ইসকেমিক হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয়

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ হৃদপিণ্ড আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। চার প্রকোষ্ঠের হৃদযন্ত্র; এককথায় মস্তিষ্কের পরই এটির স্থান। হৃদযন্ত্র মানবদেহের জন্য অনেক জরুরি কাজ করে থাকে। বিশ্বের সমগ্র জনগোষ্ঠীর ১.৭২ শতাংশ বা ১২৬ মিলিয়ন ‘ইসকেমিক হার্ট ডিজিস’ বা হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন স্বল্পতাজনিত রোগে আক্রান্ত। হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে পার্থক্য হলেই হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন স্বল্পতা রোগ দেখা দেয়। হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে রক্ত চলাচল বন্ধ বা বাধাপ্রাপ্ত হলে রক্তনালির সংকোচন বা ব্লক কমপক্ষে ৭০ শতাংশ হলেই হৃদযন্ত্রের মাংসপেশিতে রক্ত তথা অক্সিজেন সরবরাহ কমে গিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। অক্সিজেন স্বল্পতার প্রাথমিক অবস্থা হচ্ছে ইসকেমিয়া বা অ্যানজাইনা। আর এটির তীব্র বা প্রকট অবস্থা হচ্ছে ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক।

হৃদপিণ্ডের কাজ : হৃদপিণ্ডের কাজ হলো দেহের প্রতিটি কোষে খাদ্যকণা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ফুসফুস থেকে বিশুদ্ধ অক্সিজেন কোষে কোষে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। বিশুদ্ধকরণের জন্য কোষ থেকে দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড ফুসফুসে পৌঁছিয়ে দেয়। দেহের তাপমাত্রা ও শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড নিজেই নিজেকে দুটি রক্তনালির মাধ্যমে অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে থাকে। এ দুটি রক্তনালির কমপক্ষে একটি আংশিক বা পূর্ণভাবে বন্ধ হলেই সমস্যা দেখা দেয়।

যারা ঝুঁকিতে : নারী বা পুরুষের অতিরিক্ত স্থূলতা, খাবারে অনিয়ম, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অত্যধিক চর্বি, কায়িক পরিশ্রম না করা, পারিবারিক ইতিহাস এ রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

লক্ষণ : বুকব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব, বুক ভারী ভারী লাগা, ঘাড়ে ব্যথা, চোয়ালে ব্যথা। এসব লক্ষণ ছাড়াও এ রোগে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা : বুকব্যথার মাধ্যমেই প্রথম এ রোগের আভাস টের পাওয়া যায়। হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনস্বল্পতা ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় বিশ্রাম বা জিহ্বার নিচে নাইট্রেট স্প্রে বা ট্যাবলেট দিলে বুকের ব্যথা কমে যায়। কিন্তু জটিল পর্যায়ে বিশ্রাম এবং নাইট্রেট জিহ্বার নিচে ব্যবহার করেও বুকের ব্যথা কমানো যায় না। আক্রান্ত রোগীর জন্য পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে পরিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রদান করবেন এবং পরামর্শ দেবেন।

প্রতিকার : রুটিনমাফিক জীবনযাপন ও প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন। বেশি শাকসবজি খাবেন। গিলা, কলিজা, গরু ও খাসির মাংস খাওয়া বাদ দিন। তেল, চর্বি, মিষ্টি কম খাবেন। ধূমপান ও জর্দা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। পরিমিত বিশ্রাম ও ঘুম দিন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা থাকলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। উত্তেজনা তৈরি হয়- এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। আলগা লবণ খাবেন না। দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করুন। মনে রাখবেন, হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনস্বল্পতা চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই সহজ ও নিরাপদ।

লেখক : হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী অধ্যাপক ও কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজি বিভাগ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট, মিরপুর, ঢাকা হটলাইন : ১০৬৭২

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর