ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেবে বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অনেকটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তাই আসন্ন রমজান মাসজুড়ে সাংগঠনিক শক্তি জানান দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন বর্জন করা মাঠের বৃহৎ বিরোধী দলটি। কৌশল হিসাবে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত। ইফতার রাজনীতির আড়ালেই মূলত সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেবে দলটি। দলের নীতিনির্ধারক মহল মনে করেন, এ উদ্যোগ সফল করা গেলে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।

এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রের পাশাপাশি এবার সাংগঠনিক জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতারের আয়োজন করতে চায় দলটি। এসব ইফতার অনুষ্ঠানে কারাবন্দি ও গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের পরিবার এবং কারামুক্ত নেতাকর্মীদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। বুধবার রাতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের এক ভার্চুয়াল সভায় এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববারের মধ্যে বিভাগভিত্তিক রমজান মাসকেন্দ্রিক কর্মপরিকল্পনা লিখিতভাবে দিতে বলা হয়েছে সম্পাদকদের। যা পরবর্তী স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে পৃথক কর্মসূচি দেবে বিএনপি। সভায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশের প্রস্তাব করা হয়। আগামী সপ্তাহে কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। রমজানের মধ্যেও জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করবে দলটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে সভায় সদ্য কারামুক্ত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও অংশ নেন এবং বক্তব্য দেন। এতে রমজান মাসজুড়ে কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে প্রত্যেক সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা নেতারা মতামত দেন। পরে বিভাগভিত্তিক লিখিতভাবে মতামত দেওয়ার জন্য বলা হয়। তবে চলমান পরিস্থিতিতে ইফতার আয়োজন কোনোভাবেই জাঁকজমকপূর্ণ না করার জন্য বলেছেন হাইকমান্ড। একই সঙ্গে গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে বেশি করে ইফতার সামগ্রী অথবা খাদ্যসামগ্রী বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জন্য একই নির্দেশনা দেওয়া হবে। জানতে চাইলে বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স যুগান্তরকে বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, রমজান মাসে দলীয় কর্মকাণ্ড, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এসব প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন আলোচনা হয়। সার্বিকভাবে মাসব্যাপী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের, বিশেষ করে কারাবন্দি নেতাকর্মীদের পরিবার, মামলার আসামি তাদের নিয়ে ইফতার করা, দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জর্জরিত তাদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী অথবা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা-এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, কারাবন্দি ও গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের পরিবার, কারামুক্ত নেতাকর্মী, মেহনতি মানুষ এবং অত্যাচারিত ও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতার আয়োজনের বিষয়ে সভায় সবাই মতামত দিয়েছেন। তৃণমূলের সব নেতাকর্মীকে সমন্বয় করে ইফতার হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে জনগণের দল। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিসহ জনগণের দাবি নিয়েও বিএনপির কর্মসূচি থাকবে।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটা হতাশায় ভুগছেন নেতাকর্মীরা। তাদের আবারও সক্রিয় ও উজ্জীবিত করতেই রমজান মাসজুড়ে চলবে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া। কোথাও কোনো কোন্দল বা দুর্বলতা থাকলে তা দূর করা হবে। ইফতার পার্টির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার চিন্তা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর হবে। এছাড়া রমজানকেন্দ্রিক সাংগঠনিক তৎপরতায় সরকার সেভাবে বাধাও দিতে পারবে না। এ সুযোগ তারা কাজে লাগাতে চান।

নেতারা আরও জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে চারটি ইফতারের আয়োজন করা হতে পারে। এতিম ও আলেম-উলামা, পেশাজীবী, কূটনীতিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে ইফতারের আয়োজনের কথা রয়েছে। এসব ইফতারে আমন্ত্রিতদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবেও গুম-খুন ও কারাবন্দি নেতাকর্মীদের পরিবার ও কারামুক্ত নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতার করার চিন্তা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে রাজধানী ও এর আশপাশে থাকা এসব পরিবার ও কারামুক্ত নেতাকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে এই ইফতারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এর বাইরে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানায় ইফতার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতার আয়োজন করবে।

বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক বলেন, সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সক্রিয় ও সংঘবদ্ধ রাখতে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে কাজ করা হচ্ছে। রমজানে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যন্ত ইফতার মাহফিল আয়োজন এবং ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের মাঝে ইফতার সামগ্রী পাঠানোর বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি একদফা আন্দোলন জোরদার করলে রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর দলের অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। শুরু হয় সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত দলটি হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করেছে। দলটির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশকে ঘিরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ১৮৪টির বেশি মামলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৬৮৪ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় নির্বাচনের আগে ২৭ হাজার ৫১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। একজন সাংবাদিকসহ মৃত্যুবরণ করেন ২৮ জন। আহত হন ৯ হাজার ৭০৪ জন। সাজা দেওয়া হয় দেড় হাজারেরও অধিক নেতাকর্মীকে। যদিও নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ে অধিকাংশ নেতাকর্মী কারামুক্ত হয়েছেন। তবে এখনো ঢাকাসহ সারা দেশে বেশকিছু নেতাকর্মী কারাবন্দি আছেন বলে দপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

