বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ লাল রঙ মাখা পুরো গায়ে। উপরে
চমৎকার একটি গম্বুজ। চারদিকে ফুলের বাগান। মাঝখানে দেশ-বিদেশের বিদ্যার্থীরা মৌমাছির মতো ম ম করছে। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে গোড়াপত্তন হয় দারুল উলুম দেওবন্দের। পড়ালেখার সূচনা হয় একজন ওস্তাদ মোল্লা মাহমুদ ও একজন ছাত্র
মাহমুদ হাসানের মাধ্যমে
দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারের বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ। বাইরে থেকে বেশ দৃষ্টিনন্দন। যদিও এর দালানগুলো অনেক দিনের পুরনো। লাল রঙ মাখা পুরো গায়ে। উপরে চমৎকার একটি গম্বুজ। চারদিকে ফুলের বাগান। মাঝখানে দেশ-বিদেশের বিদ্যার্থীরা মৌমাছির মতো ম ম করছে। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে গোড়াপত্তন হয় দারুল উলুম দেওবন্দের। পড়ালেখার সূচনা হয় একজন ওস্তাদ মোল্লা মাহমুদ ও একজন ছাত্র মাহমুদ হাসানের মাধ্যমে! ঐতিহাসিক সত্তা এ মসজিদের প্রাঙ্গণে ছোট্ট একটি ডালিম গাছের নিচে!
মূল ভবনের পেছনের দিকে দারুণ নওদারা। এটাই সেই ঐতিহাসিক জমিন! যেখানে হজরত মাওলানা শাহ রফিউদ্দীন (রহ.) কে আল্লাহর রাসুল (সা.) স্বপ্নের মধ্যে বলেছিলেন এখানে দ্বীনের বুনিয়াদ স্থাপন করার জন্য। নওদারার সামনে ছোট্ট একটা চত্বর! মাঝ বরাবর অনেক পুরনো বড় বড় দুইটি বকুল গাছ। গাছ দুইটি হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.) রোপণ করেছিলেন।
নওদারার চত্বর ঘিরে রয়েছে সারি সারি দেয়ালিকা। আরবি, উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি, অসমিয়া ইত্যাদি ভাষায়। নওদারার কিছু দক্ষিণে বাবে কাসেম অর্থাৎ কাসেমি গেট! এ গেট দিয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা হজরত কাসেম নানুতবি (রহ.) যাওয়া-আসা করতেন।
গেটের উপরের কামরায় সংরক্ষিত রয়েছে হুজুর (সা.) এর রুমাল মোবারক। অনেকেই হয়তো রুমালটির কথা আগে কখনও শোনেননি। তুর্কির বাদশা উসমানি খেলাফতের সময় সেখানের অবস্থা খুব খারাপ চলছিল। তখন এ রুমালটিকে এখানে নিরাপদ মনে করে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাশেই মসজিদে কাদিম। দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাচীনতম মসজিদ এটি।
দারুল উলুম দেওবন্দের প্রসিদ্ধ কয়েকটি গেট আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ গেট হলো বাবে কাসেম। তার সামনে দিয়ে কিছুদূর এগোতেই রাস্তার ডান দিকে পড়ে সেই ঐতিহাসিক সাত্তা মসজিদ, যেখানে বসে মোল্লা মাহমুদ তার সুযোগ্য ছাত্র মাহমুদ হাসানকে হাদিসের দরস দিয়েছিলেন। দারুল উলুম দেওবন্দের সবচেয়ে প্রাচীনতম মসজিদ এটি। দারুল উলুম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সাত্তা মসজিদের পাশে এখনও একটি কামরা আছে যেখানে হজরত কাসেম নানতুবি (রহ.) ইবাদত করতেন।
দারুল উলুম দেওবন্দের উল্লেখযোগ্য গেটের আরেকটি হলো মাদানি গেট। এ গেট দিয়ে হজরত হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.) আসা-যাওয়া করতেন। তার পাশেই হজরত হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.) এর বাড়ি। বর্তমানে সে বাড়িতে হজরত মাদানি (রহ.) এর মেজো ছেলে মাওলানা আরশাদ মাদানি (দা. বা.) এর পরিবার থাকে।
মাদানি গেট দিয়ে দারুল উলুমে প্রবেশ করতেই সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল একটি খেজুর গাছ। গাছটি হজরত হোসাইন আহমদ মাদানির (রহ.) লাগানো।
গাছটির সামনে বিরাট এক গেট, যার নাম বাবুজ জাহের। বাইরে থেকে ছোট দেখা গেলেও ভেতরটা প্রশস্ত। এর মধ্যে কিছু কামরাও আছে, যেখানে ছাত্ররা থাকে। এ গেটটি আফগানিস্তানের বাদশাহ সুলতান জাহিরের অবদান। তাই তার নামেই নামকরণ করা হয়। এমনকি বাংলাদেশের বিখ্যাত বুজুর্গ হজরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) বাবুজ জাহিরে থাকতেন।
বাবুজ জাহির গেট দিয়ে প্রবেশ করলে তার সামনে দেখা যায় এক বিশাল লাইব্রেরি। নাম মাকতাবায়ে শাইখুল হিন্দ। সুবিশাল মাকতাবাটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড়, বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ বলে মনে করা হয়। এর উপরে উঠলে দেওবন্দের পুরো শহর দেখা যায়। লাইব্রেরির নিচের তালায় রয়েছে পরীক্ষার হল রুম। যেখানে হাজার হাজার ছাত্র পরীক্ষা দিতে পারে। এর দ্বিতীয় তলায় দাওরায়ে হাদিসের ক্লাস। উপরের তলাগুলো বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক প্রোগ্রাম, পুরস্কার ভিতরণ অনুষ্ঠান, তারবিয়তি জলসা ও দেশ-বিদেশের খাস মেহমানদের নিয়ে বিশেষ মজলিস করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। বাকিটা কুতুবখানা। এক লাখ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত দারুল উলুম দেওবন্দের রয়েছে প্রায় ২০টিরও বেশি দালান।
দারুল উলুম দেওবন্দে রয়েছে এক বিরাট কবরস্থান, যেটা মাকবারায়ে কাসেমি নামে প্রসিদ্ধ। যেখানে শায়িত আছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজর্গান ওলামায়ে কেরাম। বর্তমানে দারুল উলুম দেওবন্দের মোহতামিম হলেন মুফতি আবুল কাসেম নোমানি (দা. বা.)। দারুল উলুমে ছাত্রসংখ্যা হলো প্রায় সাড়ে চার হাজার। ভারতের সব প্রদেশের ছাত্ররাই এখানে পড়তে আসে। তাছাড়া বাংলাদেশ, মায়ানমার, আফগানিস্তান, মিসর, নেপালের ছাত্রও আসে।