ঢাকা , শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানি আল্লাহর বিশাল নেয়ামত

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আল্লাহ তাঁর বান্দার ওপর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অবারিত অনুগ্রহ এবং নেয়ামত দান করেছেন। দিবস-রজনী তাঁর দানের হাত অবিরল ধারায় প্রসারিত। যতই ব্যয় হোক তা হ্রাস পায় না। তিনি তাঁর বান্দাকে এমন এক নেয়ামত দিয়েছেন, যা ছাড়া মানুষের কোনো উপায় নেই। তিনি তাঁর প্রজ্ঞা দিয়ে তা মানুষের চোখের সামনেই সৃষ্টি করেন। যাতে তারা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তিনি ফেরেশতাদের নির্দেশ দেন, তারা বাতাস প্রবাহিত করে, মেঘমালা তাড়িয়ে নেয় এবং বৃষ্টির ফোঁটা বর্ষণ করে। যেন তাঁর বান্দা ওই নেয়ামত আস্বাদন করতে পারে। ‘তুমি কি দেখ না, আল্লাহ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে, তারপর তা একত্র করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বারিধারা।’ (সূরা নূর : ৪৩)।
আল্লাহ আকাশ থেকে এ নেয়ামত অবতীর্ণ করেন, যেন মানুষ নিজ চোখে তা দেখে। ফলে তা পেতে ও সেটার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে তাদের হৃদয় আন্দোলিত হয়। এ নেয়ামতকে আল্লাহর তাঁর প্রভুত্বের প্রমাণ বানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা কি লক্ষ করে না, আমি ঊষর ভূমির ওপর পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে শস্য উদ্গত করি, যা থেকে তাদের জীবজন্তু আহার্য গ্রহণ করে এবং তারা নিজেরাও। তারা কি তবুও দৃষ্টি দেবে না?’ (সূরা সিজদা : ২৭)।
আল্লাহ তাঁর প্রবল ক্ষমতাবলে সৃষ্টজীবকে এক ফোঁটা পানি অবতীর্ণ করার চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা যে পানীয় পান করো তা কি ভেবে দেখেছ? মেঘমালা থেকে তা কি তোমরা অবতীর্ণ করো নাকি আমিই অবতীর্ণকারী?’ (সূরা ওয়াকিয়া : ৬৮-৬৯)। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ অদৃশ্য নির্দেশে হয়। আল্লাহ ছাড়া তার সময়, পরিমাণ ও উপকারিতা নিশ্চিত করে কেউ জানে না। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান আছে। তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মাতৃগর্ভে কী আছে তা জানেন।’ (সূরা লুকমান : ৩৪)।
বৃষ্টি বর্ষণ আল্লাহর উপাস্য হওয়া ও তিনিই ইবাদতের একমাত্র যোগ্য হওয়ার অন্যতম প্রমাণ। ‘তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর এর দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য বিভিন্ন ফল-ফসল উৎপাদন করেন। তাই তোমরা জ্ঞাতসারে আল্লাহর কোনো সমকক্ষ সাব্যস্ত করো না।’ (সূরা বাকারা : ২২)।
তা পুনরুত্থানেরও প্রমাণ। ‘তাঁর অন্যতম নিদর্শন হলো তুমি ভূমিকে দেখতে পাও শুষ্ক ঊষর, অতঃপর যখন আমি তাতে বারি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয়। যিনি ভূমি জীবিত করেন তিনিই তো মৃতের জীবনদানকারী।’ (সূরা ফুসসিলাত : ৩৯)। পানি দিয়ে তিনি দয়া করেন কিংবা শাস্তি দেন। ‘তারা যদি সত্যপথে প্রতিষ্ঠিত থাকত তাদের আমি প্রচুর বারি বর্ষণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতাম।’ (সূরা জিন : ১৬)।
