ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিজাবের আশ্রয়ে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করি : ব্রিটিশ নওমুসলিম

আইভান রাইডলি ইউরোপের একজন বিখ্যাত মুসলমান। ইসলামের পক্ষে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখার জন্য তিনি ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তার জন্ম ১৯৫৯ সালে। তিনি ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মিরর-এর সাংবাদিক হিসেবে ২০০১ সালে আফগানিস্তান সফর করেন।

এক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তালেবানরা তাকে আটক করে। এরপর মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান দখল করার পর রাইডলিকে মুক্ত করে। মুক্ত রাইডলি ফিরে যান ব্রিটেনে।

মিসেস রাইডলি প্রতি রোববার গির্জায় যেতেন ও সেখানে শিক্ষকতা করতেন। এ ছাড়াও গির্জার অন্ধ-গ্রুপে গান গাইতেন রাইডলি। তিনি লন্ডনে গিয়ে সেন্ট জেমস গির্জার বিজ্ঞান প্রতিনিধি দলের সদস্য হন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী সম্পর্কে তিনি বলেছেন, খুব বেশি বেশি গির্জায় যাওয়ার কারণে অন্যরা তাকে মাত্রাতিরিক্ত গোঁড়া খ্রিস্টান মনে করত। আর তাই তিনি একজন প্রশিক্ষিত ও গোঁড়া খ্রিস্টান হিসেবে কোরআন পড়া শুরু করেছিলেন।

রাইডলি জানান, এই পথে গবেষণা করতে গিয়ে খুব শিগগিরই আধ্যাত্মিক সফরে যাওয়ার সুযোগ পান তিনি। এ প্রক্রিয়ায় ত্রিশ মাসেরও বেশি সময় লেগেছে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামকে ধর্ম হিসেবে বেছে নেন তিনি। অনেকেই এ খবরটি হজম করতে পারেননি। ইসলাম নিয়ে গবেষণা শেষ করার পর রাইডলি নিজের মধ্যে অবিশ্বাস্য মাত্রায় আধ্যাত্মিক ও মানসিক শক্তি অনুভব করতেন।

কারণ, গবেষণার মাধ্যমে তিনি যেসব সত্য উদঘাটন করেন তা তার ওপর বিস্ময়কর প্রভাব ফেলেছিল। যদিও তিনি এর কারণগুলো প্রসঙ্গে কেবল বিশেষ কোনো দিকের কথা উল্লেখ করতে চান না, তবুও খ্রিস্টান বিশ্ব সম্পর্কে তার মধ্যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষভাবে। ইসরাইলি সেনারা জেরুজালেম বা বায়তুল মোকাদ্দাস শহরে খ্রিস্টানদের পবিত্রতম স্থান ও হযরত ঈসা (আ.)’র জন্মস্থান তথা চার্চ অব নেটিভিটিতে গুলি বর্ষণ করা সত্ত্বেও খ্রিস্টান পাদ্রি সমাজ ও খ্রিস্টানরা এ ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভূমিকা রাখায় তার মধ্যে ওই নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়। তিনি বুঝলেন খ্রিস্টানরা তাদের পবিত্রতম স্থানের অবমাননাকেও গুরুত্ব দেন না। ফলে তারা যে এ ধর্মের শিক্ষা ও বক্তব্যগুলোকেও গুরুত্ব দেবেন না তা রাইডলির কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়।

নারী অধিকার সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও পবিত্র কুরআনের বর্ণনা বহু মানুষকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করে। অপমানিত ও বন্দিনী নারী সমাজের জন্য ইসলাম আবির্ভূত হয়েছে মুক্তিদাতা বা ত্রাণকর্তা


হিসেবে। ইসলামের ছায়াতলে নারী এটা অনুভব করতে সক্ষম হয় যে নারী এক সম্মানিত সত্তা যার রয়েছে জীবনের অধিকার, মালিকানার বা নিজস্ব সম্পদের অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা।

মিশরীয় চিন্তাবিদ সাইয়্যেদ কুতুব এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ইসলামের পক্ষ থেকে নারী যদি মর্যাদা না পেত তাহলে নারী তার প্রকৃত পরিচিতি অর্জন করতে সক্ষম হত না। ইসলাম যথাযোগ্য পন্থায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মানুষকেই শ্রদ্ধা করেছে এবং আল্লাহর ফুঁকে দেয়া রুহ বহনকারী মানুষকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেছে। আর এভাবেই নারী তার প্রকৃত সম্মান ফিরে পেয়েছে।

