ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানের পরও ইবাদতে অবিচল থাকুন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার কথা হাদিসে এসেছে। আবু আয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং তারপর শাওয়ালেও ছয়টি রোজা করে, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম)

​সময় অতিবাহিত হওয়া ও দিন-রাতের আবর্তনে নিহিত আছে বিরাট শিক্ষা ও সবচেয়ে বড় সাবধান বাণী। ‘নিশ্চয়ই রাত-দিনের পরিবর্তন ও আসমান-জমিনে আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তাতে রয়েছে খোদাভীরু লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন।’ (সূরা ইউনুস : ৬)।
কিছুদিন আগেই আমরা একটি পবিত্র মাসকে বিদায় দিয়েছি। কল্যাণ ও বরকতের মহান একটি মৌসুম রহমত, ক্ষমা, দান-প্রতিদান ও বিভিন্ন লাভজনক বিষয়ে পরিপূর্ণ ছিল। আবেগ-অনুভূতি ছিল টগবগে। চোখগুলো ছিল অশ্রুসজল। হৃদয়-মন ছিল ভয়ে অনুগত আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল সতেজ ও সক্রিয়। কোরআন ও জিকিরে ভরপুর ছিল ইবাদতের বাগান ও জায়গাগুলো। হে আল্লাহ তুমি এসব ইবাদত কবুল করো। চোখের পলকে রমজানের দিন ও মুহূর্তগুলো চলে গেলেও তার প্রতিদান ও বিনিময় আল্লাহ চাইলে অব্যাহত থাকবে।
বিগত রমজানে যার সফল হওয়ার সে সফল হয়েছে। যার বঞ্চিত থাকার সে বঞ্চিত থেকেছে। ইবাদতকারীর আচরণে ইবাদতের প্রভাব দেখা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবুত : ৪৫)। রমজানে ব্যক্তির অবস্থা আরও ভালোর দিকে গেলে তা রমজানের আমল কবুল হওয়ার আলামত আর মন্দের দিকে গেলে বঞ্চিত থাকার আলামত। তওবার পরের একটি গোনাহ তওবার আগের বহু গোনাহের চেয়ে নিকৃষ্ট। তাই মৃত্যু পর্যন্ত ইবাদতে অবিচল থাকুন। আনুগত্যের গৌরবের পরে পাপের অসম্মান খুবই জঘন্য।
ভালো কাজের সব পথ উন্মুক্ত। পথিকরা কোথায়? স্পষ্ট সত্য পথ থেকে ধ্বংসশীলরাই বিচ্যুত হয়। প্রতিটি ইবাদতেই নিজের অংশ বুঝে নিন। ‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা রুকু করো, সিজদা করো, তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করো এবং ভালো কাজ করো, তাতে তোমরা সফল হবে।’ (সূরা হজ : ৭৭)। ইবাদতের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে অবিচল থাকাটা আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আমল স্থায়ী ছিল। তাই আমল ও ইবাদতে অবশ্যই অটল থাকুন।
গোনাহের খেসারত দিতে গিয়ে অন্যের আমলনামায় নিজের আমল ও ইবাদত বিলিয়ে দিয়ে ব্যর্থ হয়ে যাওয়া চূড়ান্ত নিঃস্বতা ও দেউলিয়াপনা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কি জানো কে নিঃস্ব? তারা বলল, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব লোক তো সেই যার কাছে কোনো টাকাপয়সা নেই এবং কোনো সামগ্রী নেই। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের নিঃস্ব ব্যক্তি হলো সে ব্যক্তি যে কেয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে। পাশাপাশি সে কাউকে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, কারও সম্পদ খেয়েছে, কারও রক্তপাত ঘটিয়েছে                   এবং কাউকে মেরেছে। তখন এসব লোককে তার পুণ্য দিয়ে দেয়া হবে। খেসারত আদায়ের আগেই তার                   পুণ্য শেষ হয়ে গেলে তাদের পাপ তার ঘাড়ে                 চাপানো হবে। তারপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (মুসলিম)।
বেপরোয়া গোনাহ করা নিঃস্ব হওয়ার অন্যতম কারণ। হাদিসে এসেছে, একদল লোক পাহাড় পরিমাণ ইবাদত-বন্দেগি করে কেয়ামতের দিন হাজির হবে, কিন্তু আল্লাহ সব ধ্বংস করে দেবেন। কারণ তারা রাত জেগে অনেক আমল করলেও গোনাহে লিপ্ত হয়ে যেত।
জীবনের প্রতিটি স্তরে রবের ইবাদতে সাড়া দিন। সফল হোন। আল্লাহ বলেন, ‘যারা বলেছে আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক, তারপর অবিচল থেকেছে তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না। তারাই জান্নাতের অধিকারী। তাদের আমলের বিনিময়ে চিরদিন তারা সেখানে থাকবে।’ (সূরা আহকাফ : ১৩-১৪)। আল্লাহকে ভয় করুন। আমল দিয়ে জীবনকে সাজান। কাজ দিয়ে কথা বাস্তবায়ন করুন। আল্লাহর ইবাদতে কাটানো জীবনই মূল ও প্রকৃত জীবন। সব মাসই আমল ও ইবাদতের সময়। যদিও শ্রেষ্ঠত্বের পার্থক্য রয়েছে। গোটা জীবনই আমল ও ইবাদতের সুযোগ। প্রত্যেকেই নিজেকে মুক্ত করবে অথবা ধ্বংস করবে।
তাই রমজানের দিনরাত যারা সুন্দরভাবে হক আদায় করে কাটিয়েছে শাওয়ালেও যেন তাদের দিনগুলো পরিবর্তন না হয়ে যায়।
আর রমজানের সুযোগ নষ্ট করে যারা অবহেলা করেছে, তারা যেন এখন তওবা করে নেয়। তওবার সব দরজা খোলাই আছে। আল্লাহ বলেন, ‘বলে দিন, আমার যে বান্দারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরা জুমার : ৫৩)।
শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার কথা হাদিসে এসেছে। আবু আয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং তারপর শাওয়ালেও ছয়টি রোজা করে, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম)।
আল্লাহ ভালো কাজের জন্য ১০টি নেকি দেন। তাহলে এক মাস হলো ১০ মাস। ঈদুল ফিতরের পরে ছয়দিনের ১০ গুণ হলো ষাট দিন। এভাবে এক বছর পূর্ণ হয়। ছয়টি রোজা একসঙ্গে বা আলাদা করে আদায় করা যায়।
কেউ ছয় দিন রোজা রাখতে কার্পণ্য করবেন না। হয়তো সারা বছর রোজা আদায়কারীদের তালিকায় তা লেখা হয়ে যেতে পারে। এটা অনেক বড় সুযোগÑ যা চেষ্টা, উদ্যোগ ও আগ্রহের দাবি রাখে।

৬ শাওয়াল ১৪৩৮ হি. মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

রমজানের পরও ইবাদতে অবিচল থাকুন

আপডেট টাইম : ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার কথা হাদিসে এসেছে। আবু আয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং তারপর শাওয়ালেও ছয়টি রোজা করে, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম)

​সময় অতিবাহিত হওয়া ও দিন-রাতের আবর্তনে নিহিত আছে বিরাট শিক্ষা ও সবচেয়ে বড় সাবধান বাণী। ‘নিশ্চয়ই রাত-দিনের পরিবর্তন ও আসমান-জমিনে আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তাতে রয়েছে খোদাভীরু লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন।’ (সূরা ইউনুস : ৬)।
কিছুদিন আগেই আমরা একটি পবিত্র মাসকে বিদায় দিয়েছি। কল্যাণ ও বরকতের মহান একটি মৌসুম রহমত, ক্ষমা, দান-প্রতিদান ও বিভিন্ন লাভজনক বিষয়ে পরিপূর্ণ ছিল। আবেগ-অনুভূতি ছিল টগবগে। চোখগুলো ছিল অশ্রুসজল। হৃদয়-মন ছিল ভয়ে অনুগত আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল সতেজ ও সক্রিয়। কোরআন ও জিকিরে ভরপুর ছিল ইবাদতের বাগান ও জায়গাগুলো। হে আল্লাহ তুমি এসব ইবাদত কবুল করো। চোখের পলকে রমজানের দিন ও মুহূর্তগুলো চলে গেলেও তার প্রতিদান ও বিনিময় আল্লাহ চাইলে অব্যাহত থাকবে।
বিগত রমজানে যার সফল হওয়ার সে সফল হয়েছে। যার বঞ্চিত থাকার সে বঞ্চিত থেকেছে। ইবাদতকারীর আচরণে ইবাদতের প্রভাব দেখা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবুত : ৪৫)। রমজানে ব্যক্তির অবস্থা আরও ভালোর দিকে গেলে তা রমজানের আমল কবুল হওয়ার আলামত আর মন্দের দিকে গেলে বঞ্চিত থাকার আলামত। তওবার পরের একটি গোনাহ তওবার আগের বহু গোনাহের চেয়ে নিকৃষ্ট। তাই মৃত্যু পর্যন্ত ইবাদতে অবিচল থাকুন। আনুগত্যের গৌরবের পরে পাপের অসম্মান খুবই জঘন্য।
ভালো কাজের সব পথ উন্মুক্ত। পথিকরা কোথায়? স্পষ্ট সত্য পথ থেকে ধ্বংসশীলরাই বিচ্যুত হয়। প্রতিটি ইবাদতেই নিজের অংশ বুঝে নিন। ‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা রুকু করো, সিজদা করো, তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করো এবং ভালো কাজ করো, তাতে তোমরা সফল হবে।’ (সূরা হজ : ৭৭)। ইবাদতের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে অবিচল থাকাটা আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আমল স্থায়ী ছিল। তাই আমল ও ইবাদতে অবশ্যই অটল থাকুন।
