ঢাকা , রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আঙিনায় আলুবোখারা চাষে সফলতা

আলুবোখারা একটি মসলাজাতীয় ফসল। এটি মধুপুরে নতুন ফসল হলেও বাংলাদেশে কিন্তু নতুন বলে মনে হয় না। মধুপুরের লাল মাটিতে এ মসলাজাতীয় ফসল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। শখের বসে মধুপুরের বিভিন্ন এলাকায় শৌখিন কৃষকরা কেউ কেউ বাড়ির আঙিনায় পরীক্ষামূলকভাবে এ ফসল চাষ শুরু করেছেন।
জানা যায়, আলুবোখারা পামজাতীয় ফসল। অনেকের মতে এ ফসলের আদি ভূমি মধ্য এশিয়ায়। এশিয়া অঞ্চলের অ্যালোভেরা উদ্ভিদ প্রজাতির মানানী, মেথাইল এবং রেড বাট জাতের আলুবোখারা গাছের চাষ হয়ে থাকে। ইউরোপীয় পাল্ম রোসাসে পরিবারের সম্পূরক ফলজ উদ্ভিদের একটি প্রজাতি হচ্ছে বাংলাদেশের এই আলুবোখারা।
বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে এশিয়া ও ইউরোপিয়ান জাত ছাড়াও বারী-১ জাতের আলুবোখারা চাষ হচ্ছে। আলুবোখারা শুকনা পামফল, প্রথমে এটি খেতে টক জাতীয় হয় এবং পাকার পর রং লাল হলে খেতে এটি মিষ্টি লাগে।
বর্তমানে বাংলাদেশে মধুপুরের সুমী নার্সারি, ফরিদপুরের মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সারি, কাপ্তাই রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও বগুড়ার মহাস্থানগড় সবুজ নার্সারিতে আলুবোখারার কলম চারা পাওয়া যায়।
আলুবোখারা খেতে স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। আলুবোখারা মূলত পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, সালাদ, বোরহানী তৈরির কাজে লাগে। জ্যাম, জেলি, আচারসহ নানা মুখোরোচক খাবারও বানানো হয় এই ফল দিয়ে।
আলুবোখারা পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়াও গড় এলাকায় বাণিজ্যিক চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বাংলাদেশে আলুবোখারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দিন দিন তা বেড়েই চলছে। সরকারের তথ্য বাতায়ন থেকে জানা যায়, গত ২০২২ সালে আমদানির তালিকায় আলুবোখারার পরিমাণ ছিল আড়াই হাজার টনের উপরে। বারি মসলা কেন্দ্রের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালে বারি আলুবোখারা-১ কৃষকদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। আর এই গাছগুলোর প্রতিটি থেকে সর্বোচ্চ ৭০ কেজি পর্যন্ত আলুবোখারা পাওয়া যায়।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. গোপাল সাহা জানান, আলুবোখারা গাছ থেকে টানা ১৫-২০ বছর রোগ বালাইহীনভাবে ফলন পাওয়া সম্ভব। আলু বোখারা সাধারণত উঁচু এলাকায় ভালো হয়। নিম্নাঞ্চল বা যেখানে পানি জমে থাকে সেখানে গাছ মরে যায়। ইরাক, ইরান, পাকিস্তান ও ভারতে এর ব্যাপক প্রসার রয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ বেশ লাভজনক। তবে ভারতের কাশ্মির, হিমালয়, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরানে প্রচুর পরিমাণে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়।
তিনি আরো জানান, আলুবোখারায় ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। আলু বোখরায় রয়েছে ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন এ বি সি কে এবং ই।

এ ছাড়াও অ্যালোভেরায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। তাই আলুবোখারা মানবদেহের জন্য তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই। আর বাংলাদেশে এই মসলাজাতীয় ফসলটি চাষের জান্য ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে মাটির গুণাগুণ অনুযায়ী। আমাদের দেশের কৃষকদেরকে যদি সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা বা সহযোগিতা করা হয় তাহলে আলুবোখারার বাণিজ্যিক চাষ সম্ভব ও সফল হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