ইসলামে নারীর মর্যাদা রাইডলিকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। তাঁর মতে কুরআন নারীর নিন্দা জানায়নি এবং তাকে মজলুম বা অসহায় করেনি। বরং আল্লাহ কুরআনে তাদের স্বাধীনতার কথা ও সমান অধিকার বা সমতার কথা উল্লেখ করেছেন। জ্ঞান অর্জনসহ মানুষ হিসেবে সব অধিকার পুরুষের মত নারীরও প্রাপ্য। তিনি বলেছেন,

“আমি ইসলামে তালাক ও সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার সম্পর্কে গবেষণা করে দেখলাম, এসব বিধান এতটা উন্নত যে মনে হয় এইমাত্র কোনো পারিবারিক আদালতে এসব আইন অনুমোদিত হয়েছে। বহু আইনজীবী তাদের অধিকার বা দাবি প্রমাণের জন্য ইসলামের সামাজিক আইন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে থাকেন। আরো অবিশ্বাস্য ব্যাপার হল ইসলাম ঘরে থাকা মহিলাদেরকে ব্যাপক অধিকার দিয়েছে। তারা ইচ্ছা করলে ঘরে কাজ করতে পারেন বা নাও করতে পারেন। ইসলাম এভাবে ঘরের নারীকে ও ঘরের শিশুদের লালন ও শিক্ষাদানকারী মহিলাদের প্রভূত সম্মান দিয়েছে। অথচ আমি যখন পাশ্চাত্যের কোনো কোনো মহিলাকে প্রশ্ন করি যে তারা কি করেন তখন তারা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলেন: আমি গৃহিণী বা গৃহবধূ। অথচ ইসলাম ঘরের কাজে নারীর উপস্থিতিকে উচ্চ মর্যাদা দেয়। ইসলাম সম্পর্কে যতই তথ্য পাচ্ছিলাম ততই এর সত্যতা ও যৌক্তিকতা আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল।”

অন্য যে কোনো নও-মুসলিম মহিলার মত ব্রিটিশ নও-মুসলিমা আইভান রাইডলিও হিজাবের বলিষ্ঠ সমর্থক। তিনি বলেছেন,

“পাশ্চাত্য হিজাবকে জুলুম ও দমন-পীড়নের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছে। অথচ আমি এখন অন্যদের চেয়েও এটা বেশি জানি যে হিজাব নারীকে বরং স্বাধীনতা ও শক্তি যোগায়। আমি যখন হিজাব পরে পথে-ঘাটে চলাফেরা করি তখন নিজেকে শক্তিমান মনে করি। হিজাবকে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। কেউ কেউ বলেন, হিজাবধারী মহিলারা আসলে নিজেকে প্রকাশ করতে ভয় পান, তাদের আত্মবিশ্বাস নেই ইত্যাদি। আমার মত এর ঠিক উল্টো। হিজাবধারী মহিলারাই অত্যন্ত স্পষ্টভাবে এটা বোঝাতে চান যে তারা মুসলিম নারী। হিজাব আমার জীবনে ও বিশেষ করে আমার নিরাপত্তা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। হিজাবের আশ্রয়ে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করি।”

পবিত্র কুরআন বিশ্বনবী (সা.)’র সবচেয়ে বড় মুজেজা। এর অশেষ আকর্ষণ ও অলৌকিকত্ব সত্য-সন্ধানীদের অভিভূত করে। যেমন, কুরআন একটি প্রাচীন গ্রন্থ হওয়া সত্ত্বেও বিকৃত হয়নি। আল্লাহ নিজেই এ মহাগ্রন্থকে রক্ষার অঙ্গীকার করেছেন। ব্রিটিশ নও-মুসলিমা আইভান রাইডলি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

“আমি পবিত্র কুরআন পড়ার পর আবারও বাইবেল পড়েছি। আমি বাইবেলের উৎস খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছি। কুরআন নাজিল হওয়ার পর থেকে কখনও বিকৃত হয়নি। অন্যদিকে বাইবেলের প্রথম বিষয়টি হযরত ঈসা (আ.)’র জন্মের ৭০ বছর পর লেখা হয়েছে। আমরা সাংবাদিকরা যখন কোনো ঘটনা ঘটার ২৪ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছি তখন পরস্পর-বিরোধী অনেক তথ্য বা খবরই আমরা শুনতে পাই। আর যে বিষয় সম্পর্কে ৭০ বছর পর লেখা হয় সে বিষয়ের বর্ণনা কতটা সঠিক থাকবে তা বোধগম্য। অবশ্য আমি বাইবেলকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলতে চাই না। বাইবেল পবিত্র গ্রন্থ। এর অনেক বিষয়ই সুন্দর ও স্বর্গীয় কিন্তু নির্ভুল ও যথাযথ নয়। এর কারণ, এ বই লেখা হয়েছে অনেক পরে। এ ছাড়াও বাইবেলের রয়েছে নানা সংস্করণ। আমি যখন কাউকে বলি যে আমাকে বাইবেল দাও, তখন আমাকে বলা হয় কোন বাইবেলটি দেব, কারণ, বাইবেলের অনেক সংস্করণ রয়েছে।”