গোনাহের খেসারত দিতে গিয়ে অন্যের আমলনামায় নিজের আমল ও ইবাদত বিলিয়ে দিয়ে ব্যর্থ হয়ে যাওয়া চূড়ান্ত নিঃস্বতা ও দেউলিয়াপনা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কি জানো কে নিঃস্ব? তারা বলল, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব লোক তো সেই যার কাছে কোনো টাকাপয়সা নেই এবং কোনো সামগ্রী নেই। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের নিঃস্ব ব্যক্তি হলো সে ব্যক্তি যে কেয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে। পাশাপাশি সে কাউকে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, কারও সম্পদ খেয়েছে, কারও রক্তপাত ঘটিয়েছে                   এবং কাউকে মেরেছে। তখন এসব লোককে তার পুণ্য দিয়ে দেয়া হবে। খেসারত আদায়ের আগেই তার                   পুণ্য শেষ হয়ে গেলে তাদের পাপ তার ঘাড়ে                 চাপানো হবে। তারপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (মুসলিম)।
বেপরোয়া গোনাহ করা নিঃস্ব হওয়ার অন্যতম কারণ। হাদিসে এসেছে, একদল লোক পাহাড় পরিমাণ ইবাদত-বন্দেগি করে কেয়ামতের দিন হাজির হবে, কিন্তু আল্লাহ সব ধ্বংস করে দেবেন। কারণ তারা রাত জেগে অনেক আমল করলেও গোনাহে লিপ্ত হয়ে যেত।
জীবনের প্রতিটি স্তরে রবের ইবাদতে সাড়া দিন। সফল হোন। আল্লাহ বলেন, ‘যারা বলেছে আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক, তারপর অবিচল থেকেছে তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না। তারাই জান্নাতের অধিকারী। তাদের আমলের বিনিময়ে চিরদিন তারা সেখানে থাকবে।’ (সূরা আহকাফ : ১৩-১৪)। আল্লাহকে ভয় করুন। আমল দিয়ে জীবনকে সাজান। কাজ দিয়ে কথা বাস্তবায়ন করুন। আল্লাহর ইবাদতে কাটানো জীবনই মূল ও প্রকৃত জীবন। সব মাসই আমল ও ইবাদতের সময়। যদিও শ্রেষ্ঠত্বের পার্থক্য রয়েছে। গোটা জীবনই আমল ও ইবাদতের সুযোগ। প্রত্যেকেই নিজেকে মুক্ত করবে অথবা ধ্বংস করবে।
তাই রমজানের দিনরাত যারা সুন্দরভাবে হক আদায় করে কাটিয়েছে শাওয়ালেও যেন তাদের দিনগুলো পরিবর্তন না হয়ে যায়।
আর রমজানের সুযোগ নষ্ট করে যারা অবহেলা করেছে, তারা যেন এখন তওবা করে নেয়। তওবার সব দরজা খোলাই আছে। আল্লাহ বলেন, ‘বলে দিন, আমার যে বান্দারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরা জুমার : ৫৩)।
শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার কথা হাদিসে এসেছে। আবু আয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং তারপর শাওয়ালেও ছয়টি রোজা করে, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম)।
আল্লাহ ভালো কাজের জন্য ১০টি নেকি দেন। তাহলে এক মাস হলো ১০ মাস। ঈদুল ফিতরের পরে ছয়দিনের ১০ গুণ হলো ষাট দিন। এভাবে এক বছর পূর্ণ হয়। ছয়টি রোজা একসঙ্গে বা আলাদা করে আদায় করা যায়।
কেউ ছয় দিন রোজা রাখতে কার্পণ্য করবেন না। হয়তো সারা বছর রোজা আদায়কারীদের তালিকায় তা লেখা হয়ে যেতে পারে। এটা অনেক বড় সুযোগÑ যা চেষ্টা, উদ্যোগ ও আগ্রহের দাবি রাখে।

৬ শাওয়াল ১৪৩৮ হি. মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