ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিয়েতে সমতা বিধান কেন প্রয়োজন

বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি, যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) বিয়েকে দেহ ও মনের প্রশান্তি অর্জনের উপায় বললেও বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনে মানুষ প্রশান্তি পাচ্ছে না কেন? কেন পরিবারগুলোতে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে? আমাদের মুসলিম সমাজে দাম্পত্য কলহ ও বিবাহবিচ্ছেদের কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম বড় কারণ হলো, বিয়ের সময় ‘কুফু আইন’ না মানা এবং জীবনে ইসলামী অনুশাসন অমান্য করা।

কুফু আইন আসলে কী? বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের রুচি, চাহিদা, বংশ, যোগ্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলে।

পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. উবায়েদ আহমেদ খান ও গবেষক হাফিজ নাকিব ‘Pakistan Journal of Gender Studies’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র ‘Importance Of The Law Of Compatibility (Kufu) In Islamic Marriage’-এ ইসলামের কুফু আইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উল্লেখ আছে- ‘এই (কুফু) আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো সফল বিবাহ এবং মনস্তাত্ত্বিক ভারসাম্য রক্ষার উদ্দেশ্যে সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করা।

এই আর্টিকলে আরো উল্লেখ আছে, ‘সামঞ্জস্যের আইন (কুফু) একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। আর এই আইনটি যদি বিয়ের ক্ষেত্রে ভালোভাবে অনুশীলন করা হয়, তাহলে তা বিয়েকে সফল করতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে যদি এই আইনটি অগ্রাহ্য করা হয়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যের অভাবে মুসলিম সমাজে দাম্পত্য জীবনে ঝামেলা তৈরি করে। এমনকি এটি বিবাহবিচ্ছেদও ঘটাতে পারে। জরুরি প্রয়োজনে বিবাহবিচ্ছেদ বৈধ হলেও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে তা একেবারে অপছন্দনীয় কাজ। ’

আসলে কুফু আইন একটি বিয়েকে সফল করতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। ‘Marriage: Making and Living it’ নামক বইয়ে উল্লেখ আছে, ‘একদম নিজের মনমতো হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, তবে অমিল কতখানি তা খেয়াল রাখতে হবে। কেননা সেটুকু হয় আপনাকে বদলাতে হবে অথবা মানিয়ে নিতে হবে।

মনে রাখবেন, পরিবর্তন সাধন সব সময়ই কষ্টকর; তাই ভিন্নতা যত কম হবে বৈবাহিক জীবনে আপনার সুখী হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি হবে। ’

সেই বইয়ে লেখক আরো লেখেন, ‘দাম্পত্য জীবনের সুখশান্তি কেবল স্বামী-স্ত্রীর মনমানসিকতা ও আচার-আচরণের ওপরই নির্ভর করে। ’

পরিশেষে বলতে চাই যে বিয়ের ক্ষেত্রে কুফু আইন মানার পাশাপাশি দাম্পত্য জীবনকে গুছিয়ে নিয়ে ভালোভাবে চলতে প্রয়োজন হয় অনেক প্রচেষ্টা, আপস এবং ত্যাগ। দাম্পত্য জীবনের যত্নও নিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই যত্ন নিতে পারার ব্যর্থতাও দাম্পত্য জীবন সফল হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতিটি মুসলিমের উচিত বিয়ের সময় কুফু আইন মানার পাশাপাশি দাম্পত্য জীবনে একে অপরের চাওয়া-পাওয়ার গুরুত্ব দেওয়া। মূলত পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক এবং একে অপরের পোশাকস্বরূপ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, ‘তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোশাকস্বরূপ। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বিয়েতে সমতা বিধান কেন প্রয়োজন

আপডেট টাইম : ০৪:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৪

বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি, যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) বিয়েকে দেহ ও মনের প্রশান্তি অর্জনের উপায় বললেও বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনে মানুষ প্রশান্তি পাচ্ছে না কেন? কেন পরিবারগুলোতে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে? আমাদের মুসলিম সমাজে দাম্পত্য কলহ ও বিবাহবিচ্ছেদের কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম বড় কারণ হলো, বিয়ের সময় ‘কুফু আইন’ না মানা এবং জীবনে ইসলামী অনুশাসন অমান্য করা।

কুফু আইন আসলে কী? বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের রুচি, চাহিদা, বংশ, যোগ্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলে।

পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. উবায়েদ আহমেদ খান ও গবেষক হাফিজ নাকিব ‘Pakistan Journal of Gender Studies’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র ‘Importance Of The Law Of Compatibility (Kufu) In Islamic Marriage’-এ ইসলামের কুফু আইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উল্লেখ আছে- ‘এই (কুফু) আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো সফল বিবাহ এবং মনস্তাত্ত্বিক ভারসাম্য রক্ষার উদ্দেশ্যে সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করা।

এই আর্টিকলে আরো উল্লেখ আছে, ‘সামঞ্জস্যের আইন (কুফু) একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। আর এই আইনটি যদি বিয়ের ক্ষেত্রে ভালোভাবে অনুশীলন করা হয়, তাহলে তা বিয়েকে সফল করতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে যদি এই আইনটি অগ্রাহ্য করা হয়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যের অভাবে মুসলিম সমাজে দাম্পত্য জীবনে ঝামেলা তৈরি করে। এমনকি এটি বিবাহবিচ্ছেদও ঘটাতে পারে। জরুরি প্রয়োজনে বিবাহবিচ্ছেদ বৈধ হলেও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে তা একেবারে অপছন্দনীয় কাজ। ’

আসলে কুফু আইন একটি বিয়েকে সফল করতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। ‘Marriage: Making and Living it’ নামক বইয়ে উল্লেখ আছে, ‘একদম নিজের মনমতো হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, তবে অমিল কতখানি তা খেয়াল রাখতে হবে। কেননা সেটুকু হয় আপনাকে বদলাতে হবে অথবা মানিয়ে নিতে হবে।

মনে রাখবেন, পরিবর্তন সাধন সব সময়ই কষ্টকর; তাই ভিন্নতা যত কম হবে বৈবাহিক জীবনে আপনার সুখী হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি হবে। ’

সেই বইয়ে লেখক আরো লেখেন, ‘দাম্পত্য জীবনের সুখশান্তি কেবল স্বামী-স্ত্রীর মনমানসিকতা ও আচার-আচরণের ওপরই নির্ভর করে। ’

পরিশেষে বলতে চাই যে বিয়ের ক্ষেত্রে কুফু আইন মানার পাশাপাশি দাম্পত্য জীবনকে গুছিয়ে নিয়ে ভালোভাবে চলতে প্রয়োজন হয় অনেক প্রচেষ্টা, আপস এবং ত্যাগ। দাম্পত্য জীবনের যত্নও নিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই যত্ন নিতে পারার ব্যর্থতাও দাম্পত্য জীবন সফল হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতিটি মুসলিমের উচিত বিয়ের সময় কুফু আইন মানার পাশাপাশি দাম্পত্য জীবনে একে অপরের চাওয়া-পাওয়ার গুরুত্ব দেওয়া। মূলত পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক এবং একে অপরের পোশাকস্বরূপ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, ‘তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোশাকস্বরূপ। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৭)