ইসলাম গ্রহণের পর রাইডলির বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতদের অনেকেই তাকে ত্যাগ করে। এমনকি তার বাবা-মাও তাকে জানায় যে “তুমি বিপদে ভরা ভুল পথ বেছে নিয়েছে।” কিন্তু তাদের অনেকেই আবার কিছু দিন পর রাইডলির কাছে ফিরে আসে। কারণ, তারা আমাকে আগের মতই স্বাভাবিক বরং আগের চেয়েও প্রফুল্ল ও বেশি সুস্থ দেখতে পায়। তারা দেখেছে যে আমি আগের চেয়েও বেশি সৎ কাজ করছি, ও ভালোভাবে কথা বলছি এবং বেশি আত্মবিশ্বাসী।

রাইডলি বর্তমানে ইরানের ইংরেজিভাষী টেলিভিশন প্রেস টিভির সাংবাদিক। মুসলমান হওয়ার কারণে ব্রিটেনে এখন তার সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত আচরণ করছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। তা সত্ত্বেও ইসলামী জীবনে সুখী এই ব্রিটিশ নও-মুসলিম দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছেন: আমি যখনই কোনো হিজাব পরা মহিলাকে দেখি, চিনি বা না চিনি মুচকি হাসি দিয়ে তাকে বলি ‘আসসালামু আলাইকুম’, অর্থাৎ ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’। আপনারাও যখন কোনো পর্দানশীন নারী দেখবেন তাকে সম্মান করবেন বা সালাম দিবেন।”-প্যারিস টুডে

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

হিজাবের আশ্রয়ে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করি : ব্রিটিশ নওমুসলিম

আপডেট টাইম : ০৫:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জুলাই ২০১৬

আইভান রাইডলি ইউরোপের একজন বিখ্যাত মুসলমান। ইসলামের পক্ষে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখার জন্য তিনি ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তার জন্ম ১৯৫৯ সালে। তিনি ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মিরর-এর সাংবাদিক হিসেবে ২০০১ সালে আফগানিস্তান সফর করেন।

এক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তালেবানরা তাকে আটক করে। এরপর মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান দখল করার পর রাইডলিকে মুক্ত করে। মুক্ত রাইডলি ফিরে যান ব্রিটেনে।

মিসেস রাইডলি প্রতি রোববার গির্জায় যেতেন ও সেখানে শিক্ষকতা করতেন। এ ছাড়াও গির্জার অন্ধ-গ্রুপে গান গাইতেন রাইডলি। তিনি লন্ডনে গিয়ে সেন্ট জেমস গির্জার বিজ্ঞান প্রতিনিধি দলের সদস্য হন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী সম্পর্কে তিনি বলেছেন, খুব বেশি বেশি গির্জায় যাওয়ার কারণে অন্যরা তাকে মাত্রাতিরিক্ত গোঁড়া খ্রিস্টান মনে করত। আর তাই তিনি একজন প্রশিক্ষিত ও গোঁড়া খ্রিস্টান হিসেবে কোরআন পড়া শুরু করেছিলেন।

রাইডলি জানান, এই পথে গবেষণা করতে গিয়ে খুব শিগগিরই আধ্যাত্মিক সফরে যাওয়ার সুযোগ পান তিনি। এ প্রক্রিয়ায় ত্রিশ মাসেরও বেশি সময় লেগেছে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামকে ধর্ম হিসেবে বেছে নেন তিনি। অনেকেই এ খবরটি হজম করতে পারেননি। ইসলাম নিয়ে গবেষণা শেষ করার পর রাইডলি নিজের মধ্যে অবিশ্বাস্য মাত্রায় আধ্যাত্মিক ও মানসিক শক্তি অনুভব করতেন।

