিন দিন বাড়ছে। একই মুসলমান যে নামাজ পড়ে, কোরআন পড়ে সেই আবার বাতেলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভণ্ডামি করে বেড়ায়। যে কোরআন বুঝবে না সে ইসলাম বুঝবে না এটাই স্বাভাবিক।

এ দেশের মুসলমানরা কোরআন না বোঝার কারণে যেমনিভাবে হেদায়াত থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তেমনি ইসলামী মূল্যবোধ তাদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূরা ফুরকানের ৩০ নং আয়াতে এসেছে,
আর রাসূল বলবে- হে আমার রব! আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা এ কোরআনকে হাসি-ঠাট্টার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। যদিও এ আয়াতটি মোনাফেকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে তবুও বলতে হয়, বর্তমান সময় এ আয়াতটি যেন আজকের নামধারী মুসলমানের উপযোগী।

মুসলিমরা আজ এমন এমন কাজ করছে, যা সম্পূর্ণ কোরআনবিরোধী। এদের জন্যই অন্যান্য সম্প্রদায়ের কাছে মুসলমান হাস্যকর হয়ে উঠছে।

মুসলিম নামধারী উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা হয়ে উঠছে বেপরোয়া। কোরআনের শিক্ষা না পাওয়ায় বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বিয়ের আগেই তারা ডেটিং করছে। কোরআনের শিক্ষা ছাড়া মানুষ যে শয়তান থেকেও বড় ইবলিস হতে পারে তার প্রমাণ বর্তমান সমাজ। অথচ কোরআন বলছে- ‘ওয়ালা তাকরাবুজ্যিনা’, অর্থাৎ তোমরা জিনার নিকটবর্তীও হইও না।

অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে- ‘লা তুফসিদু ফিল আরদে’, অর্থাৎ, তোমরা জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কর না। সূরা ত্বীনের ৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-
সুম্মা রাদাদনাহু আসফালা সাফিলিন অর্থাৎ,অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নিচ থেকে নিচে।

কোরআন শরিফ বুঝে এর জীবনধারা গ্রহণ করলে আজ সমাজের চিত্র কতটা পাল্টে যেত, কতটা শান্তিময় হতো তা রাসূল (সা.)-এর খোলাফায়ে রাশেদা, ওমর ইবনুল আব্দুল আজীজ (রা.)-এর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। যদি পবিত্র কোরআনকে আমরা পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতাম তা হলে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় কাঠামো হয়ে উঠত প্রেমময় হৃদয়ময়। কোরআন বলছে- ওরাত্তিলিল কুরআনা তারতিলা- কোরআন অর্থসহ বুঝে পড়া প্রয়োজন।

তাই কোরআন চর্চা করতে হবে অর্থসহ পড়ে। অথচ বাংলাদেশে হাজার হাজার কোরআনে হাফেজ রয়েছেন কিন্তু তাদের যদি এর অর্থ জিজ্ঞেস করা হয় তারা চুপ থাকেন। একজন মানুষ ৬৬৬৬টি আয়াত মুখস্থ করে ফেললেন অথচ একটি আয়াতও বুঝলেন না। তা হলে কী বলতে হয়, কোরআন শুধু মুখস্থ করার জন্য নাজিল করা হয়েছিল? এর অর্থ জানা জরুরি নয়?

বাংলাদেশের মুসলমান কোরআন থেকে দূরে সরে গিয়ে জীবনে আল্লাহর গাইডলাইন হারিয়ে ফেলেছেন। যদি গাইড লাইন হিসেবে কোরআনকে গ্রহণ করত তা হলে তারা অবশ্যই বিশ্ব মানবের মুক্তির জন্য পেরেশান হয়ে যেত। নিজেরা নিজেরা রেষারেষি না করে সবাই- তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়ো না। এ আয়াতের ওপর অটল থাকত।

আলেমরা এ ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারেন জাতিকে। দেশের পরিবর্তন, পরিমার্জনে আলেম সমাজ বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। কোরআনের আলোয় আলোকিত করতে পারে গোটা রাষ্ট্রকে।