প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী বুধবার (১৯ জুলাই) ১৪ দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক হবে। দীর্ঘ ১৬ মাস পর তিনি জোটের নেতাদের সঙ্গে বসছেন।
জোটের শরিকদের নিয়ে শেখ হাসিনা এমন একটা সময় বৈঠক করতে যাচ্ছেন, যখন নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে বিভিন্ন দল ও জোট সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে গেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকেও সরকারের ওপর একধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে।
নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ঢাকা সফর করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছেন।
এর আগে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি দিয়েছে। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কি না, সে ব্যাপারে পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল ১৬ দিনের সফরে এখন ঢাকায় রয়েছে। এমন এক পটভূমিতে ক্ষমতাসীন ১৪–দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
জোট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। বিএনপি ও তার মিত্রদের সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করা হবে। সেইসঙ্গে দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতি ও জনজীবনের সংকট মোকাবিলায় জোটের কার্যক্রম শক্তিশালী করার বিষয় নিয়েও শরিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন শেখ হাসিনা।
গতকাল রোববার রাতে জোট শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জোট নেতাদের বৈঠকের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, বৈঠকের জন্য শরিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জোটের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁদের বৈঠকে আগামী নির্বাচন, বিরোধী দলের আন্দোলনসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।
জোটের আরেকটি শরিক দলের একজন নেতা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা গত বছরের মার্চে জোটের শরিকদের নিয়ে সর্বশেষ যে বৈঠক করেছিলেন, সেই বৈঠকে আগের তিনটি নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আগামী জাতীয় নির্বাচনও জোটগতভাবে করার কথা বলা হয়েছিল।
তবে অবহেলা, অবমূল্যায়নসহ নানা অভিযোগে জোটের শরিকদের মধ্যে মান–অভিমান ও ক্ষোভ রয়েছে অনেক দিন ধরে। বিভিন্ন সময় শরিক দলগুলোর কোনো কোনো নেতা তা নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্যও দিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, বুধবারের বৈঠকে জোটের প্রতিটি শরিক দলের দু’জন করে শীর্ষনেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দলগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়করা বৈঠকে অংশ নেবেন।
তবে শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক কয়েকজন নেতা এই বৈঠকে থাকবেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক-মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ উপদেষ্টা পরিষদ ও সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন নেতা বৈঠকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। বৈঠকে আমন্ত্রিত সব নেতার করোনা পরীক্ষা বৈঠকের আগেই করতে বলা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটবিরোধী আন্দোলন শেষে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোট।
তবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় ১৪ দল শরিকদের কারও ঠাঁই হয়নি। এর আগের দুই মেয়াদের সরকারে থাকা মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির নেতারাও মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন।