বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জগতের সব জীবই আল্লাহ তাআলার কাছে মুখাপেক্ষী। আর মানুষ সবচেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী। এমন কোনো বিষয় নেই যা মানুষ নিজে থেকে সম্পন্ন করতে পারে। মানুষ দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু করে তার সবই হচ্ছে আল্লাহ কাছে মুখাপেক্ষীতার অংশ।
আল্লাহ মানুষের যে বিষয়গুলো মিটিয়ে দেন বা দান করেন তা হচ্ছে তাঁর একান্ত রহমত ও মেহেরবানী। বান্দাহ যখনই আল্লাহ তাআলার কাছে কোনো কিছু চায়; আল্লাহ তখন তার অন্তরের আকুতি বা মনোভাব কী; তা তিনি বুঝেন এবং দেখেন।
আল্লাহর কাছে বান্দার এই মুখাপেক্ষীতা বা কোনো কিছু চাওয়া এবং কামনা করার নামই হচ্ছে দোয়া। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বান্দাকে লক্ষ্য কওে বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক (আমার কাছে চাও/দোয়া কর); আমি তোমাদের ডাকে (চাওয়া-পাওয়া পূরণে) সাড়া দেব। যারা অহংকার করে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ৬০)
আল্লাহ তাআলার এ নির্দেশের বাস্তবায়ন ছিল প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে। তাঁর হায়াতে জিন্দেগীতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম গুণই ছিল আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করা। তিনি সারা জীবন আল্লাহর দরবারে এত দোয়া করেছেন; এত আবেদন করেছেন, যা দুনিয়াতে দ্বিতীয় আর কেউ করেননি।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া ছিল এমন যে, ‘এ যেন বহু চাঁদের মাঝে একটি পূর্ণিমার চাঁদ!’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়ার আকর্ষণ ছিল হৃদয়ের প্রচণ্ড উত্তাপ ও বিনয়কাতরতার; ছিল প্রচণ্ড আবেদন, নিবেদন ও মুখাপেক্ষিতার; ছিল কান্না!, অশ্রু প্লাবিত কান্নার; যা তিনি নিজে করেছেন এবং উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। ইসলামের জীবন ব্যবস্থার অন্য সব বিষয়ের মতো দোয়ার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মুআল্লিম।
তাইতো তিনি তাঁর উম্মতের জন্য অসংখ্য দোয়া বর্ণনা করে গেছেন। দোয়া প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হজরত নুমান ইবনে বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, প্রিয়নবি বলেছেন, ‘নিশ্চয় দোয়া-ই হলো ইবাদত। এবং তিনি (সুরা মুমিন এর ৬০নং আয়াত উল্লেখ করেন) বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক (আমার কাছে চাও/দোয়া কর); আমি তোমাদের ডাকে (চাওয়া-পাওয়া পূরণে) সাড়া দেব। যারা অহংকার করে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘দোয়াই হলো মূল ইবাদত।’ প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কাছে কিছু চায় না বা প্রার্থনা করে না; আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির প্রতি রাগান্বিত হন বা অভিশাপ দেন।’ (তিরমিজি)
মানুষের উদ্দেশ্য পূরণে আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে আসা; তাঁর দরবারে ফরিয়াদ করাই হলো দোয়া। ইমাম নববি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘সর্বযুগে ও র্সবস্থানেই ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া করা মুস্তাহাব। তবে বিপদাপদের সময় দোয়া করা সুন্নাত। কেননা সব নবি-রাসুলদের থেকেই বিপদাপদের সময় দোয়া করার বা আল্লাহর দরবারে ধরনা দেয়ার প্রমাণ রয়েছে।
মনে রাখতে হবে, দোয়া করতে গিয়ে তাড়াহুড়ো বা শিরক করা যাবে না। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে কোনো কিছু চাওয়া যাবে না। হাদিসে এসেছে
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবির জন্যই একটি কবুলযোগ্য দোয়া রয়েছে। সব নবিই সেই দোয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করেছেন। কিন্তু আমি আমার উম্মতের শাফাআতের উদ্দেশ্যে কেয়ামে পর্যন্ত তা লুকিয়ে রেখেছি। সুতরাং আমার এ দোয়া ইনশাআল্লাহ আমার উম্মতের এমন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য হবে যে, আল্লাহ সঙ্গে শরিক না করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। (মুসলিম, মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা মানুষকে শিরকমুক্ত থেকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো নিয়মে তার কাছে ধরনা দেয়ার বা দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।