ফুসফুস ক্যানসারের ৯০ ভাগই হয় ধূমপান বা তামাকজাতীয় পণ্য সেবনে। যারা প্রতিদিন ২০-৩০টি বিড়ি বা সিগারেট পান করে থাকেন, তাদের ফুসফুস ক্যানাসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ২০-৩০ শতাংশ বেশি। এছাড়া তাদের আশপাশে যারা থাকেন, তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। ফুসফুস আমাদের শ্বাসযন্ত্রের মেইন অর্গান। দুটো ফুসফুস থাকে। যে কোনোটি আক্রান্ত হতে পারে। ছড়িয়ে যেতে পারে এক ফুসফুস থেকে আরেকটিতে। ফুসফুস ক্যানসার দুধরনের হতে পারে- প্রাইমারি (ইটসেল্প) ও সেকেন্ডাইজ। প্রাইমারি ফুসফুস ক্যানসার হলো- যদি ফুসফুস ইটসেল্প (নিজেই) আক্রান্ত হয়। ফুসফুস থেকে উৎপত্তি সেন্ট্রাল হতে পারে, আবার পেরিফেরিও (প্রান্তিক) হতে পারে। ফুসফুসের মাঝখানেও হতে পারে। এছাড়া অন্য জায়গা থেকেও ফুসফুসে ক্যানসার আসতে পারে, যাকে বলে সেকেন্ডাইজ ক্যানসার। অন্য অর্গান থেকে যেমন- লিভার, নাড়িভুড়ি থেকে। কিডনি ও ব্রেস্ট (স্তন) থেকেও আসতে পারে।
অন্যান্য ক্যানসারের মতো ফুসফুসের ক্যানসার চার স্তরে ভাগ করা যায়। স্টেজ ওয়ান, স্টেজ টু, স্টেজ থ্রি, স্টেজ ফোর। আর্লি স্টেজ বলা হয়- যদি থ্রি সেন্টিমিটার বা তার চেয়ে ছোট হয় এবং সেটা যদি মিডলাইন থেকে দূরে হয়। অন্য কোনো ইনভলভমেন্ট না থাকলে এটিকে বলে স্টেজ ওয়ান। যদি থ্রি সেন্টিমিটারের চাইতে সাইজে বড় হয়, অন্য অর্গান (হার্ট) ইনভলভ হলেই তা স্টেজ টু। এভাবে অন্যগুলো নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
প্রাথমিকভাবে কিছু রোগীর ফুসফুস ক্যানসারের ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ থকে না। অন্য কোনো কারণে এক্স-রে করতে গেলে ধরা পড়ে। এছাড়া আর্লি স্টেজে কাশি থাকে। অনেকদিন থেকে কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত যায়। ব্লাডমিশ্রিত শ্লেষ্মা, শরীর শুকিয়ে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, খাওয়ায় অরুচি- এগুলোই এ ক্যানসারের লক্ষণ। আরেকটু বেশি মাত্রায় হলে হাড়ে ব্যথা হয়, লিভারে গেলে জন্ডিস আকারে দেখা দেয়। রোগী খেতে পারেন না। আর্লি স্টেজে হার্ট ইনভলভড হলে হার্টের স্পন্দন পরিবর্তন হয়ে যায়। বুকে ব্যথা হয়। পালস্ রেইট বেড়ে যায়। হাড়ে হলে খুব ব্যথা হয়। হাতে হলে হাতে ব্যথা হয়। মেরুদ- হলে সেখানে ব্যথা হয়। পায়খানা-প্রস্রাব ঠিকমতো হয় না, ধরে রাখতে পারে না। অবশ হয়ে যেতে পারে।
যে কোনো ক্যানসারের চিকিৎসা তিনভাবে করা হয়ে থাকে। অনেক সময় তিনের বেশিও করা হয়। কথা হচ্ছে স্টেজ ওয়ান নিয়ে। স্টেজ টু হয়ে থাকলে কেটে ফেলে দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। এক্ষেত্রে রোগী অন্য রোগে আক্রান্ত যদি না হয়, বয়স যদি কম হয় এবং শ্বাসকষ্ট না থাকে, এজন্য আর্লি স্টেজে হলে কেটে ফেলে দিয়ে কেমোথেরাপি দিলে রোগী ভালো থাকে। সার্জারি ছাড়া আর্লি স্টেজে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি করা যায়। এছাড়া এখন আরও কিছু থেরাপি বের হয়েছে। কিছু মেডিসিন বের হয়েছে। এগুলো দিয়েও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসা এখন আমাদের দেশেই করা হয়। তবে কেমোথেরাপি বা সার্জারি বাংলাদেশে সাধারণত ক্যানসার নিরাময়ের বিশেষায়িত হাসপাতালে সম্ভব হয়। প্রাইভেট হাসপাতালেও সম্ভব। তবে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।