বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ভারতের কেরালার ওয়ানাডের এক প্রত্যন্ত এলাকা। সেখানে শিক্ষার হার একেবারেই নগণ্য। বেশিরভাগ পরিবারের কেউই কখনো স্কুলেও যায়নি। তেমনই এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মুস্তাফা। তিনি এখন পিসি মুস্তাফা নামেই পরিচিত। পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে স্কুলে যাওয়া শুরু করলেও মাত্র ক্লাস সিক্সেই ফেল করে তখনকার মতো স্কুলের পাঠ চুকে যায় তার। ফেল করা সেই ছেলেই এখন ৪০০ কেটি রুপির মালিক।
কেরালার সেই ফেল করা মানুষটির সফলতার গল্প শুনিয়েছে আনন্দবাজার। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন মতে, দারিদ্র্য ও সঠিক পরিবেশের অভাব মুস্তাফার পড়াশোনায় প্রথম থেকেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্কুলে যাতায়াত শুরু করলেও ষষ্ঠ শ্রেণিতেই ফেল করে বসেন। শিকেই উঠল পড়ালেখা। একটি কারখানায় দিনমজুরের কাজে লাগিয়ে দিলেন বাবা। সেই ছোট বয়সেই নিজের ভবিষ্যৎটা দেখে নিয়েছিলেন মুস্তাফা।
তবে পড়ালেখা ছাড়া যে একটা ভালো জীবন পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়, তা বেশ বুঝতে পেরেছিলেন। কিছুদিন কাজ করার পরই তিনি নিজেকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার মনস্থির করলেন। ফের মন দিয়ে পড়ালেখা করতে শুরু করলেন। স্কুল পাস করে কালিকটের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংও পাস করলেন। চাকরি নিলেন বেঙ্গালুরুর মোটোরোলা কোম্পানিতে। তারপর সেখান থেকে প্রমোশন পেয়ে যুক্তরাজ্যে চলে গেলেন কয়েক বছরের জন্য। এরই মধ্যে জীবনটা গুছিয়ে ফেলেছিলেন মুস্তাফা। কিন্তু তাতেও মন মানছিল না তার। কোনোভাবে এটাকেই জীবনের সাফল্য ভেবে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারছিলেন না। তার ওপর দেশের প্রতি টানটাও ভুলতে পারছিলেন না। আর বিদেশি খাবারও মুখে সইছিল না।
কয়েক বছর পর বিদেশের পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে করলেন এমবিএ। তখনই নিজের ব্যবসা শুরু করার কথা মাথায় আসে তার। বেঙ্গালুরুর থিপাসানদ্রাতে তার আত্মীয়দের একটি দোকান ছিল। মাঝেমধ্যেই সেখানে বসে গল্পগুজবে কাটিয়ে দিতেন। খুব অবাক হয়ে দেখতেন, প্রতিদিনই ইডলি এবং দোসার ব্যাটার (চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি) দোকান থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। তখনই প্যাকেজড ফুড ব্যবসার কথা মাথায় আসে তার। প্রথমে মাত্র ৫০ হাজার রুপি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। একটা ছোট দোকান নিয়ে কিছু ব্যাটার বানিয়ে আশপাশের বাড়িতে বিতরণ শুরু করেন। রাতারাতি হিট হয়ে যায় পরিকল্পনা।
২০০৮ সালে ৫০ বর্গফুটের একটা ছোট রান্নাঘর ভাড়া নেন তিনি। সঙ্গে কেনেন একটা গ্রাইন্ডার। স্কুটারে করে ব্যাটারগুলো বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে শুরু করেন। একটু জনপ্রিয় হলে কোম্পানির নাম দেন বেস্ট ফুড প্রাইভেট লিমিটেড। পরে নাম বদলে রাখেন আইডি স্পেশাল ফুডস প্রাইভেট লিমিটেড।
২০১০ সাল নাগাদ তার ব্যবসা ৪ কোটি রুপি ছুঁয়ে ফেলে। ততদিনে ৪০ জন কর্মচারীও নিয়োগ করে ফেলেছেন মুস্তাফা। এখন বেঙ্গালুরু, মাইসুরু, ম্যাঙ্গালুরু, চেন্নাই, মুম্বাই, হায়দরাবাদ, পুনে এবং বিদেশে শারজাতেও রয়েছে তার ব্যবসা। ৫০ কেজি ব্যাটার সরবরাহ করে তার কোম্পানি। সঙ্গে যোগ হয়েছে ৪০ হাজার চাপাতি, দুই লাখ পরোটা, দুই হাজার টমেটো এবং ধনেপাতার চাটনির প্যাকেট। ডেলিভারির জন্য কোম্পানির নিজস্ব ২০০টি গাড়ি রয়েছে। কর্মচারীর সংখ্যা ৬৫০। ২০১৯-২০ সালে মুস্তাফার কোম্পানিতে বিক্রি হয়েছে ৪০০ কোটি রুপির বেশি।