ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে জঙ্গলে সবচেয়ে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মানুষ যখন নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তখন সে আত্মহত্যা করে থাকে। আর আত্মহত্যাকে একটি মানসিক রোগও বলে থাকেন চিকিৎসকরা।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ৩৯ দশমিক ৬ জন আত্মহত্যা করে। বহির্বিশ্বে ছেলেদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি হলেও বাংলাদেশে ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।

মানুষ নানা কারণে আত্মহত্যা করতে পারেন, এর মধ্যে ডিপ্রেশন, ব্যক্তিত্ব্যে সমস্যা, গুরুতর মানসিক রোগ বা স্বল্পতর মানসিক রোগ। তা ছাড়া মাদকাসক্তি, এনজাইটি, অপরাধ বোধ, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, অশিক্ষা, দারিদ্র্য, দাম্পত্য কলহ, প্রেম-কলহ, অভাব অনটন, দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা,

যৌন নির্যাতন, মা-বাবার ওপর অভিমান, পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট, প্রেমে ব্যর্থ ও প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে আত্মহত্যা করেন। অদ্ভুত রহস্যঘেরা অওকিগাহারা জঙ্গলে প্রতি বছর গড়ে ১০০ জন আত্মহত্যা করেন। জাপানের ফুজি পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে এই জঙ্গল।

তবে আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকার জন্য ওই জঙ্গলের আনাচে-কানাচে সতর্কবার্তা সাইন বোর্ডের আকারে ঝোলানো রয়েছে। তবু প্রতি বছর গড়ে ১০০ জন এই জঙ্গলে এসে আত্মহত্যা করেন।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আত্মহত্যার সংখ্যার বিচারে অওকিগাহারা অরণ্য বিশ্বে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন ব্রিজ।

জাপানের প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, এই জঙ্গলে মৃত ব্যক্তির আত্মারা ঘুরে বেড়ায়। তাই এখানও কোনো জীবিত ব্যক্তি এলে তাকেও আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়া হয়।

জানা গেছে, ১৯৬০ সালে সেইকো মাটসুমোটো নামের এক জাপানি লেখকের দুটি উপন্যাস ‘লিট’ ও ‘টাওয়ার অফ ওয়েবস’ প্রকাশের পর থেকেই স্থানীয় মানুষের মধ্যে এখানে এসে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়।

এর কারণ হিসেবে জানা যায়, ওই উপন্যাসের দুটি চরিত্র পরিবার ও সন্তানের শুভ কামনায় এই বনে এসে আত্মহত্যা করেছিল।

শোনা যায়, উনবিংশ শতাব্দীতে এই এলাকায় ‘উবাসুতে’ নামে এক অদ্ভুত রীতি পালিত হতো। এই রীতি অনুযায়ী মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধাদের এই জঙ্গলে এসে ছেড়ে চলে যেতেন পরিবারের লোকজন। এর পর এখানেই মৃত্যু হতো তাদের।

তাই স্থানীয়রা মনে করেন, এখানে মৃত বৃদ্ধাদের আত্মারা এখনও এখানে ঘুরে বেড়ান।

১৯৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গড়ে প্রতি বছর ১০০ জন এই জঙ্গলে এসে আত্মহত্যা করেছেন। ২০০২ সালে এই জঙ্গলে ৭৮টি মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০০-এ। ২০০৪-এ এই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৮ জনে। এর পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

যে জঙ্গলে সবচেয়ে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে

আপডেট টাইম : ০৬:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ মার্চ ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মানুষ যখন নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তখন সে আত্মহত্যা করে থাকে। আর আত্মহত্যাকে একটি মানসিক রোগও বলে থাকেন চিকিৎসকরা।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ৩৯ দশমিক ৬ জন আত্মহত্যা করে। বহির্বিশ্বে ছেলেদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি হলেও বাংলাদেশে ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।

মানুষ নানা কারণে আত্মহত্যা করতে পারেন, এর মধ্যে ডিপ্রেশন, ব্যক্তিত্ব্যে সমস্যা, গুরুতর মানসিক রোগ বা স্বল্পতর মানসিক রোগ। তা ছাড়া মাদকাসক্তি, এনজাইটি, অপরাধ বোধ, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, অশিক্ষা, দারিদ্র্য, দাম্পত্য কলহ, প্রেম-কলহ, অভাব অনটন, দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা,

যৌন নির্যাতন, মা-বাবার ওপর অভিমান, পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট, প্রেমে ব্যর্থ ও প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে আত্মহত্যা করেন। অদ্ভুত রহস্যঘেরা অওকিগাহারা জঙ্গলে প্রতি বছর গড়ে ১০০ জন আত্মহত্যা করেন। জাপানের ফুজি পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে এই জঙ্গল।

তবে আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকার জন্য ওই জঙ্গলের আনাচে-কানাচে সতর্কবার্তা সাইন বোর্ডের আকারে ঝোলানো রয়েছে। তবু প্রতি বছর গড়ে ১০০ জন এই জঙ্গলে এসে আত্মহত্যা করেন।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আত্মহত্যার সংখ্যার বিচারে অওকিগাহারা অরণ্য বিশ্বে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন ব্রিজ।

জাপানের প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, এই জঙ্গলে মৃত ব্যক্তির আত্মারা ঘুরে বেড়ায়। তাই এখানও কোনো জীবিত ব্যক্তি এলে তাকেও আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়া হয়।

জানা গেছে, ১৯৬০ সালে সেইকো মাটসুমোটো নামের এক জাপানি লেখকের দুটি উপন্যাস ‘লিট’ ও ‘টাওয়ার অফ ওয়েবস’ প্রকাশের পর থেকেই স্থানীয় মানুষের মধ্যে এখানে এসে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়।

এর কারণ হিসেবে জানা যায়, ওই উপন্যাসের দুটি চরিত্র পরিবার ও সন্তানের শুভ কামনায় এই বনে এসে আত্মহত্যা করেছিল।

শোনা যায়, উনবিংশ শতাব্দীতে এই এলাকায় ‘উবাসুতে’ নামে এক অদ্ভুত রীতি পালিত হতো। এই রীতি অনুযায়ী মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধাদের এই জঙ্গলে এসে ছেড়ে চলে যেতেন পরিবারের লোকজন। এর পর এখানেই মৃত্যু হতো তাদের।

তাই স্থানীয়রা মনে করেন, এখানে মৃত বৃদ্ধাদের আত্মারা এখনও এখানে ঘুরে বেড়ান।

১৯৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গড়ে প্রতি বছর ১০০ জন এই জঙ্গলে এসে আত্মহত্যা করেছেন। ২০০২ সালে এই জঙ্গলে ৭৮টি মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০০-এ। ২০০৪-এ এই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৮ জনে। এর পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়।