পানি মর্যাদা, গৌরব ও মহত্ত্বের নিদর্শনবাহী। আল্লাহর আরশ পানির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ‘তাঁর আরশ পানির ওপর প্রতিষ্ঠিত।’ (সূরা হুদ : ৭)। পানি আল্লাহর এমন বিশাল নেয়ামত, যা দ্বারা তিনি আমাদের পূর্ববর্তীদেরও অনুগ্রহ করেছেন। যারা তার শোকর করেছে তাদের সমৃদ্ধি দিয়েছেন। যারা অকৃতজ্ঞ হয়েছে তাদের শাস্তি দিয়েছেন। ‘তারা কি দেখে না, আমি তাদের আগে কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করেছি? তাদের দুনিয়ায় এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যেমনটি তোমাদের করিনি এবং তাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম, আর তাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করেছিলাম।’ (সূরা আনআম : ৬)।
বৃষ্টির আগমনে পৃথিবী উল্লসিত হয়, আন্দোলিত হয়, স্ফীত হয় এবং তার সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়। ফলে তার রূপে চোখ মুগ্ধ হয়। ‘অতঃপর আমি তাতে বারি বর্ষণ করলে তা শস্য-শ্যামলা হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদ্গত করে।’ (সূরা হজ : ৫)। বৃষ্টির আগমনে মানুষ একজন আরেকজনকে সুসংবাদ দিতে থাকে। ‘অতঃপর যখন তিনি তাঁর বান্দার মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন তার কাছে তা পৌঁছিয়ে দেন, তখন তারা হর্ষোৎফুল্ল হয়।’ (সূরা রুম : ৪৮)। বৃষ্টির নেয়ামত পেয়ে শোকর আদায় করলে তা বান্দার আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বান্দা খাবার খেয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে অথবা পানীয় পান করে তাঁর প্রশংসা করলে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন।’ (মুসলিম)।
আল্লাহ বর্ণহীন করে পানি সৃষ্টি করেছেন। তাকে স্বাদহীন করে তৈরি করেছেন। বর্ষণ করেছেন ঘ্রাণহীন করে। একই পানি একই মাটিতে বর্ষিত হয়। আঙুর বাগানসহ এক বা একাধিক শিরবিশিষ্ট বিভিন্ন উদ্ভিদ ও শস্যের উদ্যান জন্ম নেয়। স্বাদের ক্ষেত্রে একটি অন্যটি থেকে সেরা হয়, কোনোটা হয় মিষ্টি, কোনোটা হয় তেঁতো। একটায় থাকে ব্যাধি, আরেকটায় উপশম। রঙহীন এ পানি স্থান-কালের ভিন্নতায় বিস্ময়কর এক সৃষ্টি, যা ভূগর্ভে মিশে থাকে। তা এমন শক্তিশালী, যা বিভিন্ন উপত্যকায়ও আধিপত্য চালায়, পাহাড়েও পৌঁছে যায়। তা এমন বিশাল সৃষ্টি, যা শাস্তি আকারে অবতীর্ণ হলে আল্লাহ ছাড়া কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না। আল্লাহ বলেন, ‘সে বলল, আমি পাহাড়ে আশ্রয় নেব, তা আমাকে পানি থেকে রক্ষা করবে। তিনি বলেন, আল্লাহর শাস্তি থেকে আজ কোনো রক্ষাকারী নেই, তবে তিনি যাকে দয়া করেন।’ (সূরা হুদ : ৪৩)।
পানির উপকারিতা অসংখ্য-অগণিত। পানি সুপেয় মিষ্টি, এর দ্বারা দেহ-মন পরিতৃপ্ত হয়। ‘আমি তোমাদের সুপেয় পানি দান করেছি।’ (সূরা মুরসালাত : ২৭)। পানি দেহ ও হৃদয় পরিশুদ্ধকারী। ‘স্মরণ করো, তিনি তাঁর পক্ষ থেকে স্বস্তির জন্য তোমাদের তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ থেকে তোমাদের ওপর বারি বর্ষণ করেন, তা দিয়ে তোমাদের পবিত্র করার জন্য, তোমাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণের জন্য।’ (সূরা আনফাল : ১১)। আল্লাহ পানিকে বরকতময় করে সৃষ্টি করেছেন। পানির সামান্য ফোঁটায় জমিন ও তার অধিবাসীরা প্রাণশক্তি লাভ করে। উপত্যকায় তা বয়ে যায়। ‘আমি আকাশ থেকে বরকতময় পানি বর্ষণ করেছি।’ (সূরা কাফ : ৯)। পানি দ্বারা আল্লাহ সবধরনের কৃষি-ফসল উৎপাদন করেন। ‘অতঃপর আমি এর দ্বার সবধরনের ফলফসল উৎপন্ন করেছি।’ (সূরা আরাফ : ৫৭)।
