ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক আইজিপিকে এলাকা ছাড়তে বললেন সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি

এবার একই মাঠে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সমর্থনের দাপট দেখালেন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল কাহার আখন্দ। নৌকার পক্ষে কথা না বললে সাবেক আইজিপিকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন তিনি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাকুন্দিয়া পৌর সদর ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনি জনসভায় বর্তমান এমপি সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি সোহরাবকে উদ্দেশ করে কঠোর সমালোচনা ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আবদুল কাহার আখন্দ।

তিনি বলেন, আইজিপি সাহেব আপনাকে আমি চিনি। আপনার বাড়ি আর আমার বাড়ি কাছাকাছি। আপনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আর একটি কথাও বলবেন না, একটি পাও ফেলবেন না। নৌকার পক্ষে কথা বলুন। আর তা না হলে এলাকা ছেড়ে ঢাকা যান। না হলে কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়ার নেতাকর্মীরা আপনার বাড়ি ঘেরাও করবেন।

এ সময় সমাগত জনতাকে উদ্দেশ করে কাহার আখন্দ বলেন, আইজিপির বাবা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সাক্ষী ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ঈগল প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন নিজেই রাজাকার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলাও হয়েছে।

এ সময় কাহার আখন্দ আরও বলেন, কোনোপ্রকার ষড়যন্ত্র এবং গুজব-ভাঁওতাবাজিতে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মী-সমর্থকরা যে বিভ্রান্ত হয় না, পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরের ঈদগাহ ময়দানের বিশাল উপস্থিতিই এর প্রমাণ করে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও এর প্রতিফলন ঘটবে বলে দাবি করেন তিনি।

এ সময় সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি তার নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লেবাসধারী লোকজন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মেজর আখতারের পক্ষে জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগ নেতাদের কাজে লাগাতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান এমপি সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর আখতারকে সমর্থন জানিয়ে টাকা-পয়সাও বিলি করছেন। গোয়েন্দা পরিচয়ে কোনো লোকজন আসলে তাদেরও পাকড়াও করার নির্দেশ দেন কাহার আখন্দ।

এর আগে সোমবার বিকালে একই মাঠে নির্বাচনী জনসভা করেন কটিয়াদী উপজেলার অপর সন্তান ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। তার জনসভা মঞ্চে প্রায় সব কজন আওয়ামী লীগ নেতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

আর তাদের উপস্থিতিতেই তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।

আর এ কারণে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবদুল কাহার আখন্দের মঙ্গলবারের এ নির্বাচনি জনসভা নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয় এলাকাবাসীর মাঝে।

কিন্তু মঙ্গলবার নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবদুল কাহার আখন্দের জনসভায় কিংবা মঞ্চে বর্তমান এমপি সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ সমর্থক হিসেবে পরিচিত এসব জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগ নেতাদের দেখা না গেলেও বিরাট লোকসমাগম ঘটে।

মঙ্গলবার বিকালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পৌর সদর ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনি জনসভায় সভাপতিত্ব করেন পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু।

জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ আফজল।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও জেলা জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবু নাসের ফারুক মোহাম্মদ সঞ্জু, পাকুন্দিয়া উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবীর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মোতায়েম হোসেন স্বপন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য একেএম দেলোয়ার হোসেন, পাকুন্দিয়া পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম আখন্দ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন এবার দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এ আসন থেকে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশ আলোচিত তিন প্রার্থীতে বিভক্ত হয়ে প্রকাশ্যে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে যোগ দিচ্ছেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক আইজিপিকে এলাকা ছাড়তে বললেন সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি

আপডেট টাইম : ০৬:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৪

এবার একই মাঠে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সমর্থনের দাপট দেখালেন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল কাহার আখন্দ। নৌকার পক্ষে কথা না বললে সাবেক আইজিপিকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন তিনি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাকুন্দিয়া পৌর সদর ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনি জনসভায় বর্তমান এমপি সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি সোহরাবকে উদ্দেশ করে কঠোর সমালোচনা ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আবদুল কাহার আখন্দ।

তিনি বলেন, আইজিপি সাহেব আপনাকে আমি চিনি। আপনার বাড়ি আর আমার বাড়ি কাছাকাছি। আপনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আর একটি কথাও বলবেন না, একটি পাও ফেলবেন না। নৌকার পক্ষে কথা বলুন। আর তা না হলে এলাকা ছেড়ে ঢাকা যান। না হলে কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়ার নেতাকর্মীরা আপনার বাড়ি ঘেরাও করবেন।

এ সময় সমাগত জনতাকে উদ্দেশ করে কাহার আখন্দ বলেন, আইজিপির বাবা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সাক্ষী ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ঈগল প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন নিজেই রাজাকার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলাও হয়েছে।

এ সময় কাহার আখন্দ আরও বলেন, কোনোপ্রকার ষড়যন্ত্র এবং গুজব-ভাঁওতাবাজিতে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মী-সমর্থকরা যে বিভ্রান্ত হয় না, পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরের ঈদগাহ ময়দানের বিশাল উপস্থিতিই এর প্রমাণ করে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও এর প্রতিফলন ঘটবে বলে দাবি করেন তিনি।

এ সময় সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি তার নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লেবাসধারী লোকজন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মেজর আখতারের পক্ষে জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগ নেতাদের কাজে লাগাতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান এমপি সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর আখতারকে সমর্থন জানিয়ে টাকা-পয়সাও বিলি করছেন। গোয়েন্দা পরিচয়ে কোনো লোকজন আসলে তাদেরও পাকড়াও করার নির্দেশ দেন কাহার আখন্দ।

এর আগে সোমবার বিকালে একই মাঠে নির্বাচনী জনসভা করেন কটিয়াদী উপজেলার অপর সন্তান ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। তার জনসভা মঞ্চে প্রায় সব কজন আওয়ামী লীগ নেতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

আর তাদের উপস্থিতিতেই তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।

আর এ কারণে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবদুল কাহার আখন্দের মঙ্গলবারের এ নির্বাচনি জনসভা নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয় এলাকাবাসীর মাঝে।

কিন্তু মঙ্গলবার নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবদুল কাহার আখন্দের জনসভায় কিংবা মঞ্চে বর্তমান এমপি সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ সমর্থক হিসেবে পরিচিত এসব জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগ নেতাদের দেখা না গেলেও বিরাট লোকসমাগম ঘটে।

মঙ্গলবার বিকালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পৌর সদর ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনি জনসভায় সভাপতিত্ব করেন পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু।

জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ আফজল।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও জেলা জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবু নাসের ফারুক মোহাম্মদ সঞ্জু, পাকুন্দিয়া উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবীর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মোতায়েম হোসেন স্বপন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য একেএম দেলোয়ার হোসেন, পাকুন্দিয়া পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম আখন্দ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন এবার দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এ আসন থেকে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশ আলোচিত তিন প্রার্থীতে বিভক্ত হয়ে প্রকাশ্যে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে যোগ দিচ্ছেন।