ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলতি মাসেই সর্বজনীন পেনশন চালু, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

চলছে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর প্রস্তুতি। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় চাচ্ছে চলতি মাসেই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উদ্বোধনের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া গেলেই পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রা শুরু করবে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে হয়তো আগস্টের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া যেতে পারে।

অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন চলতি মাসের শেষ দিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ছয় ডিএমডির একজন হিসেবে যোগ দেবেন। সেজন্য তার অর্থসচিব হিসাবে দায়িত্বে থাকা অবস্থাতেই এ কর্মসূচির উদ্বোধনের তোড়জোড় চলছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অবশ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেছিলেন যে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকেই দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস হয়। বিলে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিকের নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করার বিধান রাখা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের। এগুলো হচ্ছে- নির্বাচন কমিশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড। এসব এমওইউর খসড়ার কাজ সমাপ্তির পথে। অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) সফটওয়্যারের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে। পেনশন ব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কাজ হবে অনলাইনে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, পেনশন কর্মসূচিতে যোগদানের যোগ্যতা ও নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধিমালা এবং জাতীয় পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) বিধিমালা নামের তিনটি বিধিমালার প্রজ্ঞাপন পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে জারি করা হবে।

শুরুতে চার শ্রেণির ব্যক্তিরা পেনশন কর্মসূচির আওতায় আসবেন। তারা হচ্ছেন- প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং অসচ্ছল ব্যক্তি।

মাসিক চাঁদা হতে পারে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা আর সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কর্মসূচি পরিবর্তন এবং চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ থাকছে।

পাস হওয়া ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’অনুসারে, ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

এ ছাড়া বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও এই আইনের আওতায় নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। আজীবন বলতে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদা দাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন।

এতে আরও বলা হয়েছে- নিম্ন আয় সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে।

বিলে বলা হয়েছে, একজন পেনশনার আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন। তবে পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন, যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে এবং পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিলে।

সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি অথবা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে। এক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা পেনশন ব্যবস্থার আওতা বহির্ভূত থাকবে। সরকার আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রজ্ঞাপন জারি করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

চলতি মাসেই সর্বজনীন পেনশন চালু, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

আপডেট টাইম : ০৫:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অগাস্ট ২০২৩

চলছে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর প্রস্তুতি। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় চাচ্ছে চলতি মাসেই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উদ্বোধনের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া গেলেই পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রা শুরু করবে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে হয়তো আগস্টের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া যেতে পারে।

অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন চলতি মাসের শেষ দিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ছয় ডিএমডির একজন হিসেবে যোগ দেবেন। সেজন্য তার অর্থসচিব হিসাবে দায়িত্বে থাকা অবস্থাতেই এ কর্মসূচির উদ্বোধনের তোড়জোড় চলছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অবশ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেছিলেন যে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকেই দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস হয়। বিলে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিকের নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করার বিধান রাখা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের। এগুলো হচ্ছে- নির্বাচন কমিশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড। এসব এমওইউর খসড়ার কাজ সমাপ্তির পথে। অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) সফটওয়্যারের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে। পেনশন ব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কাজ হবে অনলাইনে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, পেনশন কর্মসূচিতে যোগদানের যোগ্যতা ও নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধিমালা এবং জাতীয় পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) বিধিমালা নামের তিনটি বিধিমালার প্রজ্ঞাপন পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে জারি করা হবে।

শুরুতে চার শ্রেণির ব্যক্তিরা পেনশন কর্মসূচির আওতায় আসবেন। তারা হচ্ছেন- প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং অসচ্ছল ব্যক্তি।

মাসিক চাঁদা হতে পারে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা আর সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কর্মসূচি পরিবর্তন এবং চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ থাকছে।

পাস হওয়া ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’অনুসারে, ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

এ ছাড়া বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও এই আইনের আওতায় নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। আজীবন বলতে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদা দাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন।

এতে আরও বলা হয়েছে- নিম্ন আয় সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে।

বিলে বলা হয়েছে, একজন পেনশনার আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন। তবে পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, পেনশন তহবিলে জমা দেওয়া অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন পড়লে চাঁদাদাতা আবেদন করলে জমা দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন, যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে এবং পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিলে।

সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি অথবা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে। এক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা পেনশন ব্যবস্থার আওতা বহির্ভূত থাকবে। সরকার আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রজ্ঞাপন জারি করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করবে।