ঢাকা , বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপি ও জোটের মধ্যে বিভেদ, যৌথ আন্দোলন বিলম্বিত

বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি ও এর মিত্রদের মধ্যে মতবিরোধ প্রসারিত হয়েছে, যা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল ও বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে তাদের যুগপৎ আন্দোলন পুনরায় শুরু করতে বিলম্ব করছে। বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি ও ছয় দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ এখন আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করছে। যদিও দলটির নেতারা প্রকাশ্যে দাবি করছেন যে তাদের সম্পর্ক এখনও অটুট রয়েছে, তবে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব একযোগে আন্দোলন শুরু করতে বিলম্ব করছে বলে জানিয়েছেন। বিএনপি ২৬ জানুয়ারি সারাদেশের জেলা শহরে এবং ২৭ জানুয়ারি মহানগরে কালো পতাকা মিছিল পালন করে যার মধ্যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব নেতার মুক্তি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ করা হয়। ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী শ্মশান জোট, গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টিসহ সহযোগী সংগঠনগুলো একযোগে কর্মসূচি পালন করলেও গণতন্ত্র মঞ্চ ও জামায়াত কর্মসূচি পালনে বিরত থাকে। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। জনগণের দাবি আদায়ে আমরা আমাদের যুগপৎ আন্দোলন অনুযায়ী শীঘ্রই সাধারণ কর্মসূচি পালন শুরু করব। বিএনপির সূত্র জানায়, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান ও ভাইস-চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু অন্যান্য দল ও জোটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কার্যত অন্য দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। বর্তমানে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে জামায়াতের সঙ্গে দৃশ্যত দূরত্ব বজায় রাখলেও উভয় দলই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যেতে চায় তবে এতে প্রধান বাঁধ গণতন্ত্র মঞ্চ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে তাদের ব্যর্থতার পর মতবিরোধ আবার গুরুতর আকার ধারণ করেছে কারণ জামায়াত ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা তুলনামূলক দুর্বল রাজনৈতিক কৌশল ও নরম কর্মসূচি মনে করছেন। একই সঙ্গে বিএনপি নেতাদের মধ্যে দুটি গ্রুপ রয়েছে, যাদের একটি গণতন্ত্র মঞ্চ ও অন্যের মতামতকে উপেক্ষা করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনে নামতে চায়। অপরটি ইসলামি দলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য জামায়াতের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে যেতে চায় না। এ অবস্থায় বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তাদের দল কিছু ছোট রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একযোগে আন্দোলনে লাভ-ক্ষতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে। তিনি বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর আমাদের দল সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা জামায়াতের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে যাবে কি না এবং কীভাবে গণতন্ত্র মঞ্চকে এ ব্যাপারে রাজি করাবে। যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। তারা [বিএনপি] নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং আমরাও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। বর্তমানে তারা ধীর গতিতে চলছে। আমরা এখনও যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছি তবে যুগপত কোনো কর্মসূচি এখনো ঠিক হয়নি,” বলেন তিনি। জামায়াতের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইসলামি দলের সঙ্গে একসঙ্গে কোনো ‘কার্যকর ও শক্তিশালী’ আন্দোলন না করায় তারা বিএনপির ওপরও অসন্তুষ্ট।এজন্য বিএনপির সঙ্গে একযোগে কর্মসূচি পালন থেকেও দূরে রয়েছে দলটি। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেছেন, “আমরা এখনও বিএনপির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছি এবং প্রধান বিরোধী দলের যুগপৎ আন্দোলনের প্রতিও আমাদের সমর্থন রয়েছে। দলটির নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে রাজধানীতে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ বানচাল হওয়ার পর বিরোধী দল ও তার সহযোগীরা তাদের দাবি আদায়ে ১২ দফায় ২৩ দিন দেশব্যাপী অবরোধ ও চার দফায় পাঁচ দিন হরতাল পালন করে। তবে কোন লাভ হয়নি। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটি তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা, রাজনৈতিক কৌশল, আগামী আন্দোলন এবং অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ধরন নির্ধারণের জন্য চলতি সপ্তাহে বৈঠক করবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বিএনপি ও জোটের মধ্যে বিভেদ, যৌথ আন্দোলন বিলম্বিত

