বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মাওলানা দৌলত আলী খান আল্লাহ তায়ালার অপূর্ব সৃষ্টিগুলোর মধ্যে নদীর সৃষ্টি অনন্য। পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগের একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদনদী। শুধু পৃথিবীতে নয়, জান্নাতেও প্রবহমান নদীর সৌন্দর্য অনুভব করা যাবে, যা কোরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। নদীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উদারতা। নদী নিজেকে আল্লাহর সমুদয় সৃষ্টির জন্য বিলিয়ে দেয়। নদী-সাগরের তলদেশে হীরা-মুক্তার অবস্থান। এছাড়াও মাছসহ বহু হালাল প্রাণীর জলাবাস রয়েছে। এসব নেয়ামত মানবজাতির ব্যবহারের পথে নদী কখনও বাধা হয় না।
নদী নিজের গর্ভে ধারণকৃত পানি মানবজাতির কল্যাণে উৎসর্গ করে। এটাই তার উদারনীতি। তার বুকের ওপর দিয়ে টাইটানিকের মতো বিশাল বিশাল জাহাজ-স্টিমার চলতে সুযোগ করে দেয়। জেলেদের বারবার জাল দিয়ে মাছ কুড়িয়ে নেওয়ার মধ্যে ক্লান্তবোধ করে না। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির পানি গলে বন্যাকবলিত মানুষকে কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়। এভাবে প্রাণহীন নদী-সাগর নিজের উদারতার পরিচয় দেয়।
কোরআনে নদীর নান্দনিক দৃশ্যের কথা
দূর থেকে নদীর দৃশ্যগুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগে। নদীর উত্তাল ঢেউ বেলাভূমিতে আছড়ে পড়ার দৃশ্যটি আরও বেশি চমৎকার। নদীর জোয়ারভাটার অপরূপ দৃশ্য পর্যটককে মুগ্ধ করে। নদীর খেয়াঘাটে সারি সারি জাহাজ ও নৌকার মনোহারী চিত্র ভ্রমণকারীর অন্তর কাড়ে। নদীর এ নান্দনিক দৃশ্যের কথা কোরআনের একাধিক স্থানে উচ্চারিত হয়েছে। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন; উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না; উভয় দরিয়া থেকে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল। দরিয়ায় বিচরণশীল পর্বতদৃশ্য নৌযানগুলো তাঁরই নিয়ন্ত্রণধীন, অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? (সূরা রহমান : ১৯-২৫)।
দুনিয়ার চারটি নদীর উৎস জান্নাত
নদী মানবজাতির প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত স্বর্গীয় উপহারস্বরূপ। নদীর অস্তিত্ব শুধু দুনিয়ায় নয়, বরং আখেরাতেও এর অস্তিত্ব রয়েছে, যা কোরআন ও হাদিসের একাধিক বাণী দ্বারা প্রমাণিত। নদীকে প্রকৃতি ও পরিবেশের ধারাবাহিকতার সৃষ্টি বলে সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে হবে না। কারণ নদী ও সাগরের এ বিশাল আবদ্ধ পানিকে সংরক্ষণ করছেন একমাত্র আল্লাহ। পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ হচ্ছে স্থলভূমি আর বাকি তিন অংশ পানি। এ পৃথিবী নামের পানিজগতে মানবজাতিসহ সব সৃষ্টিকে টিকিয়ে রাখছেন শুধু এক আল্লাহই। পৃথিবীর মানচিত্রে অবস্থিত চারটি নদীর মূল উৎস হচ্ছে জান্নাত। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুনিয়ায় কয়েকটি নদী আছে, যেগুলো জান্নাতেরও নদী বটে। আর তা হলো সাইহান, জাইহান, ফুরাত ও নীল।’ (মুসলিম : ৭৩৪০)। আরও বলেন, ‘সিদরাতুল মুনতাহার গোড়া থেকে জান্নাতের চারটি নদী প্রবাহিত হবে। সেগুলো হচ্ছে নীল, ফুরাত, সাইহান ও জাইহান।’ (প্রাগুক্ত)।
জান্নাত নদী দ্বারা সজ্জিত
জান্নাতকে আল্লাহ তায়ালা নদী দ্বারা সজ্জিত করেছেন। নদীই জান্নাতের সৌন্দর্য রক্ষার একটি মনোহারী উপকরণ। এ জান্নাত মোমিন বান্দারা সৎ আমলের বিনিময়স্বরূপ পাবেন। বিচিত্র নদনদী দ্বারা জান্নাতকে সাজিয়েছেন। এতে পানির নদী, দুধের নদী, সুরার নদী ও মধুর নদী রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুত্তাকিদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলো তাতে আছে নির্মল পানির নদী, আছে দুধের নদী, যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নদী, আছে পরিশোধিত মধুর নদী এবং তথায় তাদের জন্য থাকবে বিবিধ ফলমূল ও তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা।’ (সূরা মুহাম্মদ : ১৫)।
নদীতে মানবজাতির বহু নেয়ামত নিহিত আছে
নদনদী ছাড়া মানবজাতির বেঁচে থাকা অসম্ভব। এর ওপর মানবজাতির অনেক কিছু নির্ভর করে। নদী-সাগর থেকে মানুষের প্রাত্যহিক ব্যবহার্য পানি পাওয়া নিশ্চিত থাকে। এছাড়া কৃষি কাজের জন্য পানি জোগানও নদী থেকে দেওয়া সম্ভব হয়। নদী মানুষের খাদ্য ও রোজগারের প্রধান উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে। নদী-সাগরকে কেন্দ্র মানুষ খাদ্যোৎপাদন, মাছ শিকার, পণ্য পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই নভোম-ল ও ভূম-ল সৃষ্টিতে, দিন ও রাতের পরিবর্তনে, জাহাজগুলোর চলাচলে যা মানুষের লাভজনক এবং সম্ভার নিয়ে সমুদ্রে চলাচল করে।’ (সূরা বাকারা : ১৬৪)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমাদের জন্য সামুদ্রিক শিকার ধরা ও তা খাওয়া হালাল করা হয়েছে, তোমাদের ও মুসাফিদের জন্য।’ (সূরা মায়েদা : ৯৬)।
কেয়ামতের দিন দুনিয়ার নদী বিস্ফোরিত হবে
ভয়াবহ পরিধি ও গভীরতার নদী-সাগর, যার অভ্যন্তরে রয়েছে বিচিত্র জীবজন্তুর মহাজগৎ। কেয়ামতের দিন এই সাগরে বিস্ফোরণ ঘটবে এবং তা থেকে ভয়াবহ আগুন জলে উঠবে। সাগরের উত্তাল ঢেউ পৃথিবীর অস্তিত্বকে ধ্বংস করে দেবে। বিভীষিকাময় পরিস্থিতি গড়ে তুলবে। সেই সময় কেয়ামতের ভয়ংকর অবস্থা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন সাগরকে বিস্ফোরিত করে দেওয়া হবে।’ (সূরা ইনফিতার : ৩)।
আরও বলেন, ‘এবং যখন সাগরগুলোকে উত্তাল করে তোলা হবে।’ (সূরা তাকভির : ৬)।
লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম