ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু, হত্যার অভিযোগ ছেলেদের বিরুদ্ধে

মাগুরার শালিখায় কাজী রুনা (৩৫) নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ছেলেদের বিরুদ্ধে।

তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নতুনবাজার রোড এলাকার কাজী গোলাম মোস্তফা টুকুর মেয়ে। তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মাগুরা সদর থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত আছেন।

শনিবার সকালে ভাড়াবাড়ির শয়নকক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকা লাশটি উদ্ধারের পর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে রুনার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত প্যাথেডিন নেওয়ার অসংখ্য চিহ্ন দেখতে পায়। তবে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেনি।

নিহত কাজী রুনার স্বামী এসআই সাইফুল এবং তার সন্তানরা এটিকে আত্মহত্যা বলে জানালেও সন্তানদের কেউ মাকে হত্যা করতে পারে বলে দাবি করেছেন নিহত রুনার ভাইবোনসহ বাবার বাড়ির লোকেরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা সদর থানায় কর্মরত এসআই সাইফুল ইসলাম শালিখা উপজেলার গোপালগ্রামে প্রবাসী তাহের উদ্দিনের দ্বিতল বাসায় স্ত্রী কাজী রুনা এবং দুই সন্তান রাতুল (২০), মহম্মদ আলি (১৫) ও রাতুলের স্ত্রী হৃদরিকে (১৮) নিয়ে বসবাস করতেন।

শুক্রবার রাতে সাইফুল মাগুরা সদর থানা এলাকায় ডিউটিরত ছিলেন। এ অবস্থায় শনিবার ভোর ৫টার দিকে বড় ছেলে রাতুল থানায় খবর দেয় তার মা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে শালিখা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এ সময় ঘরের মধ্যে লাশের অবস্থা এবং পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তায় অসংলগ্নতা থাকায় নিহতের ছেলে রাতুল, মহম্মদ আলি এবং রাতুলের স্ত্রী হৃদরিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কাজী রুনার মৃত্যুর বিষয়ে স্বামী এসআই সাইফুলের সঙ্গে বারবার মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে রুনার বড় বোন সারমিন সুলাতানা সীমা জানান, সপ্তাহখানেক আগে বোন বাবার বাড়ি থেকে কোটি টাকার জমি বিক্রি করেছে। এর আগেও ৫-৭ কোটি টাকার জমি বিক্রি করে ছেলেদের দিয়েছে। শুধু টাকার জন্যই তারা আমার বোনকে মেরে ফেলেছে।

নিহতের ভাই কাজী মেহেদি হাসান বলেন, বোনের মৃত্যুর খবর পেয়েই গোপালগঞ্জ থেকে এসেছি। এর আগে অনেকদিনই এদের কারো সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। বোনের ছেলেরা মাদকাসক্ত। টাকা পয়সা ছাড়াও নানা কারণে ছেলেরা মায়ের ওপর অত্যাচার করতো। এসব বিষয়ে বোনজামাই সাইফুলকে জানানো হলেও তিনি আমলে নেননি। শেষ পর্যন্ত তারা পরিকল্পিতভাবে বোনকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে।

এদিকে রাতের বেলা মিজানুর রহমান নামে এক প্রতিবেশী ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনতে পেলেও সেখানে গিয়ে বাড়ির গেট বন্ধ দেখেন এবং কারও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফিরে আসেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে শালিখা থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, নিহতের স্বামী এবং সন্তানেরা এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে জানালেও মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারকালে শরীরে বেশ কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্যবার প্যাথেডিন টাইপের ইনজেকশন নেওয়ার চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। তবে ঠিক কী কারণে এবং কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সেটি ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু, হত্যার অভিযোগ ছেলেদের বিরুদ্ধে

আপডেট টাইম : ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪

মাগুরার শালিখায় কাজী রুনা (৩৫) নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ছেলেদের বিরুদ্ধে।

তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নতুনবাজার রোড এলাকার কাজী গোলাম মোস্তফা টুকুর মেয়ে। তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মাগুরা সদর থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত আছেন।

শনিবার সকালে ভাড়াবাড়ির শয়নকক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকা লাশটি উদ্ধারের পর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে রুনার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত প্যাথেডিন নেওয়ার অসংখ্য চিহ্ন দেখতে পায়। তবে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেনি।

নিহত কাজী রুনার স্বামী এসআই সাইফুল এবং তার সন্তানরা এটিকে আত্মহত্যা বলে জানালেও সন্তানদের কেউ মাকে হত্যা করতে পারে বলে দাবি করেছেন নিহত রুনার ভাইবোনসহ বাবার বাড়ির লোকেরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা সদর থানায় কর্মরত এসআই সাইফুল ইসলাম শালিখা উপজেলার গোপালগ্রামে প্রবাসী তাহের উদ্দিনের দ্বিতল বাসায় স্ত্রী কাজী রুনা এবং দুই সন্তান রাতুল (২০), মহম্মদ আলি (১৫) ও রাতুলের স্ত্রী হৃদরিকে (১৮) নিয়ে বসবাস করতেন।

শুক্রবার রাতে সাইফুল মাগুরা সদর থানা এলাকায় ডিউটিরত ছিলেন। এ অবস্থায় শনিবার ভোর ৫টার দিকে বড় ছেলে রাতুল থানায় খবর দেয় তার মা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে শালিখা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এ সময় ঘরের মধ্যে লাশের অবস্থা এবং পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তায় অসংলগ্নতা থাকায় নিহতের ছেলে রাতুল, মহম্মদ আলি এবং রাতুলের স্ত্রী হৃদরিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কাজী রুনার মৃত্যুর বিষয়ে স্বামী এসআই সাইফুলের সঙ্গে বারবার মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে রুনার বড় বোন সারমিন সুলাতানা সীমা জানান, সপ্তাহখানেক আগে বোন বাবার বাড়ি থেকে কোটি টাকার জমি বিক্রি করেছে। এর আগেও ৫-৭ কোটি টাকার জমি বিক্রি করে ছেলেদের দিয়েছে। শুধু টাকার জন্যই তারা আমার বোনকে মেরে ফেলেছে।

নিহতের ভাই কাজী মেহেদি হাসান বলেন, বোনের মৃত্যুর খবর পেয়েই গোপালগঞ্জ থেকে এসেছি। এর আগে অনেকদিনই এদের কারো সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। বোনের ছেলেরা মাদকাসক্ত। টাকা পয়সা ছাড়াও নানা কারণে ছেলেরা মায়ের ওপর অত্যাচার করতো। এসব বিষয়ে বোনজামাই সাইফুলকে জানানো হলেও তিনি আমলে নেননি। শেষ পর্যন্ত তারা পরিকল্পিতভাবে বোনকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে।

এদিকে রাতের বেলা মিজানুর রহমান নামে এক প্রতিবেশী ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনতে পেলেও সেখানে গিয়ে বাড়ির গেট বন্ধ দেখেন এবং কারও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফিরে আসেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে শালিখা থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, নিহতের স্বামী এবং সন্তানেরা এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে জানালেও মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারকালে শরীরে বেশ কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্যবার প্যাথেডিন টাইপের ইনজেকশন নেওয়ার চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। তবে ঠিক কী কারণে এবং কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সেটি ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।