পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের অনুমোদিত তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী মোট ব্যয় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। নদীশাসন কাজের সংশোধিত চুক্তিমূল্য ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা হলেও শেষ সময়ে এসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাড়তি অর্থ দাবি করছে। নদীশাসন কাজের ঠিকাদার কর্তৃক বাড়তি ১ হাজার কোটি টাকা দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। জানা যায়, ঠিকাদারের দাবি মেটাতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুই খাতের অর্থ যাচ্ছে নদীশাসনের কাজে। মূল সেতু প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৬০০ কোটি টাকা কাটছাঁট করে এ কাজে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসাবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভা। সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পরে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাত থেকে বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দেশে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ না করে অর্থ উত্তোলনের ঘটনাও ঘটে। এ কারণে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির খবর শুনেই মানুষের মনে সন্দেহ জাগে। পদ্মা সেতুর মতো একটি মেগা প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাড়তি ব্যয়বিষয়ক দাবির প্রসঙ্গটি নিয়ে জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে আরও আগে জানালে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠত কম।
কোনো প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত কাজের জন্য কত শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি করতে পারে, এ বিষয়ক নীতিমালা রয়েছে। পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যে বাড়তি অর্থ দাবি করেছে, সেটি কতটা যৌক্তিক, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যত সুনামই থাকুক, তারা যে বাড়তি অর্থ দাবি করেছে, এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দুর্নীতির কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রায় প্রতিটি স্তরে দুর্বল পরিকল্পনা, অদক্ষতা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে দেশে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে। দুর্নীতি, অদক্ষতা, দায়িত্বহীনতার কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্যও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।