ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সুখী মানুষ বাংলাদেশে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সবাই সুখী হতে চায়। সুখের সংজ্ঞা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন। পশ্চিমা দেশগুলিতে সুখ মানে প্রায়শই অর্থ-সম্পদ, উচ্চ-আয় এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু বিপুল অর্থ-সম্পদের মধ্যেই কি জীবনের সব সুখ সুখ মেলে? অর্থ স্বল্প সময়ের জন্য সুখ দিতে পারে অবশ্য। তবে কি সুখের অনুভূতির পুরোটাই অর্থ দিয়ে মূল্যায়ন করা সম্ভব? সন্তুষ্টি লাভের পথে অর্থই শেষ কথা? নাকি অন্য কিছুর প্রয়োজন আছে জীবনে?

ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটিট অ্যাটোনোমা ডি বার্সেলোনার ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজিস’র গবেষকরা একটি অভিনব পদ্ধতির মাধ্যমে এই চিরন্তন প্রশ্নটির তদন্ত করেছেন। এবার তারা বাংলাদেশ এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জের দুটি আলাদা সমাজের বাসিন্দাদের ওপর জরিপ করেছেন যেখানে প্রতিদিনের জীবনে অর্থের খুবই সামান্য ভ‚মিকা রয়েছে। এই দেশ দু’টির নির্দিষ্ট দরিদ্র অঞ্চলে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষ কেবলমাত্র সুখ এবং তৃপ্তির প্রকাশই করেনি, পাশাপাশি, তারা সমাজের সর্বনিম্ন স্তরে থেকে সর্বোচ্চ মাত্রার সুখ প্রকাশ করেছেন।

বিপরীতে, বাংলাদেশ ও সলোমন দ্বীপ পুঞ্জের সর্বাধিক নগরায়িত, অর্থকেন্দ্রিক অঞ্চলে বসবাসকারী স্থানীয়রা তাদের সুখের মাত্রা কম বলে জানিয়েছেন। গবষণাটির লেখকরা জানিয়েছেন যে, এই দু’টি অঞ্চলের স্বল্পতম আর্থিক সুবিধা ভোগকারী অঞ্চলে বসবাসকারী ব্যক্তিরা সুখের তালিকায় ‘বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী জায়গা’র শীর্ষ তালিকায় সুইডেন বা ডেনমার্কের মতো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে বসবাসকারীদের একই অর্জন করেছেন।

মার্কিন লেখিকা গ্রেটচেন রুবিন তার ‘দ্য হ্যাপিনেস প্রজেক্ট’ বইতে লিখেছেন, অর্থ সুখ কিনতে পারে না। তবে অর্থ ব্যয় করে মানুষ যে অসংখ্য জিনিস কেনে, তা তাদের সুখের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই তথ্যগুলি আমাদের বলে যে, স্পষ্টতই, সুখের জন্য অর্থ জরুরি নয়। তবে পশ্চিমে অর্থ মূলত মানসিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। সুখ এবং অর্থের মধ্যকার এই চিরাচরিত টানাপোড়েন নিয়ে করা পূর্ববর্তী গবেষণাগুলিতে দেখা গেছে যে, আমেরিকা বা বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলির সমাজিক অবকাঠামো ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে অর্থ নির্ভর।

গবেষকরা মনে করেন, মানুষ কীভাবে তাদের অর্থ ব্যয় করবে বা করছে, তা সুখের অনুভূতির ওপর একটা বড় প্রভাব ফেলে। একজন আমেরিকান, জার্মান বা ইতালীয়ান প্রতি রাতে নির্ভাবনায় বালিশে মাথা রাখতে সক্ষম হবে না এবং অর্থ না থাকলে তারা নিজেদের এবং তাদের প্রিয়জনের জন্য কী সুবিধা সরবরাহ করতে পারে তা ভেবে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত বোধ করবে না। অথচ, এই অঞ্চলগুলিতে সুরক্ষিত জীবনযাপন করার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয় না তাই বাসিন্দাদের সুখি হওয়ার জন্য আসলে অর্থের প্রয়োজন সেই।

বাংলাদেশ ও সলোমন দ্বীপ জুড়ে মোট গড়ে ৩৭ বছর বয়সীদের ওপর এই জরিপ করা হয়। গবেষকরা মূলত স্থানীয়দের সুখের সংজ্ঞা, পাশাপাশি তাদের প্রতিদিনের মেজাজ, অভ্যাস, জীবনধারা এবং তাদের আয়ের সম্পর্কিত তথ্য খতিয়ে দেখেন। এই কাজটি গবেষকদের ক্রমবর্ধমান এই উপলব্ধি দিয়েছে যে, সুখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নীতিগতভাবে অর্থনৈতিক প্রাচুর্যের সাথে সম্পর্কিত নয়। মানুষ কোনও অর্থ উপার্জন করুক, বা না করুক, যখন তারা একটি শক্তিশালী সমাজের মধ্যে স্বস্তিকর ও নিরাপদ জীবন উপভোগ করতে পারে তখন তারা সুখি হয়। সূত্র : দ্য ল্যাডার্স।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সুখী মানুষ বাংলাদেশে

