আজ পয়লা জ্যৈষ্ঠ। প্রচণ্ড তাপদাহ ও আম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা রসালো ফলের সমাহার নিয়ে এই মধু মাস শুরু হল। জ্যৈষ্ঠেই বছরের সবচেয়ে বেশি ফল পাকে। অবশ্য এরই মধ্যে বাজারে দেখা যাচ্ছে আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, জামরুল, আনারসসহ নানা জাতের মৌসুমি ফল। এরপর আসবে আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, আঁশফল, গাব, ডালিম, লটকন, খেজুরসহ আসবে নানা বুনোফল। পাকা তাল না পাওয়া গেলেও বাজার এখন ভরে গেছে কাঁচা তালে। জ্যৈষ্ঠ মাস বাংলার গ্রামীণ সমাজের ঐতিহ্যেরও অনিবার্য অংশ। গ্রামের মানুষ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আম-কাঁঠালের উপহার পাঠিয়ে থাকে এই জ্যৈষ্ঠেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জামাইদের বিশেষ করে সম্মানিত ও আপ্যায়ন করে এ মাসে। মুসলিম সমাজেও জামাইদের শ্বশুরবাড়িতে আমন্ত্রণ জানানোর রীতি প্রচলন আছে। জ্যৈষ্ঠ জামাইষষ্টি উত্সবের সময়। প্রাণ প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, জ্যৈষ্ঠ মাসে দিন বড় হয় যে কারণে বাংলা পুঞ্জিকায় জ্যৈষ্ঠ বা বড় নাম ধারণ করছে। এ মাসে গ্রামীণ নিম্নবর্গের মধ্যে কিছু ব্রত দেখা যায়। এ সময় প্রকৃতিতে খরতাপ ও রুক্ষ থাকবে। অন্যদিকে প্রকৃতিতে ফুলবে তমাল, হিজল, জারুলের মতো প্রকট রঙের ফুল। দীর্ঘদিনকে বরণ করে গ্রামীণ প্রান্তজন তাদের খাদ্য ও কর্ম নির্ধারণ করে দেয়। পাহাড়ে জুম চাষিরা এ সময় ব্যস্ত থাকবে জুমের জমি তৈরি নিয়ে। সমতলের চাষিরা আউশ ধানের পরিচর্যা নিয়ে। তিনি বলেন, রসালো ফলে পুষ্টি ও রসানা তৃপ্ত করে শরীরের পুষ্টি সাধনের যে প্রবণতা আদিকাল থেকে চলে এসেছে সেটি এখনও আছে। তবে দেশের ফল উত্পাদন থেকে বিপণন বিভিন্ন পর্যায় যে পরিমাণে রাসায়নিক দেওয়া হয়। এখন মানুষ প্রকৃতি থেকে এ মাসে মধু না নিয়ে বিষ গ্রহণ করছে। ঢাকার ফুটপাতে এবং ফলের দোকানগুলোয় নজর কাড়ছে মধু মাসের মৌসুমি ফল। বাজারে উঠতে শুরু করেছে সুস্বাদের রাসালো ও জনপ্রিয় ফল লিচু। রাজধানীসহ দেশের জেলা শহরগুলোর ফলের দোকানে লিচু বিক্রি হচ্ছে। আগাম লিচু হাওয়া অনেক বেশি দাম থাকলেও পরিবারের সবার জন্য নতুন ফলের স্বাদ নিতে লিচু কিনছেন। মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি থাকায় এ বছর লিচু পরিপুষ্ট ও বড় হয়েছে। ক্রেতারা জানিয়েছে, বাজারে আগাম আসায় লিচুর দাম কিছুটা বেশি। ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি শত লিচু ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকয় বিক্রি হচ্ছে। তবে লিচু বাগানীরা জানিয়েছেন, দাম কিছুটা বেশি থাকায় তারা খুশি। পাবনার ঈশ্বরদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তার জানান, উপজেলায় তিন লাখ লিচুগাছ রয়েছে। ফল ধরা গাছগুলোতে প্রতিটি গাছে তিন হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত লিচু ধরে। চলতি মৌসুমে গতবারের তুলনায় গাছে মুকুল কম এলেও সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় গুটি ঝরে পড়েনি। নওগাঁর বদলগাছির চকবনমালি গ্রামের লিচু বাগানী রকিবুল হক সোহাগ জানান, নওগাঁয় এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে লিচু উঠতে শুরু করবে। চলতি মৌসুমে নওগাঁয় লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। ডিএইএর হর্টিকালচার বিভাগের তথ্য দেখা গেছে, চলতি বছর দেশে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। ডিএইএর বছরব্যাপী ফল চাষ প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ বলেন, চলতি বছর পাবনা, রাজশাহী, দিনাজপুর, গাজীপুর, টঙ্গাইলসহ দেশের নতুন লিচু বাগানের হেলা নাটোর, পাবনার ঈশ্বরদী, ভাঙ্গুড়া, যশোর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীতে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। এ ছাড়াও নতুন করে সবচেয়ে বেশি বাগান গড়ে ওঠা পাবর্ত্য চট্টগ্রামে, রাঙামাটি সদর, মাটিরাঙা, বান্দারবান সদর ও খাগড়াছড়ির উপজেলাগুলোতে লিচু ফলন ভালো হয়েছে। আমাদের দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, সুস্বাদু ও রসগোল্লা হিসেবে পরিচিত দেশব্যাপী খ্যাত দিনাজপুরের লিচু সবুজ থেকে লাল রঙ ধারণ করতে শুরু করেছে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করবে। ইতোমধ্যেই দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার দিনাজপুর নিউমার্কেটে ব্যবসায়ীরা তাদের আড়ত্ মেরামত শুরু করে দিয়েছে। এ জেলার লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাঁঠালি উল্লেখযোগ্য। প্রতি বছর এ জেলা থেকে লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আর বেদেনা জাতের লিচু বিদেশেও রফতানি হয়। ঢাকা থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী দিলদার আলী জানান, দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা সবখানেই বেশি। লাভ কম হলেও ব্যবসা ভালো হওয়ার জন্য এখানের লিচুর ব্যবসা করেন। দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের সহকারী উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরুল আহসান জানান, এবারে বৃষ্টির কারণে দানা ভালো হয়েছে। তা ছাড়া এবারে লিচু মোটাতাজাকরণের হরমোন ব্যবহার না হওয়ায় বিষমুক্ত পাওয়া যাবে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী কালীপুরের রসালো লিচু এখন চট্টগ্রামের বাজারে এসেছে। চট্টগ্রামবাসীর কাছে কালীপুরের লিচুর কদর বেশি। এটি আকারে একটু ছোট হলেও স্বাদে গন্ধে দিনাজপুরের লিচুর মতোই। তা ছাড়া এই লিচু দিনাজপুর বা রাজশাহীর উত্পাদিত লিচুর অন্তত ১০ থেকে ১২ দিন আগে বাজারে উঠে বলেই এর দামটা একটু বেশি। কালীপুরের লিচু ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় উত্পাদিত বোম্বে ও চায়না জাতের লিচুও বাজারে উঠেছে। বাঁশখালী কালীপুরের ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা আর অন্যসব জাতের ১০০টি লিচু বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। অন্যদিকে এই গরমে রসালো, সুস্বাদ আর সুঘ্রাণ ছড়িয়ে রাজধানীর বিভিন্ন ফলবাজার ও রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে বিক্রি হচ্ছে জলডুগি আনারস। দেখতে ছোট আকারের হলুদ রঙের আনারসগুলো আসছে সিলেট, নরসিংদী ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা থেকে। রাজধানীসহ অন্য শহরগুলোর বাজারে আগাম আম এসেছে। তবে বিষমুক্ত, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত আম উত্পাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনসহ রাসায়নিক দিয়ে আম পাকানো বন্ধে আগামী ২৫ মে’র আগে আম পাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসন। ২৫ মে থেকে গোপালভোগ আসতে শুরু করবে। এরপর হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত, পরে লক্ষ্মণভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালি ও সবশেষ বাজারে আসবে আশ্বিনা। বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বেশি। এর প্রভাব আমের উত্পাদনের ওপর পড়বে। তবে এখনও যে আসে সেগুলো পাকা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলে আশা করা যায় সঙ্কট হবে না। আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের হিসেবে চলতি বছর দেশে ৬০ হাজার হেক্টর অধিক জমিতে ১০ লাখ টন আম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৪ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে।
সংবাদ শিরোনাম :
ভারতে কারাভোগের পর ফিরলেন ২৬ বাংলাদেশি
পুত্র সন্তানের বাবা হলেন ভারতীয় অলরাউন্ডার
হলে ফিরেছেন নিখোঁজ সহ-সমন্বয়ক খালেদ
ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে ওয়াসার কর্মচারী গুরুতর আহত
দেশের কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান: রাষ্ট্রপতি
জানুয়ারিতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রদলের সাবেক নেতা নিহত
ভারতের পার্লামেন্ট ভবনের কাছে গায়ে আগুন দিলেন যুবক
বললেন জামায়াত আমির উপদেষ্টারা বিবেকবান, তারা বুঝবেন নির্বাচন দিতে কত সময় লাগবে
প্রতিবাদ সভায় কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের পদত্যাগ দাবি
পয়লা জ্যৈষ্ঠ আজ: বাজারে মিষ্ট ফল
- বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্ক
- আপডেট টাইম : ০৬:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০১৭
- 488
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