আপডেট টাইম : ০৩:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি ও এর মিত্রদের মধ্যে মতবিরোধ প্রসারিত হয়েছে, যা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল ও বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে তাদের যুগপৎ আন্দোলন পুনরায় শুরু করতে বিলম্ব করছে। বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি ও ছয় দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ এখন আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করছে। যদিও দলটির নেতারা প্রকাশ্যে দাবি করছেন যে তাদের সম্পর্ক এখনও অটুট রয়েছে, তবে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব একযোগে আন্দোলন শুরু করতে বিলম্ব করছে বলে জানিয়েছেন। বিএনপি ২৬ জানুয়ারি সারাদেশের জেলা শহরে এবং ২৭ জানুয়ারি মহানগরে কালো পতাকা মিছিল পালন করে যার মধ্যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব নেতার মুক্তি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ করা হয়। ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী শ্মশান জোট, গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টিসহ সহযোগী সংগঠনগুলো একযোগে কর্মসূচি পালন করলেও গণতন্ত্র মঞ্চ ও জামায়াত কর্মসূচি পালনে বিরত থাকে। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। জনগণের দাবি আদায়ে আমরা আমাদের যুগপৎ আন্দোলন অনুযায়ী শীঘ্রই সাধারণ কর্মসূচি পালন শুরু করব। বিএনপির সূত্র জানায়, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান ও ভাইস-চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু অন্যান্য দল ও জোটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কার্যত অন্য দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। বর্তমানে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে জামায়াতের সঙ্গে দৃশ্যত দূরত্ব বজায় রাখলেও উভয় দলই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যেতে চায় তবে এতে প্রধান বাঁধ গণতন্ত্র মঞ্চ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে তাদের ব্যর্থতার পর মতবিরোধ আবার গুরুতর আকার ধারণ করেছে কারণ জামায়াত ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা তুলনামূলক দুর্বল রাজনৈতিক কৌশল ও নরম কর্মসূচি মনে করছেন। একই সঙ্গে বিএনপি নেতাদের মধ্যে দুটি গ্রুপ রয়েছে, যাদের একটি গণতন্ত্র মঞ্চ ও অন্যের মতামতকে উপেক্ষা করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনে নামতে চায়। অপরটি ইসলামি দলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য জামায়াতের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে যেতে চায় না। এ অবস্থায় বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তাদের দল কিছু ছোট রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একযোগে আন্দোলনে লাভ-ক্ষতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে। তিনি বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর আমাদের দল সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা জামায়াতের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে যাবে কি না এবং কীভাবে গণতন্ত্র মঞ্চকে এ ব্যাপারে রাজি করাবে। যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। তারা [বিএনপি] নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং আমরাও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। বর্তমানে তারা ধীর গতিতে চলছে। আমরা এখনও যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছি তবে যুগপত কোনো কর্মসূচি এখনো ঠিক হয়নি,” বলেন তিনি। জামায়াতের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইসলামি দলের সঙ্গে একসঙ্গে কোনো ‘কার্যকর ও শক্তিশালী’ আন্দোলন না করায় তারা বিএনপির ওপরও অসন্তুষ্ট।এজন্য বিএনপির সঙ্গে একযোগে কর্মসূচি পালন থেকেও দূরে রয়েছে দলটি। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেছেন, “আমরা এখনও বিএনপির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছি এবং প্রধান বিরোধী দলের যুগপৎ আন্দোলনের প্রতিও আমাদের সমর্থন রয়েছে। দলটির নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে রাজধানীতে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ বানচাল হওয়ার পর বিরোধী দল ও তার সহযোগীরা তাদের দাবি আদায়ে ১২ দফায় ২৩ দিন দেশব্যাপী অবরোধ ও চার দফায় পাঁচ দিন হরতাল পালন করে। তবে কোন লাভ হয়নি। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটি তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা, রাজনৈতিক কৌশল, আগামী আন্দোলন এবং অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ধরন নির্ধারণের জন্য চলতি সপ্তাহে বৈঠক করবে।