ঢাকা , রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’: অন্ধকারে উপকূলীয় এলাকা, নিহত ৬

ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় ছয়জন মারা গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রায় ২০ হাজার বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হওয়া অন্ধকারে আকাশের নিচে হাজারো উপকূলবাসী। ঝড়ে কক্সবাজার ও রাঙ্গামাটিতে গাছচাপা পড়ে পাঁচজন মারা গেছেন। ভোলায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে অসুস্থ এক শিশুর।

উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ে প্রায় ২০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। ছয় জেলায় ৩ লাখ ১৭ হাজারের বেশি মানুষকে সোমবার রাতেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। ফলে ক্ষতি হয়েছে কম। ঝড়ের প্রভাব কমে যাওয়ার পর বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরতে শুরু করে উপকূলের মানুষ।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোরা দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো হতে শুরু করায় চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম শুরু করা হয়। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে পণ্য খালাসের কাজ শুরু হলেও জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ এখনো শুরু করা হয়নি। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে শাহ আমনত বিমানবন্দরের বিমান চলাচলও। মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে বিমান চলাচল শুরু হয়।

ঝড়ের আঘাতে চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে। এতে উপড়ে পড়ে বহু গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি ও কাঁচা-আধাপাকা ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা। ওই সময় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার বিকেলের দিকে ঘুর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়লে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হলেও বেশিরভাগ এলাকা এখনো অন্ধকারে। বিশেষ করে রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে প্রতিনিধিরা জানান।

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, ঝড়ে কক্সবাজার জেলার দুই উপজেলায় তিন জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরো ১০ জন। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ঘর। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম জানায়, চকরিয়ার উপজেলায় পূর্ব বড়ভেওলার সিকদারপাড়ার সায়রা খাতুন (৬৫) ও ডুলহাজারার পূর্ব জুমখালীর রহমত উল্লাহ (৫০) নিরাপদ আশ্রয়ের আসার পথে গাছ ভেঙে চাপা পড়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে সোমবার নুনিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়ে থাকাকালে ভয়ে স্ট্রোক করেন সমিতিপাড়ার মরিয়ম বেগম (৬৪)। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, মহেশখালীর ধলঘাটা, কুতুবজোম, কক্সবাজার শহরের ১নং ওয়ার্ড ও সদরের পোকখালী। বিধ্বস্ত হয়েছে ব্যাপক গাছ-গাছালি, বিদ্যুৎ লাইন। ক্ষতি হয়েছে টেকনাফ ও মহেশখালীর পানবরজ। এছাড়াও টেলিফোন লাইন, ডিস লাইন বিধ্বস্ত হয়েছে। বিদ্যুত্ লাইন বিছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুিবহীন রয়েছে পুরো জেলা। প্রাথমিকভাবে প্রতি উপজেলায় মাত্র এক লাখ টাকা ও ১০০ টন জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়।

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গামাটি শহরে গাছ চাপায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন আসামবস্তির হাজেরা খাতুন (৪০) এবং ভেদভেদীর ফাহিমা আক্তার (১৪)। সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গাছ ভেঙে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিদ্যুত্ খুঁটি উপড়ে পড়া এবং বিদ্যুৎ লাইনে গাছ পড়ায় গতকাল সারাদিনই বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে বলছে বিদ্যুৎ অফিস।

ভোলা প্রতিনিধি জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মো. রাশেদ নামের এক বছরের এক শিশু মারা গেছে। ভোলা মনপুরা উপজেলার মেঘনা মধ্যবর্তী কলাতলীর চরের মনির বাজারসংলগ্ন চর কলাতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মেঘনা এবং তেঁতুলিয়া নদী উত্তাল থাকায় ভোলার সঙ্গে ১৯টি রুটের সঙ্গে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে দ্বীপবাসী।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, মংলাবন্দরে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ ছিল। আবহাওয়ার উন্নতি না হলে আজও কাজ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার মো. ওয়ালিউল্লাহ।

সোমবার রাতে বেশি ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় শরণখোলা, মংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠে। সকালে আবহাওয়ার উন্নতি হতে শুরু করলে বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করেন।

শরণখোলা প্রতিনিধি জানান, ইলিশ আহরণের জন্য সাগরে যাওয়ার উদ্দেশে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও যেতে পারেনি শত শত ফিশিং ট্রলার। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র খবর পেয়ে ট্রলারগুলো শরণখোলর বিভিন্ন খালে আশ্রয় নেয়। ফলে কোনো ক্ষতি হয়নি তাদের।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়, উপকূল অতিক্রমরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে কুতুবদিয়ার পাশ দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে পড়ে। বর্তমানে এটি স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে রাঙ্গামাটি ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, রাঙ্গামাটি এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থিত গভীর স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে মঙ্গলবার বিকেল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়ার নৌ সতর্কবার্তায় বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চিটাগাং, কক্সবাজার, ঢাকা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অন্য এলাকায় ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতি পূরণে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ সচিবের দায়িত্বে থাকা এ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, যেখানে বাড়িঘর দরকার হবে বাড়িঘর প্রস্তুত করা হবে। তিনি বলেন, কৃষিতে পুনর্বাসনের জন্য কৃষি বিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষতির জন্য স্ব স্ব বিভাগের সঙ্গে কথা বলে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি জানান, মোরার কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা ও বরগুনা জেলার জন্য এক হাজার ৪০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের মোট এক কোটি ২৭ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’: অন্ধকারে উপকূলীয় এলাকা, নিহত ৬

আপডেট টাইম : ০৪:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০১৭

ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় ছয়জন মারা গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রায় ২০ হাজার বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হওয়া অন্ধকারে আকাশের নিচে হাজারো উপকূলবাসী। ঝড়ে কক্সবাজার ও রাঙ্গামাটিতে গাছচাপা পড়ে পাঁচজন মারা গেছেন। ভোলায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে অসুস্থ এক শিশুর।

উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ে প্রায় ২০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। ছয় জেলায় ৩ লাখ ১৭ হাজারের বেশি মানুষকে সোমবার রাতেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। ফলে ক্ষতি হয়েছে কম। ঝড়ের প্রভাব কমে যাওয়ার পর বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরতে শুরু করে উপকূলের মানুষ।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোরা দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো হতে শুরু করায় চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম শুরু করা হয়। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে পণ্য খালাসের কাজ শুরু হলেও জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ এখনো শুরু করা হয়নি। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে শাহ আমনত বিমানবন্দরের বিমান চলাচলও। মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে বিমান চলাচল শুরু হয়।

ঝড়ের আঘাতে চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে। এতে উপড়ে পড়ে বহু গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি ও কাঁচা-আধাপাকা ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা। ওই সময় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার বিকেলের দিকে ঘুর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়লে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হলেও বেশিরভাগ এলাকা এখনো অন্ধকারে। বিশেষ করে রাঙ্গামাটিতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে প্রতিনিধিরা জানান।

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, ঝড়ে কক্সবাজার জেলার দুই উপজেলায় তিন জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরো ১০ জন। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ঘর। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম জানায়, চকরিয়ার উপজেলায় পূর্ব বড়ভেওলার সিকদারপাড়ার সায়রা খাতুন (৬৫) ও ডুলহাজারার পূর্ব জুমখালীর রহমত উল্লাহ (৫০) নিরাপদ আশ্রয়ের আসার পথে গাছ ভেঙে চাপা পড়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে সোমবার নুনিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়ে থাকাকালে ভয়ে স্ট্রোক করেন সমিতিপাড়ার মরিয়ম বেগম (৬৪)। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, মহেশখালীর ধলঘাটা, কুতুবজোম, কক্সবাজার শহরের ১নং ওয়ার্ড ও সদরের পোকখালী। বিধ্বস্ত হয়েছে ব্যাপক গাছ-গাছালি, বিদ্যুৎ লাইন। ক্ষতি হয়েছে টেকনাফ ও মহেশখালীর পানবরজ। এছাড়াও টেলিফোন লাইন, ডিস লাইন বিধ্বস্ত হয়েছে। বিদ্যুত্ লাইন বিছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুিবহীন রয়েছে পুরো জেলা। প্রাথমিকভাবে প্রতি উপজেলায় মাত্র এক লাখ টাকা ও ১০০ টন জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়।

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গামাটি শহরে গাছ চাপায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন আসামবস্তির হাজেরা খাতুন (৪০) এবং ভেদভেদীর ফাহিমা আক্তার (১৪)। সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গাছ ভেঙে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিদ্যুত্ খুঁটি উপড়ে পড়া এবং বিদ্যুৎ লাইনে গাছ পড়ায় গতকাল সারাদিনই বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে বলছে বিদ্যুৎ অফিস।

ভোলা প্রতিনিধি জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মো. রাশেদ নামের এক বছরের এক শিশু মারা গেছে। ভোলা মনপুরা উপজেলার মেঘনা মধ্যবর্তী কলাতলীর চরের মনির বাজারসংলগ্ন চর কলাতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মেঘনা এবং তেঁতুলিয়া নদী উত্তাল থাকায় ভোলার সঙ্গে ১৯টি রুটের সঙ্গে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে দ্বীপবাসী।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, মংলাবন্দরে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ ছিল। আবহাওয়ার উন্নতি না হলে আজও কাজ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার মো. ওয়ালিউল্লাহ।

সোমবার রাতে বেশি ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় শরণখোলা, মংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠে। সকালে আবহাওয়ার উন্নতি হতে শুরু করলে বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করেন।

শরণখোলা প্রতিনিধি জানান, ইলিশ আহরণের জন্য সাগরে যাওয়ার উদ্দেশে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও যেতে পারেনি শত শত ফিশিং ট্রলার। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র খবর পেয়ে ট্রলারগুলো শরণখোলর বিভিন্ন খালে আশ্রয় নেয়। ফলে কোনো ক্ষতি হয়নি তাদের।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়, উপকূল অতিক্রমরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে কুতুবদিয়ার পাশ দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে পড়ে। বর্তমানে এটি স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে রাঙ্গামাটি ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, রাঙ্গামাটি এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থিত গভীর স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে মঙ্গলবার বিকেল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়ার নৌ সতর্কবার্তায় বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চিটাগাং, কক্সবাজার, ঢাকা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অন্য এলাকায় ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতি পূরণে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ সচিবের দায়িত্বে থাকা এ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, যেখানে বাড়িঘর দরকার হবে বাড়িঘর প্রস্তুত করা হবে। তিনি বলেন, কৃষিতে পুনর্বাসনের জন্য কৃষি বিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষতির জন্য স্ব স্ব বিভাগের সঙ্গে কথা বলে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি জানান, মোরার কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা ও বরগুনা জেলার জন্য এক হাজার ৪০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের মোট এক কোটি ২৭ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।