অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, শেখ হাসিনা যেভাবে তার বাবার খুনিদের খুঁজে খুঁজে দেশে এনেছে আমরাও সেভাবে আন্দোলনের খুনিদের দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করবো। আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করা হবে। জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে কাজ করছে, জন আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হচ্ছে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অনুষ্ঠিত ‘জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক সেমিনারে ইবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইটের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ইবিসাস) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজন থেকে অভিমত নেওয়া হচ্ছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চিঠির মাধ্যমে অভিমত পাঠানো যাবে। গত বৃহস্পতিবার সকল রাজনৈতিক দলের সাথে কথা হয়েছে। সেখানে সামগ্রিক মেসেজ হচ্ছে খুবই পজিটিভ। সবাই জুলাই ঘোষণাপত্রের সাথে সম্পৃক্ত হতে চাচ্ছে। তাই এটি ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে।
‘নির্দিষ্ট দিনের বিষয়টি আমি বলব না। তবে এইটুকু বলব এটা নিয়ে দিনরাত কাজ হচ্ছে। কারণ নির্দিষ্ট দিন দেওয়ার পর ঘোষণা না করতে পারলে আপনারাই আবার সমালোচনা করবেন। অ্যাডভাইজার প্যানেল পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সাথে ফরমালি এবং ইনফরমালি দুইভাবে কাজ করছে। এটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট হতে যাচ্ছে। তাই চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ চলছে। সরি, আমি ডেট দিতে পারছি না। তবে তবে যত দ্রুত ঘোষণা করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধভাগ ছাত্রী পড়াশোনা করে, যা খুবই ভালো ইমেজ। ডকুমেন্টারিতে দেখলাম আন্দোলনে মেয়েরা নেতৃত্ব দিয়েছে। আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করেছেন। এই ইমেজ বিশ্বকে জানাতে হবে। ইমেজের সাথে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জড়িত। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণে কাজ করতে হবে। এখনও যেসব হলগুলোর নাম স্বৈরাচারের নামে রয়ে গেছে সেগুলো শহীদদের নামে পরিবর্তন করা দরকার।
প্রেস সচিব বলেন, দেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ করার বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে কমিশনের মাধ্যমে আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে। জুলাই আন্দোলনের ফসল কমিশনের রিপোর্ট। আপনারা এগুলো পড়ুন ও ক্যাম্পাসে এসব নিয়ে বিতর্ক করুন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাংগীর আলম, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ইবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. হোসাইন আল মামুন। এছাড়াও আলোচক ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বিশেষ সংবাদদাতা এস এম রাশিদুল ইসলাম।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজমুল হক জায়িমের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সুজা উদ্দিন, সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র সহ-সম্পাদক এমদাদুল হক, বণিক বার্তার সিনিয়র রিপোর্টার ও সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ইমামুল হাছান আদনান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান নবীন ও সাবেক সভাপতি ইমরান শুভ্র। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট, ইবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, শাখা ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি ইউসুব আলীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ববৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।