রমজানে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেবে বিএনপি

আপডেট টাইম : ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ মার্চ ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অনেকটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তাই আসন্ন রমজান মাসজুড়ে সাংগঠনিক শক্তি জানান দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন বর্জন করা মাঠের বৃহৎ বিরোধী দলটি। কৌশল হিসাবে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত। ইফতার রাজনীতির আড়ালেই মূলত সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেবে দলটি। দলের নীতিনির্ধারক মহল মনে করেন, এ উদ্যোগ সফল করা গেলে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।

এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রের পাশাপাশি এবার সাংগঠনিক জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতারের আয়োজন করতে চায় দলটি। এসব ইফতার অনুষ্ঠানে কারাবন্দি ও গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের পরিবার এবং কারামুক্ত নেতাকর্মীদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। বুধবার রাতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের এক ভার্চুয়াল সভায় এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববারের মধ্যে বিভাগভিত্তিক রমজান মাসকেন্দ্রিক কর্মপরিকল্পনা লিখিতভাবে দিতে বলা হয়েছে সম্পাদকদের। যা পরবর্তী স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে পৃথক কর্মসূচি দেবে বিএনপি। সভায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশের প্রস্তাব করা হয়। আগামী সপ্তাহে কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। রমজানের মধ্যেও জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করবে দলটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে সভায় সদ্য কারামুক্ত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও অংশ নেন এবং বক্তব্য দেন। এতে রমজান মাসজুড়ে কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে প্রত্যেক সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা নেতারা মতামত দেন। পরে বিভাগভিত্তিক লিখিতভাবে মতামত দেওয়ার জন্য বলা হয়। তবে চলমান পরিস্থিতিতে ইফতার আয়োজন কোনোভাবেই জাঁকজমকপূর্ণ না করার জন্য বলেছেন হাইকমান্ড। একই সঙ্গে গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে বেশি করে ইফতার সামগ্রী অথবা খাদ্যসামগ্রী বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জন্য একই নির্দেশনা দেওয়া হবে। জানতে চাইলে বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স যুগান্তরকে বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, রমজান মাসে দলীয় কর্মকাণ্ড, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এসব প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন আলোচনা হয়। সার্বিকভাবে মাসব্যাপী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের, বিশেষ করে কারাবন্দি নেতাকর্মীদের পরিবার, মামলার আসামি তাদের নিয়ে ইফতার করা, দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জর্জরিত তাদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী অথবা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা-এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, কারাবন্দি ও গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের পরিবার, কারামুক্ত নেতাকর্মী, মেহনতি মানুষ এবং অত্যাচারিত ও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতার আয়োজনের বিষয়ে সভায় সবাই মতামত দিয়েছেন। তৃণমূলের সব নেতাকর্মীকে সমন্বয় করে ইফতার হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে জনগণের দল। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিসহ জনগণের দাবি নিয়েও বিএনপির কর্মসূচি থাকবে।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটা হতাশায় ভুগছেন নেতাকর্মীরা। তাদের আবারও সক্রিয় ও উজ্জীবিত করতেই রমজান মাসজুড়ে চলবে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া। কোথাও কোনো কোন্দল বা দুর্বলতা থাকলে তা দূর করা হবে। ইফতার পার্টির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার চিন্তা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর হবে। এছাড়া রমজানকেন্দ্রিক সাংগঠনিক তৎপরতায় সরকার সেভাবে বাধাও দিতে পারবে না। এ সুযোগ তারা কাজে লাগাতে চান।

নেতারা আরও জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে চারটি ইফতারের আয়োজন করা হতে পারে। এতিম ও আলেম-উলামা, পেশাজীবী, কূটনীতিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে ইফতারের আয়োজনের কথা রয়েছে। এসব ইফতারে আমন্ত্রিতদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবেও গুম-খুন ও কারাবন্দি নেতাকর্মীদের পরিবার ও কারামুক্ত নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতার করার চিন্তা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে রাজধানী ও এর আশপাশে থাকা এসব পরিবার ও কারামুক্ত নেতাকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে এই ইফতারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এর বাইরে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানায় ইফতার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতার আয়োজন করবে।

বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক বলেন, সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সক্রিয় ও সংঘবদ্ধ রাখতে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে কাজ করা হচ্ছে। রমজানে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যন্ত ইফতার মাহফিল আয়োজন এবং ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের মাঝে ইফতার সামগ্রী পাঠানোর বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি একদফা আন্দোলন জোরদার করলে রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর দলের অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। শুরু হয় সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত দলটি হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করেছে। দলটির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশকে ঘিরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ১৮৪টির বেশি মামলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৬৮৪ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় নির্বাচনের আগে ২৭ হাজার ৫১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। একজন সাংবাদিকসহ মৃত্যুবরণ করেন ২৮ জন। আহত হন ৯ হাজার ৭০৪ জন। সাজা দেওয়া হয় দেড় হাজারেরও অধিক নেতাকর্মীকে। যদিও নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ে অধিকাংশ নেতাকর্মী কারামুক্ত হয়েছেন। তবে এখনো ঢাকাসহ সারা দেশে বেশকিছু নেতাকর্মী কারাবন্দি আছেন বলে দপ্তর সূত্র জানিয়েছে।