ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘদিনেও হয়নি সড়ক, স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে নির্মাণ

জনপ্রতিনিধিরা বার বার আশ্বাস দিলেও দীর্ঘদিনেও হয়নি সড়ক নির্মাণ। তাই স্বেচ্ছাশ্রমে ওই সড়ক নির্মাণ করছেন এলাকাবাসী। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভেরখাষ ইউনিয়নের চরকৃষ্ণপুর গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, অনেক বছর ধরে সড়ক নির্মাণের দাবি করা হচ্ছিল। দীর্ঘদিনেও দাবি পূরণ না হওয়ায় এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এমন দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণে অনেক টাকার প্রয়োজন। তারপরও নিজেদের যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়েই নেমেছেন। সড়কটি নির্মাণ হলে বহুমুখী সুবিধা পাবেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। গ্রামে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। বছরের বেশিরভাগ সময় আমাদের বন্যা আর বৃষ্টিতে কষ্ট করতে হয়। সেসময় যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। শুকনো মৌসুমে ক্ষেতের আইল (সরু রাস্তা) দিয়ে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়। পায়ে হেটে পাড়ি দিতে হয় প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ। এ পথে চরবাসীর উৎপাদিত কৃষি পণ্য বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা-নেওয়া খুবই কষ্টের। চরের ছেলে-মেয়রা যোগাযোগের অভাবে লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়েছে। বহু বছর ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেও সড়কটি নির্মাণ করা যায়নি। তাই গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে নিজেদের সড়ক নিজেরাই নির্মাণ করছেন।

ইসমাইল হোসেন নামে আরেকজন বলেন, সড়ক নির্মাণে আমরা গ্রামবাসীদের একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছি। সবাই সাধ্যমতো টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। কেউ শ্রম দিচ্ছেন। সড়ক নির্মাণ একটা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি আস্থার সঙ্গে সড়ক নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।

কমিটির কোষাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক বলেন, গ্রামের বাসিন্দারা নিম্নে দুই হাজার থেকে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। তবে এই টাকা খুবই নগণ্য। সড়ক নির্মাণে প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকা লাগবে।

চরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী বলেন, সড়কটি নির্মাণে বহুজনের কাছে গিয়েছি, সবাই কথা দিয়েছেন কিন্তু কাজ করেননি। তাই নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা জানি, একটি সড়কের জন্য আমাদের কত কষ্ট করতে হয়। বন্যা এবং বৃষ্টির মৌসুমে ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। প্রসূতি মায়ের জরুরি চিকিৎসা করাতে পারি না। সড়কটি নির্মাণ হলে সব সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া, সড়কটি বন্যার সময় বাঁধের কাজ করবে। ফসলহানী রোধ হবে।

বল্লভেরখাষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই চরের বাসিন্দাদের জোটবদ্ধ হয়ে কাজ শুরুর পরামর্শ দিয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, চর কৃষ্ণপুরবাসী সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করছেন। এটি প্রশংসনীয় কাজ। আমরা তাদের কাজে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। পরিদর্শন করে সেখানে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘদিনেও হয়নি সড়ক, স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে নির্মাণ

আপডেট টাইম : ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

জনপ্রতিনিধিরা বার বার আশ্বাস দিলেও দীর্ঘদিনেও হয়নি সড়ক নির্মাণ। তাই স্বেচ্ছাশ্রমে ওই সড়ক নির্মাণ করছেন এলাকাবাসী। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভেরখাষ ইউনিয়নের চরকৃষ্ণপুর গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, অনেক বছর ধরে সড়ক নির্মাণের দাবি করা হচ্ছিল। দীর্ঘদিনেও দাবি পূরণ না হওয়ায় এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। এমন দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণে অনেক টাকার প্রয়োজন। তারপরও নিজেদের যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়েই নেমেছেন। সড়কটি নির্মাণ হলে বহুমুখী সুবিধা পাবেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। গ্রামে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। বছরের বেশিরভাগ সময় আমাদের বন্যা আর বৃষ্টিতে কষ্ট করতে হয়। সেসময় যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। শুকনো মৌসুমে ক্ষেতের আইল (সরু রাস্তা) দিয়ে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়। পায়ে হেটে পাড়ি দিতে হয় প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ। এ পথে চরবাসীর উৎপাদিত কৃষি পণ্য বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা-নেওয়া খুবই কষ্টের। চরের ছেলে-মেয়রা যোগাযোগের অভাবে লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়েছে। বহু বছর ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেও সড়কটি নির্মাণ করা যায়নি। তাই গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে নিজেদের সড়ক নিজেরাই নির্মাণ করছেন।

ইসমাইল হোসেন নামে আরেকজন বলেন, সড়ক নির্মাণে আমরা গ্রামবাসীদের একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছি। সবাই সাধ্যমতো টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। কেউ শ্রম দিচ্ছেন। সড়ক নির্মাণ একটা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি আস্থার সঙ্গে সড়ক নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।

কমিটির কোষাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক বলেন, গ্রামের বাসিন্দারা নিম্নে দুই হাজার থেকে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। তবে এই টাকা খুবই নগণ্য। সড়ক নির্মাণে প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকা লাগবে।

চরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী বলেন, সড়কটি নির্মাণে বহুজনের কাছে গিয়েছি, সবাই কথা দিয়েছেন কিন্তু কাজ করেননি। তাই নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা জানি, একটি সড়কের জন্য আমাদের কত কষ্ট করতে হয়। বন্যা এবং বৃষ্টির মৌসুমে ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। প্রসূতি মায়ের জরুরি চিকিৎসা করাতে পারি না। সড়কটি নির্মাণ হলে সব সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া, সড়কটি বন্যার সময় বাঁধের কাজ করবে। ফসলহানী রোধ হবে।

বল্লভেরখাষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই চরের বাসিন্দাদের জোটবদ্ধ হয়ে কাজ শুরুর পরামর্শ দিয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, চর কৃষ্ণপুরবাসী সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করছেন। এটি প্রশংসনীয় কাজ। আমরা তাদের কাজে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। পরিদর্শন করে সেখানে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।