শিশু একটু বড় হয়ে যখন আধো আধো বোলে কথা বলতে শেখে তখনই মা-বাবার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় শিশুকে ছড়া, রঙ, জীবজন্তু, অক্ষর শেখানোর। তোড়জোর না করে উপায় আছে? কদিন পরেই তাকে যেতে হবে স্কুলে। এসময় শিশুকে শেখানোর কাজটি হতে হবে আনন্দের সঙ্গে খেলাচ্ছলে। আর এ কাজটি কেবল যে বড়দেরই, তা কিন্তু নয়, পরিবারের একটু বড় শিশুও শেখাতে পারে ছোট ভাই কিংবা বোনকে
ছয় বছর বয়সী আদনান কেজি শ্রেণীতে পড়ছে। তার ছোট ভাই আবিরের বয়স দুই। আধো আধো বোলে কিছু কিছু কথা বলে আবির। করতে পারে আঁকিবুঁকিও। বড় ভাই আদনানের সঙ্গ বেশ পছন্দ আবিরের। মা আদনানকে বলেছে শুধু সঙ্গ নয়, তুমি শেখাতেও পার আবিরকে।
আবিরকে ছড়া শেখানো, অক্ষর, রং, ছবি দেখে ফল, জীবজন্তু চেনানোসহ নানাভাবে তুমি হতে পারো আবিরের শিক্ষকও। মায়ের এ কথা আদনানকে বেশ আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। আর ছোট ভাইকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে বরং দায়িত্বশীল হয়ে উঠছে।
আবির, আদনানের মতো পিঠাপিঠি ভাইবোন থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই একজন অন্যকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন। আবার ছোটর প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়ার কারণে বড় সন্তানটি প্রায়ই হীনমন্যতা, হতাশায় ভোগে। এক্ষেত্রে বাড়ির একটু বড় শিশুকে ছোট ভাই কিংবা বোনকে খেলাচ্ছলে সৃজনশীল এবং বুদ্ধিবৃত্তিয় নানা কিছু শেখানোর দায়িত্ব দেয়া যায়।
এতে একদিকে যেমন ছোট শিশুটি আনন্দের সঙ্গে শিখবে তেমনি বড় শিশুও হয়ে উঠবে দায়িত্বশীল। এতে মজবুত হবে ভাইবোনের মধুর বন্ধনও।
ছড়া পড়ে শোনানো
খেলাচ্ছলে পরিবারের বড় শিশু উচ্চৈস্ব^রে ছোটকে গল্প বা ছড়া পড়ে শোনাতে পারে। ছোট ভাই কিংবা বোনকে মুখে বর্ণমালা বলাও শেখাতে পারে বড় শিশুরা। এতে ছোট্ট সদস্যটি খুব সহজেই মজা করতে করতেই শিখে যেতে পারবে ছড়া, কবিতা, বিভিন্ন জিনিসের নামসহ নানা কিছু। এতে শিশুর শব্দভাণ্ডারে নতুন নতুন শব্দ যোগ হওয়ার পাশাপাশি তৈরি হবে সৃজনশীলতাও।
বর্ণমালা চেনানো
শিশু যখন কথা বলতে শিখবে অথবা বিভিন্ন জিনিস চিনতে ও বুঝতে শিখবে তখন বড় শিশুটি ছোট ভাইবোনকে বর্ণমালা চেনাতে পারে। বর্ণমালার বই, বর্ণমালার পাজল ইত্যাদি নিয়ে খেলা করলে, দেখাতে বললে ছোটরাও বেশ উৎসাহ নিতে তা দেখায়। এভাবে ধীরে ধীরে বড়-ই হতে পারে ছোটর শিক্ষক।
সংখ্যা বুঝতে শেখানো
অক্ষরের সঙ্গে সংখ্যার ধারণাও শিশুদের মাঝে দিতে হবে। এজন্য ফল, জীবজন্তু, বল ইত্যাদির ছবি ও খেলনা দিয়ে দুই শিশুকে বসিয়ে দিতে পারেন এবং বড়কে বলতে পারেন ছোটকে কয়টা খেলনা আছে, কোনটা কোন আকৃতির তা বলতে এবং জিজ্ঞেস করতে।
রঙের খেলা
আমরা জানি, আমাদের চারপাশের প্রতিটি বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন আকার ও রং রয়েছে। আবার অনেক বস্তুর আকার একই, রং ভিন্ন অথবা আকার ভিন্ন কিন্তু রং একই। ছোট্ট সোনামনিকে রঙের পার্থক্য বুঝতে ও রং চিনতে খুব ভালো সহযোগিতা করতে পারে পরিবারের বড় শিশু। বিভিন্ন রঙের আঁকা ছবি, দেয়ালের পোস্টার ইত্যাদি দেখিয়ে কোনটা কি রং ছোট ভাইবোনকে চেনাতে পারে বড় শিশু। একইভাবে চেনাতে পারে বিভিন্ন আকৃতিও।
খেলতে দিন
খেলা শিশুদের অভিজ্ঞতা বাড়ায়, কৌতূহলী করে তোলে ও আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। পাজল, বল, কুইজ, লুকোচুরি ইত্যাদি খেলা পিঠাপিঠি ভাইবোনকে একসঙ্গে খেলতে দিন। এতে শিশুদের মাঝে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়বে, শেয়ারিং মনোভাব তৈরি হবে এবং তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশেও সাহায্য হবে।