আপডেট টাইম : ০৪:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সবাই সুখী হতে চায়। সুখের সংজ্ঞা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন। পশ্চিমা দেশগুলিতে সুখ মানে প্রায়শই অর্থ-সম্পদ, উচ্চ-আয় এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু বিপুল অর্থ-সম্পদের মধ্যেই কি জীবনের সব সুখ সুখ মেলে? অর্থ স্বল্প সময়ের জন্য সুখ দিতে পারে অবশ্য। তবে কি সুখের অনুভূতির পুরোটাই অর্থ দিয়ে মূল্যায়ন করা সম্ভব? সন্তুষ্টি লাভের পথে অর্থই শেষ কথা? নাকি অন্য কিছুর প্রয়োজন আছে জীবনে?

ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটিট অ্যাটোনোমা ডি বার্সেলোনার ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজিস’র গবেষকরা একটি অভিনব পদ্ধতির মাধ্যমে এই চিরন্তন প্রশ্নটির তদন্ত করেছেন। এবার তারা বাংলাদেশ এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জের দুটি আলাদা সমাজের বাসিন্দাদের ওপর জরিপ করেছেন যেখানে প্রতিদিনের জীবনে অর্থের খুবই সামান্য ভ‚মিকা রয়েছে। এই দেশ দু’টির নির্দিষ্ট দরিদ্র অঞ্চলে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষ কেবলমাত্র সুখ এবং তৃপ্তির প্রকাশই করেনি, পাশাপাশি, তারা সমাজের সর্বনিম্ন স্তরে থেকে সর্বোচ্চ মাত্রার সুখ প্রকাশ করেছেন।

বিপরীতে, বাংলাদেশ ও সলোমন দ্বীপ পুঞ্জের সর্বাধিক নগরায়িত, অর্থকেন্দ্রিক অঞ্চলে বসবাসকারী স্থানীয়রা তাদের সুখের মাত্রা কম বলে জানিয়েছেন। গবষণাটির লেখকরা জানিয়েছেন যে, এই দু’টি অঞ্চলের স্বল্পতম আর্থিক সুবিধা ভোগকারী অঞ্চলে বসবাসকারী ব্যক্তিরা সুখের তালিকায় ‘বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী জায়গা’র শীর্ষ তালিকায় সুইডেন বা ডেনমার্কের মতো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে বসবাসকারীদের একই অর্জন করেছেন।

মার্কিন লেখিকা গ্রেটচেন রুবিন তার ‘দ্য হ্যাপিনেস প্রজেক্ট’ বইতে লিখেছেন, অর্থ সুখ কিনতে পারে না। তবে অর্থ ব্যয় করে মানুষ যে অসংখ্য জিনিস কেনে, তা তাদের সুখের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই তথ্যগুলি আমাদের বলে যে, স্পষ্টতই, সুখের জন্য অর্থ জরুরি নয়। তবে পশ্চিমে অর্থ মূলত মানসিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। সুখ এবং অর্থের মধ্যকার এই চিরাচরিত টানাপোড়েন নিয়ে করা পূর্ববর্তী গবেষণাগুলিতে দেখা গেছে যে, আমেরিকা বা বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলির সমাজিক অবকাঠামো ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে অর্থ নির্ভর।

গবেষকরা মনে করেন, মানুষ কীভাবে তাদের অর্থ ব্যয় করবে বা করছে, তা সুখের অনুভূতির ওপর একটা বড় প্রভাব ফেলে। একজন আমেরিকান, জার্মান বা ইতালীয়ান প্রতি রাতে নির্ভাবনায় বালিশে মাথা রাখতে সক্ষম হবে না এবং অর্থ না থাকলে তারা নিজেদের এবং তাদের প্রিয়জনের জন্য কী সুবিধা সরবরাহ করতে পারে তা ভেবে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত বোধ করবে না। অথচ, এই অঞ্চলগুলিতে সুরক্ষিত জীবনযাপন করার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয় না তাই বাসিন্দাদের সুখি হওয়ার জন্য আসলে অর্থের প্রয়োজন সেই।

বাংলাদেশ ও সলোমন দ্বীপ জুড়ে মোট গড়ে ৩৭ বছর বয়সীদের ওপর এই জরিপ করা হয়। গবেষকরা মূলত স্থানীয়দের সুখের সংজ্ঞা, পাশাপাশি তাদের প্রতিদিনের মেজাজ, অভ্যাস, জীবনধারা এবং তাদের আয়ের সম্পর্কিত তথ্য খতিয়ে দেখেন। এই কাজটি গবেষকদের ক্রমবর্ধমান এই উপলব্ধি দিয়েছে যে, সুখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নীতিগতভাবে অর্থনৈতিক প্রাচুর্যের সাথে সম্পর্কিত নয়। মানুষ কোনও অর্থ উপার্জন করুক, বা না করুক, যখন তারা একটি শক্তিশালী সমাজের মধ্যে স্বস্তিকর ও নিরাপদ জীবন উপভোগ করতে পারে তখন তারা সুখি হয়। সূত্র : দ্য ল্যাডার্স।