আঙিনায় আলুবোখারা চাষে সফলতা

আপডেট টাইম : ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪

আলুবোখারা একটি মসলাজাতীয় ফসল। এটি মধুপুরে নতুন ফসল হলেও বাংলাদেশে কিন্তু নতুন বলে মনে হয় না। মধুপুরের লাল মাটিতে এ মসলাজাতীয় ফসল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। শখের বসে মধুপুরের বিভিন্ন এলাকায় শৌখিন কৃষকরা কেউ কেউ বাড়ির আঙিনায় পরীক্ষামূলকভাবে এ ফসল চাষ শুরু করেছেন।
জানা যায়, আলুবোখারা পামজাতীয় ফসল। অনেকের মতে এ ফসলের আদি ভূমি মধ্য এশিয়ায়। এশিয়া অঞ্চলের অ্যালোভেরা উদ্ভিদ প্রজাতির মানানী, মেথাইল এবং রেড বাট জাতের আলুবোখারা গাছের চাষ হয়ে থাকে। ইউরোপীয় পাল্ম রোসাসে পরিবারের সম্পূরক ফলজ উদ্ভিদের একটি প্রজাতি হচ্ছে বাংলাদেশের এই আলুবোখারা।
বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে এশিয়া ও ইউরোপিয়ান জাত ছাড়াও বারী-১ জাতের আলুবোখারা চাষ হচ্ছে। আলুবোখারা শুকনা পামফল, প্রথমে এটি খেতে টক জাতীয় হয় এবং পাকার পর রং লাল হলে খেতে এটি মিষ্টি লাগে।
বর্তমানে বাংলাদেশে মধুপুরের সুমী নার্সারি, ফরিদপুরের মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সারি, কাপ্তাই রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও বগুড়ার মহাস্থানগড় সবুজ নার্সারিতে আলুবোখারার কলম চারা পাওয়া যায়।
আলুবোখারা খেতে স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। আলুবোখারা মূলত পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, সালাদ, বোরহানী তৈরির কাজে লাগে। জ্যাম, জেলি, আচারসহ নানা মুখোরোচক খাবারও বানানো হয় এই ফল দিয়ে।
আলুবোখারা পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়াও গড় এলাকায় বাণিজ্যিক চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বাংলাদেশে আলুবোখারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দিন দিন তা বেড়েই চলছে। সরকারের তথ্য বাতায়ন থেকে জানা যায়, গত ২০২২ সালে আমদানির তালিকায় আলুবোখারার পরিমাণ ছিল আড়াই হাজার টনের উপরে। বারি মসলা কেন্দ্রের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালে বারি আলুবোখারা-১ কৃষকদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। আর এই গাছগুলোর প্রতিটি থেকে সর্বোচ্চ ৭০ কেজি পর্যন্ত আলুবোখারা পাওয়া যায়।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. গোপাল সাহা জানান, আলুবোখারা গাছ থেকে টানা ১৫-২০ বছর রোগ বালাইহীনভাবে ফলন পাওয়া সম্ভব। আলু বোখারা সাধারণত উঁচু এলাকায় ভালো হয়। নিম্নাঞ্চল বা যেখানে পানি জমে থাকে সেখানে গাছ মরে যায়। ইরাক, ইরান, পাকিস্তান ও ভারতে এর ব্যাপক প্রসার রয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ বেশ লাভজনক। তবে ভারতের কাশ্মির, হিমালয়, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরানে প্রচুর পরিমাণে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়।
তিনি আরো জানান, আলুবোখারায় ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। আলু বোখরায় রয়েছে ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন এ বি সি কে এবং ই।

এ ছাড়াও অ্যালোভেরায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। তাই আলুবোখারা মানবদেহের জন্য তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই। আর বাংলাদেশে এই মসলাজাতীয় ফসলটি চাষের জান্য ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে মাটির গুণাগুণ অনুযায়ী। আমাদের দেশের কৃষকদেরকে যদি সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা বা সহযোগিতা করা হয় তাহলে আলুবোখারার বাণিজ্যিক চাষ সম্ভব ও সফল হবে।