অজু করার সময় পানির মাধ্যমে আল্লাহ পাপ মোচন করেন। পানির ফোঁটার সঙ্গে গোনাহ ঝরে পড়ে। আল্লাহ তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রিত করেছেন। তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে পরিমাণমতো পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। বৃষ্টির প্রত্যেক ফোঁটার সংখ্যা তিনি জানেন। ‘আমি আকাশ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি বর্ষণ করেছি।’ (সূরা মোমিনুন : ১৮)। বৃষ্টি বর্ষণের পর ভূগর্ভে তা সংরক্ষিত করে আল্লাহ পানির নেয়ামতকে পূর্ণতা দান করেছেন। মানুষের অন্তরের নিশ্চয়তার জন্য ভূগর্ভের পানির ভা-ার রয়েছে। পানি সহজলভ্য ও সবার নাগালে।
পানি আল্লাহর প্রতি ঈমানকে আবশ্যককারী একটি নিদর্শন। ‘আমি পানি থেকে সব জীবন্ত বস্তু সৃষ্টি করেছি। তারা বিশ্বাসী হবে না?’ (সূরা আম্বিয়া : ৩০)। প্রতিটি মুহূর্তে সর্বত্র পানির বিশাল নেয়ামত আমাদের সঙ্গে থাকে। আমাদের উচিত এর শোকর করা, তা নিয়ে চিন্তা করা এবং পানির অপচয় না করা।

১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৩৯ হিজরি মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

পানি আল্লাহর বিশাল নেয়ামত

আপডেট টাইম : ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আল্লাহ তাঁর বান্দার ওপর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অবারিত অনুগ্রহ এবং নেয়ামত দান করেছেন। দিবস-রজনী তাঁর দানের হাত অবিরল ধারায় প্রসারিত। যতই ব্যয় হোক তা হ্রাস পায় না। তিনি তাঁর বান্দাকে এমন এক নেয়ামত দিয়েছেন, যা ছাড়া মানুষের কোনো উপায় নেই। তিনি তাঁর প্রজ্ঞা দিয়ে তা মানুষের চোখের সামনেই সৃষ্টি করেন। যাতে তারা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তিনি ফেরেশতাদের নির্দেশ দেন, তারা বাতাস প্রবাহিত করে, মেঘমালা তাড়িয়ে নেয় এবং বৃষ্টির ফোঁটা বর্ষণ করে। যেন তাঁর বান্দা ওই নেয়ামত আস্বাদন করতে পারে। ‘তুমি কি দেখ না, আল্লাহ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে, তারপর তা একত্র করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বারিধারা।’ (সূরা নূর : ৪৩)।
আল্লাহ আকাশ থেকে এ নেয়ামত অবতীর্ণ করেন, যেন মানুষ নিজ চোখে তা দেখে। ফলে তা পেতে ও সেটার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে তাদের হৃদয় আন্দোলিত হয়। এ নেয়ামতকে আল্লাহর তাঁর প্রভুত্বের প্রমাণ বানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা কি লক্ষ করে না, আমি ঊষর ভূমির ওপর পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে শস্য উদ্গত করি, যা থেকে তাদের জীবজন্তু আহার্য গ্রহণ করে এবং তারা নিজেরাও। তারা কি তবুও দৃষ্টি দেবে না?’ (সূরা সিজদা : ২৭)।
আল্লাহ তাঁর প্রবল ক্ষমতাবলে সৃষ্টজীবকে এক ফোঁটা পানি অবতীর্ণ করার চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা যে পানীয় পান করো তা কি ভেবে দেখেছ? মেঘমালা থেকে তা কি তোমরা অবতীর্ণ করো নাকি আমিই অবতীর্ণকারী?’ (সূরা ওয়াকিয়া : ৬৮-৬৯)। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ অদৃশ্য নির্দেশে হয়। আল্লাহ ছাড়া তার সময়, পরিমাণ ও উপকারিতা নিশ্চিত করে কেউ জানে না। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান আছে। তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মাতৃগর্ভে কী আছে তা জানেন।’ (সূরা লুকমান : ৩৪)।
বৃষ্টি বর্ষণ আল্লাহর উপাস্য হওয়া ও তিনিই ইবাদতের একমাত্র যোগ্য হওয়ার অন্যতম প্রমাণ। ‘তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর এর দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য বিভিন্ন ফল-ফসল উৎপাদন করেন। তাই তোমরা জ্ঞাতসারে আল্লাহর কোনো সমকক্ষ সাব্যস্ত করো না।’ (সূরা বাকারা : ২২)।
তা পুনরুত্থানেরও প্রমাণ। ‘তাঁর অন্যতম নিদর্শন হলো তুমি ভূমিকে দেখতে পাও শুষ্ক ঊষর, অতঃপর যখন আমি তাতে বারি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয়। যিনি ভূমি জীবিত করেন তিনিই তো মৃতের জীবনদানকারী।’ (সূরা ফুসসিলাত : ৩৯)। পানি দিয়ে তিনি দয়া করেন কিংবা শাস্তি দেন। ‘তারা যদি সত্যপথে প্রতিষ্ঠিত থাকত তাদের আমি প্রচুর বারি বর্ষণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতাম।’ (সূরা জিন : ১৬)।
পানি মর্যাদা, গৌরব ও মহত্ত্বের নিদর্শনবাহী। আল্লাহর আরশ পানির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ‘তাঁর আরশ পানির ওপর প্রতিষ্ঠিত।’ (সূরা হুদ : ৭)। পানি আল্লাহর এমন বিশাল নেয়ামত, যা দ্বারা তিনি আমাদের পূর্ববর্তীদেরও অনুগ্রহ করেছেন। যারা তার শোকর করেছে তাদের সমৃদ্ধি দিয়েছেন। যারা অকৃতজ্ঞ হয়েছে তাদের শাস্তি দিয়েছেন। ‘তারা কি দেখে না, আমি তাদের আগে কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করেছি? তাদের দুনিয়ায় এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যেমনটি তোমাদের করিনি এবং তাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম, আর তাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করেছিলাম।’ (সূরা আনআম : ৬)।
বৃষ্টির আগমনে পৃথিবী উল্লসিত হয়, আন্দোলিত হয়, স্ফীত হয় এবং তার সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়। ফলে তার রূপে চোখ মুগ্ধ হয়। ‘অতঃপর আমি তাতে বারি বর্ষণ করলে তা শস্য-শ্যামলা হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদ্গত করে।’ (সূরা হজ : ৫)। বৃষ্টির আগমনে মানুষ একজন আরেকজনকে সুসংবাদ দিতে থাকে। ‘অতঃপর যখন তিনি তাঁর বান্দার মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন তার কাছে তা পৌঁছিয়ে দেন, তখন তারা হর্ষোৎফুল্ল হয়।’ (সূরা রুম : ৪৮)। বৃষ্টির নেয়ামত পেয়ে শোকর আদায় করলে তা বান্দার আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বান্দা খাবার খেয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে অথবা পানীয় পান করে তাঁর প্রশংসা করলে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন।’ (মুসলিম)।
আল্লাহ বর্ণহীন করে পানি সৃষ্টি করেছেন। তাকে স্বাদহীন করে তৈরি করেছেন। বর্ষণ করেছেন ঘ্রাণহীন করে। একই পানি একই মাটিতে বর্ষিত হয়। আঙুর বাগানসহ এক বা একাধিক শিরবিশিষ্ট বিভিন্ন উদ্ভিদ ও শস্যের উদ্যান জন্ম নেয়। স্বাদের ক্ষেত্রে একটি অন্যটি থেকে সেরা হয়, কোনোটা হয় মিষ্টি, কোনোটা হয় তেঁতো। একটায় থাকে ব্যাধি, আরেকটায় উপশম। রঙহীন এ পানি স্থান-কালের ভিন্নতায় বিস্ময়কর এক সৃষ্টি, যা ভূগর্ভে মিশে থাকে। তা এমন শক্তিশালী, যা বিভিন্ন উপত্যকায়ও আধিপত্য চালায়, পাহাড়েও পৌঁছে যায়। তা এমন বিশাল সৃষ্টি, যা শাস্তি আকারে অবতীর্ণ হলে আল্লাহ ছাড়া কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না। আল্লাহ বলেন, ‘সে বলল, আমি পাহাড়ে আশ্রয় নেব, তা আমাকে পানি থেকে রক্ষা করবে। তিনি বলেন, আল্লাহর শাস্তি থেকে আজ কোনো রক্ষাকারী নেই, তবে তিনি যাকে দয়া করেন।’ (সূরা হুদ : ৪৩)।
পানির উপকারিতা অসংখ্য-অগণিত। পানি সুপেয় মিষ্টি, এর দ্বারা দেহ-মন পরিতৃপ্ত হয়। ‘আমি তোমাদের সুপেয় পানি দান করেছি।’ (সূরা মুরসালাত : ২৭)। পানি দেহ ও হৃদয় পরিশুদ্ধকারী। ‘স্মরণ করো, তিনি তাঁর পক্ষ থেকে স্বস্তির জন্য তোমাদের তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ থেকে তোমাদের ওপর বারি বর্ষণ করেন, তা দিয়ে তোমাদের পবিত্র করার জন্য, তোমাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণের জন্য।’ (সূরা আনফাল : ১১)। আল্লাহ পানিকে বরকতময় করে সৃষ্টি করেছেন। পানির সামান্য ফোঁটায় জমিন ও তার অধিবাসীরা প্রাণশক্তি লাভ করে। উপত্যকায় তা বয়ে যায়। ‘আমি আকাশ থেকে বরকতময় পানি বর্ষণ করেছি।’ (সূরা কাফ : ৯)। পানি দ্বারা আল্লাহ সবধরনের কৃষি-ফসল উৎপাদন করেন। ‘অতঃপর আমি এর দ্বার সবধরনের ফলফসল উৎপন্ন করেছি।’ (সূরা আরাফ : ৫৭)।
অজু করার সময় পানির মাধ্যমে আল্লাহ পাপ মোচন করেন। পানির ফোঁটার সঙ্গে গোনাহ ঝরে পড়ে। আল্লাহ তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রিত করেছেন। তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে পরিমাণমতো পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। বৃষ্টির প্রত্যেক ফোঁটার সংখ্যা তিনি জানেন। ‘আমি আকাশ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি বর্ষণ করেছি।’ (সূরা মোমিনুন : ১৮)। বৃষ্টি বর্ষণের পর ভূগর্ভে তা সংরক্ষিত করে আল্লাহ পানির নেয়ামতকে পূর্ণতা দান করেছেন। মানুষের অন্তরের নিশ্চয়তার জন্য ভূগর্ভের পানির ভা-ার রয়েছে। পানি সহজলভ্য ও সবার নাগালে।
পানি আল্লাহর প্রতি ঈমানকে আবশ্যককারী একটি নিদর্শন। ‘আমি পানি থেকে সব জীবন্ত বস্তু সৃষ্টি করেছি। তারা বিশ্বাসী হবে না?’ (সূরা আম্বিয়া : ৩০)। প্রতিটি মুহূর্তে সর্বত্র পানির বিশাল নেয়ামত আমাদের সঙ্গে থাকে। আমাদের উচিত এর শোকর করা, তা নিয়ে চিন্তা করা এবং পানির অপচয় না করা।

১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৩৯ হিজরি মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