কারণ, গবেষণার মাধ্যমে তিনি যেসব সত্য উদঘাটন করেন তা তার ওপর বিস্ময়কর প্রভাব ফেলেছিল। যদিও তিনি এর কারণগুলো প্রসঙ্গে কেবল বিশেষ কোনো দিকের কথা উল্লেখ করতে চান না, তবুও খ্রিস্টান বিশ্ব সম্পর্কে তার মধ্যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষভাবে। ইসরাইলি সেনারা জেরুজালেম বা বায়তুল মোকাদ্দাস শহরে খ্রিস্টানদের পবিত্রতম স্থান ও হযরত ঈসা (আ.)’র জন্মস্থান তথা চার্চ অব নেটিভিটিতে গুলি বর্ষণ করা সত্ত্বেও খ্রিস্টান পাদ্রি সমাজ ও খ্রিস্টানরা এ ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভূমিকা রাখায় তার মধ্যে ওই নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়। তিনি বুঝলেন খ্রিস্টানরা তাদের পবিত্রতম স্থানের অবমাননাকেও গুরুত্ব দেন না। ফলে তারা যে এ ধর্মের শিক্ষা ও বক্তব্যগুলোকেও গুরুত্ব দেবেন না তা রাইডলির কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়।

নারী অধিকার সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও পবিত্র কুরআনের বর্ণনা বহু মানুষকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করে। অপমানিত ও বন্দিনী নারী সমাজের জন্য ইসলাম আবির্ভূত হয়েছে মুক্তিদাতা বা ত্রাণকর্তা


হিসেবে। ইসলামের ছায়াতলে নারী এটা অনুভব করতে সক্ষম হয় যে নারী এক সম্মানিত সত্তা যার রয়েছে জীবনের অধিকার, মালিকানার বা নিজস্ব সম্পদের অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা।

মিশরীয় চিন্তাবিদ সাইয়্যেদ কুতুব এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ইসলামের পক্ষ থেকে নারী যদি মর্যাদা না পেত তাহলে নারী তার প্রকৃত পরিচিতি অর্জন করতে সক্ষম হত না। ইসলাম যথাযোগ্য পন্থায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মানুষকেই শ্রদ্ধা করেছে এবং আল্লাহর ফুঁকে দেয়া রুহ বহনকারী মানুষকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেছে। আর এভাবেই নারী তার প্রকৃত সম্মান ফিরে পেয়েছে।

ইসলামে নারীর মর্যাদা রাইডলিকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। তাঁর মতে কুরআন নারীর নিন্দা জানায়নি এবং তাকে মজলুম বা অসহায় করেনি। বরং আল্লাহ কুরআনে তাদের স্বাধীনতার কথা ও সমান অধিকার বা সমতার কথা উল্লেখ করেছেন। জ্ঞান অর্জনসহ মানুষ হিসেবে সব অধিকার পুরুষের মত নারীরও প্রাপ্য। তিনি বলেছেন,

“আমি ইসলামে তালাক ও সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার সম্পর্কে গবেষণা করে দেখলাম, এসব বিধান এতটা উন্নত যে মনে হয় এইমাত্র কোনো পারিবারিক আদালতে এসব আইন অনুমোদিত হয়েছে। বহু আইনজীবী তাদের অধিকার বা দাবি প্রমাণের জন্য ইসলামের সামাজিক আইন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে থাকেন। আরো অবিশ্বাস্য ব্যাপার হল ইসলাম ঘরে থাকা মহিলাদেরকে ব্যাপক অধিকার দিয়েছে। তারা ইচ্ছা করলে ঘরে কাজ করতে পারেন বা নাও করতে পারেন। ইসলাম এভাবে ঘরের নারীকে ও ঘরের শিশুদের লালন ও শিক্ষাদানকারী মহিলাদের প্রভূত সম্মান দিয়েছে। অথচ আমি যখন পাশ্চাত্যের কোনো কোনো মহিলাকে প্রশ্ন করি যে তারা কি করেন তখন তারা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলেন: আমি গৃহিণী বা গৃহবধূ। অথচ ইসলাম ঘরের কাজে নারীর উপস্থিতিকে উচ্চ মর্যাদা দেয়। ইসলাম সম্পর্কে যতই তথ্য পাচ্ছিলাম ততই এর সত্যতা ও যৌক্তিকতা আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল।”

অন্য যে কোনো নও-মুসলিম মহিলার মত ব্রিটিশ নও-মুসলিমা আইভান রাইডলিও হিজাবের বলিষ্ঠ সমর্থক। তিনি বলেছেন,

