ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজেকে নির্দোষ দাবি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ চার আসামি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। মঙ্গলবার ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিনের প্রশ্নের উত্তরে নির্দোষ দাবি করে তারা বিচার প্রার্থনা করেন।

নির্দোষ দাবি করা অপর আসামিরা হলেন- সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রাক্তন মহাপরিচালক আব্দুর রহিম এবং প্রাক্তন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু।

বিচারক এ আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি গ্রহণের আগে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আসা সাক্ষ্য পৃথকভাবে পড়ে শোনান। এরপর বিচারক তাদের পৃথকভাবে জানতে চান, তারা দোষী না নির্দোষ? জবাবে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরপর তারা সাফাই সাক্ষ্য দেবেন কি না, প্রশ্ন করলে তারা নিজেরা লিখিতভাবে সাফাই সাক্ষ্য দেবেন বলে জানান।

এরপর বিচারক আগামী ধার্য তারিখে তাদের লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেওয়ার জন্য বলে আগামী ১০, ১১ ও ১২ জুলাই আত্মপক্ষ শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

এর আগে মামলাটিতে ২০ আসামি অত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পারসোনাল অফিসার এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গত ৩০ মে মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর এ আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য করেন।

মামলাটিতে আসামি খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, প্রাক্তন আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও প্রাক্তন ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম জামিনে রয়েছেন।

অন্যদিকে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, প্রাক্তন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৪ জন কারাগারে এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ১৯ জন পলাতক। এ মামলার আসামি হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় আওয়ামী মহিলা লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ দলের ২৪ নেতাকর্মীর নির্মম মৃত্যু হয়।

এ ছাড়া আহত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, সাহারা খাতুন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, নাসিমা ফেরদৌস, রুমা ইসলামসহ শতাধিক নেতাকর্মী।

এই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মতিঝিল থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুর রশীদ হয়ে মুন্সী আতিকুর রহমানের কাছে যায়। অভিযোগ আসে, মুন্সী আতিক ও আবদুর রশীদ মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য জজ মিয়া নাটক সাজান। তাঁর কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করা হয়।

পরিবারকে প্রতি মাসে টাকা দেওয়ার কথাও বলা হয়। মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা- এফবিআই ও আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা  (ইন্টারপোল) মামলার তদন্ত করে। ২০০৮ সালের ১১ জুনে এ মামলার প্রথম অভিযোগপত্র দেন সিআইডির এএসপি ফজলুল কবীর। এতে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, মুফতি হান্নান ছিলেন ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তাদের লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করা। এ ছাড়া ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ভূমিকা ছিল বলেও বলা হয়েছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য দায়িত্ব পান পুলিশের বিশেষ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ।

পুনর্তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ৩ জুলাই তিনি আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই অভিযোগপত্রে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়।

এ ছাড়া গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করে ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন আসামি। তাঁরা হলেন মুফতি হান্নান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফ হাসান সুমন ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

নিজেকে নির্দোষ দাবি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের

আপডেট টাইম : ০২:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ চার আসামি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। মঙ্গলবার ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিনের প্রশ্নের উত্তরে নির্দোষ দাবি করে তারা বিচার প্রার্থনা করেন।

নির্দোষ দাবি করা অপর আসামিরা হলেন- সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রাক্তন মহাপরিচালক আব্দুর রহিম এবং প্রাক্তন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু।

বিচারক এ আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি গ্রহণের আগে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আসা সাক্ষ্য পৃথকভাবে পড়ে শোনান। এরপর বিচারক তাদের পৃথকভাবে জানতে চান, তারা দোষী না নির্দোষ? জবাবে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরপর তারা সাফাই সাক্ষ্য দেবেন কি না, প্রশ্ন করলে তারা নিজেরা লিখিতভাবে সাফাই সাক্ষ্য দেবেন বলে জানান।

এরপর বিচারক আগামী ধার্য তারিখে তাদের লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেওয়ার জন্য বলে আগামী ১০, ১১ ও ১২ জুলাই আত্মপক্ষ শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

এর আগে মামলাটিতে ২০ আসামি অত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পারসোনাল অফিসার এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গত ৩০ মে মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর এ আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য করেন।

মামলাটিতে আসামি খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, প্রাক্তন আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও প্রাক্তন ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম জামিনে রয়েছেন।

অন্যদিকে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, প্রাক্তন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৪ জন কারাগারে এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ১৯ জন পলাতক। এ মামলার আসামি হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় আওয়ামী মহিলা লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ দলের ২৪ নেতাকর্মীর নির্মম মৃত্যু হয়।

এ ছাড়া আহত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, সাহারা খাতুন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, নাসিমা ফেরদৌস, রুমা ইসলামসহ শতাধিক নেতাকর্মী।

এই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মতিঝিল থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুর রশীদ হয়ে মুন্সী আতিকুর রহমানের কাছে যায়। অভিযোগ আসে, মুন্সী আতিক ও আবদুর রশীদ মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য জজ মিয়া নাটক সাজান। তাঁর কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করা হয়।

পরিবারকে প্রতি মাসে টাকা দেওয়ার কথাও বলা হয়। মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা- এফবিআই ও আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা  (ইন্টারপোল) মামলার তদন্ত করে। ২০০৮ সালের ১১ জুনে এ মামলার প্রথম অভিযোগপত্র দেন সিআইডির এএসপি ফজলুল কবীর। এতে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, মুফতি হান্নান ছিলেন ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তাদের লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করা। এ ছাড়া ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ভূমিকা ছিল বলেও বলা হয়েছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য দায়িত্ব পান পুলিশের বিশেষ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ।

পুনর্তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ৩ জুলাই তিনি আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই অভিযোগপত্রে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়।

এ ছাড়া গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করে ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন আসামি। তাঁরা হলেন মুফতি হান্নান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফ হাসান সুমন ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।