“পাশ্চাত্য হিজাবকে জুলুম ও দমন-পীড়নের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছে। অথচ আমি এখন অন্যদের চেয়েও এটা বেশি জানি যে হিজাব নারীকে বরং স্বাধীনতা ও শক্তি যোগায়। আমি যখন হিজাব পরে পথে-ঘাটে চলাফেরা করি তখন নিজেকে শক্তিমান মনে করি। হিজাবকে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। কেউ কেউ বলেন, হিজাবধারী মহিলারা আসলে নিজেকে প্রকাশ করতে ভয় পান, তাদের আত্মবিশ্বাস নেই ইত্যাদি। আমার মত এর ঠিক উল্টো। হিজাবধারী মহিলারাই অত্যন্ত স্পষ্টভাবে এটা বোঝাতে চান যে তারা মুসলিম নারী। হিজাব আমার জীবনে ও বিশেষ করে আমার নিরাপত্তা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। হিজাবের আশ্রয়ে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করি।”

পবিত্র কুরআন বিশ্বনবী (সা.)’র সবচেয়ে বড় মুজেজা। এর অশেষ আকর্ষণ ও অলৌকিকত্ব সত্য-সন্ধানীদের অভিভূত করে। যেমন, কুরআন একটি প্রাচীন গ্রন্থ হওয়া সত্ত্বেও বিকৃত হয়নি। আল্লাহ নিজেই এ মহাগ্রন্থকে রক্ষার অঙ্গীকার করেছেন। ব্রিটিশ নও-মুসলিমা আইভান রাইডলি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

“আমি পবিত্র কুরআন পড়ার পর আবারও বাইবেল পড়েছি। আমি বাইবেলের উৎস খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছি। কুরআন নাজিল হওয়ার পর থেকে কখনও বিকৃত হয়নি। অন্যদিকে বাইবেলের প্রথম বিষয়টি হযরত ঈসা (আ.)’র জন্মের ৭০ বছর পর লেখা হয়েছে। আমরা সাংবাদিকরা যখন কোনো ঘটনা ঘটার ২৪ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছি তখন পরস্পর-বিরোধী অনেক তথ্য বা খবরই আমরা শুনতে পাই। আর যে বিষয় সম্পর্কে ৭০ বছর পর লেখা হয় সে বিষয়ের বর্ণনা কতটা সঠিক থাকবে তা বোধগম্য। অবশ্য আমি বাইবেলকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলতে চাই না। বাইবেল পবিত্র গ্রন্থ। এর অনেক বিষয়ই সুন্দর ও স্বর্গীয় কিন্তু নির্ভুল ও যথাযথ নয়। এর কারণ, এ বই লেখা হয়েছে অনেক পরে। এ ছাড়াও বাইবেলের রয়েছে নানা সংস্করণ। আমি যখন কাউকে বলি যে আমাকে বাইবেল দাও, তখন আমাকে বলা হয় কোন বাইবেলটি দেব, কারণ, বাইবেলের অনেক সংস্করণ রয়েছে।”

ইসলাম গ্রহণের পর রাইডলির বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতদের অনেকেই তাকে ত্যাগ করে। এমনকি তার বাবা-মাও তাকে জানায় যে “তুমি বিপদে ভরা ভুল পথ বেছে নিয়েছে।” কিন্তু তাদের অনেকেই আবার কিছু দিন পর রাইডলির কাছে ফিরে আসে। কারণ, তারা আমাকে আগের মতই স্বাভাবিক বরং আগের চেয়েও প্রফুল্ল ও বেশি সুস্থ দেখতে পায়। তারা দেখেছে যে আমি আগের চেয়েও বেশি সৎ কাজ করছি, ও ভালোভাবে কথা বলছি এবং বেশি আত্মবিশ্বাসী।

রাইডলি বর্তমানে ইরানের ইংরেজিভাষী টেলিভিশন প্রেস টিভির সাংবাদিক। মুসলমান হওয়ার কারণে ব্রিটেনে এখন তার সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত আচরণ করছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। তা সত্ত্বেও ইসলামী জীবনে সুখী এই ব্রিটিশ নও-মুসলিম দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছেন: আমি যখনই কোনো হিজাব পরা মহিলাকে দেখি, চিনি বা না চিনি মুচকি হাসি দিয়ে তাকে বলি ‘আসসালামু আলাইকুম’, অর্থাৎ ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’। আপনারাও যখন কোনো পর্দানশীন নারী দেখবেন তাকে সম্মান করবেন বা সালাম দিবেন।”-প্যারিস টুডে